ব্রাজিলের বিখ্যাত ইগুয়াসু ঝরনা ও ইগুয়াসু নদীর অন্যতম উৎস আতুবা নদী। সেখানেই দিয়েগো সালদানিয়ার জন্ম। সেই নদীতেই তিনি সাঁতার শিখেছিলেন। আজ সেই নদী আবর্জনায় ভরে গেছে। সেই নতুন বাস্তবের কারণে দুঃখের বশে দিয়েগোর মনে কিছু একটা করার তাগিদ জন্মেছিল। তিনি নিজের শক্তিতেই নদী সাফাইয়ের উদ্যোগ নিলেন। দিয়েগো বলেন, তখন আমার মনে এক ইকোলজিকাল প্রাচীর তৈরির আইডিয়া এলো, যা ভেসে আসা সব আবর্জনা টেনে নেবে। বৃষ্টির দিনগুলিতে আমার পেছনের অংশটা নানা ধরনের মোড়কে ভরে যায়। এই সব ছবিতে যেমনটা দেখতে পাচ্ছেন, চারিদিকে স্টাইরোফোমের আধার, প্লাস্টিকের বোতল, ডিটারজেন্ট ছড়িয়ে রয়েছে। আমার মতে, পণ্যের মোড়ক কমানোর একটা পথ খুঁজে বার করা যায়, যাতে সেগুলি কোনো না কোনো ভাবে নদীতে এসে না পড়ে। এই সব পণ্য ফেলার আরো ভালো প্রণালীর সন্ধান করতে হবে। প্রতি বছর ব্রাজিলে প্রায় আট কোটি ২০ লাখ টন আবর্জনা সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির কোলে জমা না হলে সেগুলি বিশাল স্তূপে জমা হয়। মাত্র দুই শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। ব্রাজিলের কিছু সংস্থা এখনই এই সমস্যার সমাধানের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। সেই কোম্পানিগুলি পণ্যের ‘সার্কুলার ইউজ’ বা চক্রাকার ব্যবহারে মদত দিচ্ছে। অর্থাৎ বর্জ্য হিসেবে ফেলে না দিয়ে পণ্যগুলি বার বার ব্যবহার করা যাচ্ছে বা নতুন কিছুতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। মার্সেলো এবার্ট ওয়াইভিওয়াই কোম্পানির কর্ণধার। সেই কোম্পানি সার্কুলার ক্লিনিং পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্ভাবনী শক্তি দেখাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শুধু ব্রাজিলে তৈরি সব ক্লিনিং লিকুইড ভরতে হলে প্রায় ৬০০ কোটি বোতলের প্রয়োজন। সেই সব প্লাস্টিকের বোতল পাশাপাশি রাখলে তার দৈর্ঘ্য তিন বার চাঁদে যাতায়াতের দূরত্বের সমান হবে। এমন শিল্পখাত চালাতে কত প্লাস্টিকের প্রয়োজন হয়, এই হিসেব থেকে সে বিষয়ে একটা ধারণা পেতে পারেন। ওয়াইভিওয়াই কোম্পানি এমন বোতল বিক্রি করে, যার মধ্যে বার বার প্রকৃতিভিত্তিক পণ্য ভরা যায়। বাসায় পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিলেই সেটি ব্যবহার করা যায়। ব্রাজিলে এই কোম্পানির প্রায় ১০,০০০ গ্রাহক রয়েছেন। মার্সেলো এবার্ট বলেন, এই সব বোতলের প্রায় ৯০ শতাংশই পানি। অথচ মানুষের বাসায়ই তো যথেষ্ট পানি রয়েছে, তাই না? আমার মতে, ভবিষ্যতের স্বার্থে প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার নিয়ে যতটা সম্ভব প্রশ্ন তুলতে হবে। যে সব প্যাকেজিং ও উপকরণ মাত্র একবার ব্যবহার করা হয়, সেগুলি শুধু এমন সব পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, যেখানে এই মুহূর্তে অন্য কোনো সমাধানসূত্র নেই। চক্রাকার যুক্তির ভিত্তিতে পণ্যের কথা ভাবতে হবে। সার্কুলার প্রোডাক্ট মুভমেন্ট ব্রাজিলে এখনো নতুন এক কনসেপ্ট বা ধারণা। কিন্তু অনেকেই সেই বাজারে প্রবেশ করতে চাইছে। যেমন কারোল পিচিন, যিনি টেকসই উপকরণ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এটা হলো নারকেলের তন্তু, যা মোড়ক এবং দেওয়ালে শব্দ নিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এগুলি পারা-র সোনালী ঘাসের তন্তু। নির্মাণের ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি সিমেন্ট পাটি। ছত্রাক ও ব্যাকটিরিয়া। এ সব নতুন জিনিস। কারোল ব্রাজিলে ইতোমধ্যে ৬০০-রও বেশি এমন উপাদান চিহ্নিত করেছেন, যেগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও অরগ্যানিক পদার্থ থেকে তৈরি করা যায়। কারোল পিচিন বলেন, আমরা আজ পর্যন্ত যত টুল ব্যবহার করে এসেছি, সে সবই গাছপালা, প্রাণী, অণুজীব ও বর্জ্য থেকে তৈরি করা সম্ভব। যতকাল না চক্রাকার অর্থনীতি এবং টেকসই উৎপাদনের মতো সমাধানসূত্র সমাজের নতুন মানদণ্ড হয়ে উঠবে, ততকাল আতুবা নদী ও প্রকৃতিকে আবর্জনার চাপে ভুগতে হবে। দিয়েগো সালদানিয়া বলেন, কোনো একদিন এ সব বন্ধ হবে বলে আমার মনে সত্যি আশা রয়েছে। মানুষ তার ভোগের আচরণ সম্পর্কে ভেবে দেখবে, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হবে। প্রতিটি মানুষ নিজস্ব অবদান রাখলে এবং সামান্য কষ্ট করলে এখানে আবর্জনা অবশ্যই কমে যাবে। ডয়চে ভেলে।