ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
ভারতীয় পণ্য বর্জনসহ ৫ কারণ

অস্বস্তিতে সরকার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম

নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনকে বলা হয় হানিমুন পিরিয়ড। বর্তমান সরকার এই হানিমুন পিরিয়ড়ে অস্বস্থিতে পড়ে গেছে। অথচ টানা চতুর্থ বার ক্ষমতায় আসা এই সরকারের নির্বিগ্নে কাজকর্ম করা এবং ফুরফুরে অবস্থায় থাকার কথা। সিনিন্ডকেট ভেঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ভারত বিরোধিতা তথা ভারতীয় পণ্য বর্জন প্রচারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠা, সীমান্তে মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির যুদ্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকা সফরে এসে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় নতুন ভিসানীতি ও শ্রম নীতি ইস্যুতে নিরবতা এবং নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করা, দুই বছরেও ডলার সংকটের সুরহা করতে না পারা এবং একটি অনলাইন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলামের পিলখানায় তথাকথিক বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা এবং ভারতের সম্পৃক্ততা নিয়ে দেয়া বক্তব্য সরকারবে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। অথচ দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ মন্ত্রীরা ভারতকে তোয়াজ করে যে ভাষায় কথাবার্তা বলছেন তার মধ্যে বিজিবির সাবেক মহাপরিচালকের এমন ‘বোমা ফাঁটানো ’বক্তব্য চরম অস্বস্থিতে ফেলে দিয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, সরকার সত্যিই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। প্রথমত, মিয়ানমার ইস্যুতে। বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাজনৈতিক। ভারত চায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার পক্ষ্যে বাংলাদেশ থাকুক আর চীন চায় আরাকান আর্মিকে সহায়তা করুন। দু’পক্ষই সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র আরাকান আর্মিকে সমর্থন দিচ্ছে আগ থেকেই আর চীনও মিয়ানমার সামরিক জান্তা ভারতকে গুরুত্ব দেয়া বন্ধ না করায় এখন আরাকান বাহিনীর পক্ষ্যে নিয়েছে। আবার পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম যে হাটেহাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। এই পিলখানা হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে বাংলাদেশে জনগণের ভোটের অধিকার জড়িত। যদি নিরপেক্ষ ভোটে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয় এবং অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসে এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে তাহলে ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসবে। আর নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ভারতের সম্পৃক্ততা প্রকাশ পাবে সরকারের রাঘব-বোয়ালরা ফেঁসে যাবেন। সে জন্যই ২০২৪ সালে ভারত আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় এনেছে। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো ভাবেই সফল হতে পারবে না। যারা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে তারা সরকারের আশপাশে থাকে এবং ওই পণ্য বিক্রির লুটের টাকার ভাগ পায়। আর প্রবাদে রয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন নেই’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে তাদের স্বার্থ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলছে কিন্তু নতুন ভিসা নীতি, শ্রমনীতি, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে কিছুই বলছে না। অথচ বিএনপি ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছে। যা সরকারবে অস্বস্থিতে ফেলে দিয়েছে।

ভারতীয় পণ্য বর্জন : বাংলাদেশে এখন ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ প্রচারণা চলছে। ভারতের মোদী সরকার নেপথ্যে থেকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করায় দেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা প্রবল হয়ে উঠেছে। মালদ্বীপের মতোই বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার হারানোর জন্য ভারতকে দায়ী করছে। যে কারণে দানা বাঁধছে ‘ভারতীয় পণ্য বয়কট’ ও ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা। এ আন্দোলন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের পরপর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত হটাও প্রচারণা শুরু হয়। বিভিন্ন প্রবাসীর হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’ এই প্রচারণায় তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ মানুষ যোগ দেন। হ্যাশট্যাগের ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ প্রচারণাটি ফেসবুক, এক্স(টুইটার), ইন্সটাগ্রামেও এখন শীর্ষে দেখা যাচ্ছে। যেখানে বেশিরভাগ পোস্টদাতাই বলছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে অযাচিতভাবে ভারত হস্তক্ষেপ করেছে। যে কারণে এই ধরনের প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন।

রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে কিছু তরুণ হ্যান্ডমাইক হাতে ভারতের পণ্য বর্জনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিদেশে অবস্থানরত কিছু ইউটিউবার ‘ভারতীয় পণ্য’ ক্রয় করা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বিরত রাখার প্রচারনা চালাচ্ছেন। ওই প্রচারণার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপারশপগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ভারতীয় পণ্য ক্রয় বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশেও ভারতের প্রসাধনী এবং কনফেকশনারী যে সব পণ্যের বাজার গড়ে উঠেছে সে সব পণ্যের বিক্রয় কমে গেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ হলো বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবের মাধ্যমে সাম্প্রতিক ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারত বিরোধী এক ধরনের প্রচারণা চলছে। যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ কিংবা সরকার-বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে ছোটখাটো কয়েকটি রাজনৈতিক দলও রয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে ‘ভারত হটাও’ প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ‘ভারত বিদ্বেষী’ এবং ভারতীয় পণ্য বর্জন এমন প্রচারণায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের কোন টানাপড়েন হবে না। অপরদিকে কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান মালদ্বীপের পর বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন চলছে। এর জবাবে এস জয়শঙ্কর বলেন, গণমাধ্যমে যা দেখবেন তার সবটুকু বিশ্বাস করবেন না। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। যা ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। আগে উত্তর-পূর্বের মানুষদের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে নেমে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে যেতে হতো। এখন তারা চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারে। এটি সমগ্র পূর্ব ভারতীয় অর্থনীতি বদলে দিবে।

নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট : ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। ব্রয়লার মুরগি, চিনি, পেঁয়াজ খেজুর ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরো বেড়ে গেছে। সরকার কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দিলেও পণ্যের দাম কমেনি। বরং বাড়ছেই। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১২ মার্চ শুরু হওয়ার কথা সিয়াম সাধনার মাস রমজান। এর আগেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে বাজারে। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত এক মাসে ছোলার দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে থেকে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় উঠেছে। চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগেরও প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতো। সরকারের দায়িত্বশীলরা খামখেয়ালি করে গত বুধবার চিনির দাম কেজিতে ২০ টাকা বৃদ্ধি করেছিল। পরের দিন আবার সেই দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিছুদিন আগেও সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন বেড়ে ২৫০ থেকে ৮৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা সাদা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখন সরু চাল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি, গরুর গোশত, মাছের দামও বেড়ে গেছে। অথচ গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজানের ৬টি পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দিলেও এখনও বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমেনি বরং বেড়েছে। নানান উদ্যোগ নিয়েও মজুদদার, সিন্ডিকেট করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজুদদারদের ধরে গণপিটুনি দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। আর পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পণ্য মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন।

মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানার দৈর্ঘ্য ৪০৯৬ কিলোমিটার। সীমান্ত হত্যা জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেনি ভারত। এর মধ্যে শুরু হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিরতা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষ প্রায়ই ঘটছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের শামরিক জান্তা বাহিনীর যুদ্ধ থেকে থেকে চলছে। মাঝে মাঝে গোলাগুলি ও মর্টারসেল বাংলাদেশ এসে পড়ছে। এতে সীমান্তের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এমনকি আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় দুইশ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন সীমান্তের গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া গ্রামবাসি নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেলেও ভীতি আতঙ্ক কাটেনি। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, মিয়ানমারের জান্তা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের আগমনের সময় থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশকে উস্কানি দিয়ে আসছে। তবে কখনোই যুদ্ধে না জড়ানো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাব ও প্রজ্ঞা; কারণ যুদ্ধে জড়ানো মানেই দেশটা শেষ হয়ে যাওয়া। তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারে এখন সামরিক সরকার রয়েছে। তারা এখন চাচ্ছে যে যুদ্ধ বাধাতে পারলে ও (মিয়ানমারের জান্তা সরকার) সেফ (বেঁচে যাবে) হবে।

মইনুলের বক্তব্যে তোলপাড় : বাংলা আউটলুক নামে একটি অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মইনুল ইসলাম বলেছেন, পিলখানার পরিস্থিতি বিশেষ করে হত্যকাণ্ডের পর অস্ত্রাগারের পরিবেশ দেখে পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল এটি পরিকল্পিতভাবেই ঘটানো হয়েছিল এবং সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার পেছনের লোকজন ২০-২১ দিন আগেই এখানে ঢুকেছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চারদিকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেড ছড়ান-ছিটান থাকলেও হত্যাযজ্ঞের তেমন কোনো আলামত ছিল না। কোনো রক্তের চিহ্ন নেই। খুব যত্নে ধুয়ে-মুছে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইন্ডিয়া সবসময়ই চেয়েছিল, কীভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা যায়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল মোক্ষম সময়। সেনাবাহিনীর সবগুলো মেধাবী কর্মকর্তাকে দু’দিনের মধ্যে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। এটা সবাই সেভাবেই দেখে। এই বিষয়টিও তখন আমলে নেয়া জরুরি ছিলো, বিভিন্ন পক্ষ থেকে কথাও এসেছিল। এর ওপর পিলখানার পরিস্থিতি বিশেষ করে অস্ত্রাগারের পরিবেশ দেখে পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছিল এটি পরিকল্পিত ভাবেই ঘটানো হয়েছিল এবং সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার পেছনের লোকজন ২০-২১ দিন আগেই এখানে ঢুকেছিল।

পিলখানায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহে সাতান্ন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। এতে ইন্ডিয়ার সম্পৃক্ততা কি আপনাদের অনুমান ছিলো? না কোনো আলামত পেয়েছি? এ প্রশ্নের জবাবে মো. মইনুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সিম্পটমগুলো (লক্ষণ) ফুটে উঠেছিল, বিভিন্ন সময় ইন্ডিয়ান পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল। তারা বিরোধিতা করেছিল কেন বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড আর্মি দ্বারা পরিচালিত হয়। ইন্ডিয়া সবসময়ই বিডিআরের কমান্ডিংয়ে আর্মি এবং ১৯৮১ সালের আগের বেশ কয়েকটি অপারেশন এবং পরবর্তিতেও বেশ কয়েকটি অপারেশন নিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ ছিল। তারা চেষ্টাও করেছিল। এখানেই পরিষ্কার, এখানে ইন্ডিয়ার ইন্ধন ছিল। আমরা যখন বিডিআর (বিজিবি) রিফর্ম করি তখনও ইন্ডিয়ানদের অনেক বাধার মুখে পড়েছি। আর্মি কেন বিডিআরকে কমান্ড করে এটাও ইন্ডিয়া সহ্য করতে পারত না। সঠিক তদন্ত করলে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসত। আরো অনেকের সম্পৃক্ততা ছিল। তা-ও বেরিয়ে আসত।

পিরখানা হত্যাকান্ডে ইন্ডিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মইনুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই ইন্ডিয়ার মদদ ছিলো। কারণ আমাদের তো আর কোনো শত্রু ছিলো না। মিয়ানমারের কিছুই করার ছিল না।

তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা, অনেক ধরনের আলামত বের করতে না দেয়া, একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা, জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে মিছিল করা, চীনা অস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্নের জবাবে আরো বলেছেন, ঘটনার সময় ভেতর থেকে বাঁচার আকুতি শোনা যাচ্ছিল। বাইরে র‌্যাব ঘিরে রেখেছিল। আর্মি ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন আর্মিকে বলা হয়েছিল, ভেতরে ঢুকলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে। তাদের ঢুকতে দেয়া হলো না কেন? এখানে অবশ্যই কোনো একটা অদৃশ্য শক্তি ইশারা করেছে। তাদের নির্দেশেই আর্মিকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এটা পরিষ্কার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ঢাকায় : যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির এশিয়াবিষয়ক সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার, পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার ঢাকা সফর করলেও দ্বাদশ নির্বাচন প্রশ্নে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবজারভেশন থেকে সরে আসেনি। মার্কিন প্রতিনিধি দল সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি খাত নিয়ে আলোচনা করছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় করেছেন। সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠকে রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে কোনো কথা না তুললেও বিএনপি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। মার্কিন প্রতিনিধি দলের নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল ঢাকায় দেশটির দূতাবাস তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছে, ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নাগরিক সমাজ। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সাহসী ও প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত থাকব। সরকারকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানাব।’


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তৌ‌হিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়

তৌ‌হিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক: আলোচনায় যে সব বিষয়

ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক

ভারতে পালানোর সময় সীমান্তে আওয়ামী লীগ নেতা আটক

১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!

১,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে ফিরল হারানো বিড়াল!

গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন

গাজীপুরে নারী নিহত : বাসে আগুন

চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির

চোটে মৌসুম শেষ রদ্রির

পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই

পরিবেশবান্ধব শহরে পরিণত হচ্ছে শাংহাই

জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬

জাপানে ভারী বৃষ্টিপাতে নিহত ৬

ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য

ভারতীয় পেসাররা এখন আকরাম-ইউনিসের সমতুল্য

লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২

লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ৪৯২

নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান

নতুন স্পাইমাস্টার নিয়োগ দিলো পাকিস্তান

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার

মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সিয়াম গ্রেপ্তার

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার