চার পণ্যে শুল্কছাড়েও কমছে না দাম
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম
আসন্ন রোজার আগে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২২ ফেব্রয়ারি আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই চার পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেয়। এতে সিদ্ধ ও আতপ চালের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৫ শতাংশ। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন এবং ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর বিদেশ থেকে পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এছাড়া প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। পরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক তিন হাজার থেকে কমিয়ে করা হয়েছে দুই হাজার টাকা। খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ।
শুল্ক ছাড়ের পর নতুন সপ্তাহ শুরু হলেও বাজারে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। পণ্যগুলোর দাম আগের অবস্থাতেই রয়েছে। বরং কোন কোন ক্ষেতেও চাল ও চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। সাধারণত দেশে শুল্ক-কর আরোপ হলে কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বা নেতিবাচক খবর থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে সেটির দাম বেড়ে যায়। যেমন প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবরে এক রাতেই বাজারে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ সরকার শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে প্রভাব পড়েনি। গতকাল পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজারে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের দামে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং উল্টো শবেবরাতের অজুহাতে কোথাও কোথাও খুচরা বাজারে চিকন চাল ও চিনির দাম কিছু বেড়েছে।
সরকারের এই শুল্ক ছাড়ে বাজারে এসব পণ্যের দাম কমবে কি না তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন সরকার এমন এক সময় এসব পণ্যের শল্ক ছাড় দিয়েছে যখন রোজার আর মাত্র ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় বাকি। এই সময়ের মধ্যে বিশেষ করে অপরিশোধিত চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করে পরিশোধনের পর রোজার বাজারে ছাড়া কঠিন হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। এছাড়া যে পরিমাণ শুল্ক ও করছাড় দেওয়া হয়েছে তা ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মনে করছেন ব্যসায়ীরা।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন বলেন, শুল্কছাড়ের প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগার কথা। আর যে হারে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না। বাজারে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাড় দিলে, বড় ছাড় দিতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে সঠিক সময়ে। এমন সময়ে সিদ্ধান্ত এল, যখন রোজার পাইকারি বেচাকেনা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সিদ্ধান্তে গড়িমসি হলে বাজারে দাম না কমে, বরং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তাদের মনেও প্রশ্ন বাস্তবে এ শুল্ক ছাড়ে পণ্যগুলোর দাম আদো কমবে কি না। আর কমলেও তা কতটুকু কমবে। শুল্ক-কর ছাড় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আমদানিতে সবচেয়ে বেশি দাম কমছে চালের। চাল আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক কমবে সাড়ে ২৩ টাকা। এছাড়া সয়াবিন ও পাম তেলে কেজিতে সাত থেকে আট টাকা শুল্ক-কর কমবে। কার্টনে আনা সাধারণ মানের খেজুরের কেজিতে শুল্ক কমবে ৩৩ টাকা। সবচেয়ে কম, মানে কেজিতে ৭৫ পয়সা শুল্ক কমবে চিনিতে।
এমন পরিস্থিতিতে বাজার বিশ্লেষক ও ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে এ শুল্কছাড় পর্যাপ্ত নয়। গত এক বছরে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। অপর্যাপ্ত ছাড়ের কারণে আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনা সত্ত্বেও এখনো বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি।
বাজারের তথ্য বলছে, গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সেখানে শুল্ক কমেছে ৭৫ পয়সা। এদিকে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বেড়েছে মানভেদে ২০০ টাকা পর্যন্ত। ভোজ্যতেলের দামও প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
চালের ক্ষেত্রে এ শুল্কছাড় কোনো কাজে আসবে না এখন। কারণ দেশে এখন চাল আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। বরং ভরা মৌসুম চলছে। সরকারের কাছেও মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত। শেষ প্রায় এক বছর চাল আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা।
কাওরান বাজারের চাল আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, চাল এখন আমদানিই হচ্ছে না। তাহলে শুল্কছাড় দিয়ে লাভ কী? এমনকি শূন্য শুল্ক করে দিলেও এখন কেউ চাল আমদানি করবে না। কারণ বর্তমানে বিশ্ববাজারে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুল্ক ছাড়ের পরও প্রতি কেজি চাল ৬০ টাকার বেশি হবে। সবচেয়ে কম দামের চালের আমদানি খরচ এখন প্রতি টন ৫৫০ মার্কিন ডলারের বেশি। এ চাল এনে দেশের বাজারে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে।
রোজার আগে আগে সরকার খেজুরের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমালেও তা ‘যথেষ্ট’ মনে করছে না ফল আমদানিকারকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’। এই শুল্ক ছাড়কে ‘অতি সামান্য’ মনে করছেন খেজুর ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেজুরের শুল্ক যে পরিমাণ কমানো দরকার, সে পরিমাণ কমেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও সরকার কয়েকগুণ শুল্ক দিয়ে রাখায় দাম বাড়তি। রমজানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। অতীতে যে শুল্ক ধরা হতো, তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে যে শুল্ক, তা বাজারমূল্য থেকে অনেক বেশি। তাই চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হয়নি।
এদিকে গত একবছর আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৯৬ থেকে ১০০ টাকা, যা এখন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় চারমাস ধরেই দেশের চিনির বাজার অস্থির। অনেক দোকানে এখনো খোলা চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও আবার প্যাকেটজাত চিনিও নেই। কোম্পানিগুলোকে তাগাদা দিয়েও মিলছে না এ নিত্যপণ্য। দেশে চাহিদার তুলনায় চিনি উৎপাদন হয় কমবেশি এক শতাংশ। এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় কমবেশি ৩০ হাজার টন চিনি। আমদানি হয় ২২ থেকে ২৪ লাখ টন, যা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটে। পাম তেল ও সয়াবিন তেলের দাম লিটারে দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে এ শুল্কছাড়ের পরে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়
ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক
১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!
গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন
চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির
পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই
জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬
ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য
লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২
নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান
মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার
বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া
চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন
ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?
ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার