ভিন্নমত ও বিরোধী রাজনীতিকদের দমনে সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার হচ্ছে -ওয়েবিনারে বক্তারা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম
বিদেশীদের চাপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বদল করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে বহাল করা হয়েছে। এই আইন নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষার জন্য নয়, বরং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের জন্য করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে কয়েকজন রাজনীতিক এসব কথা বলেন। ‘ডিজিটাল থেকে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট: কী ভাবছেন রাজনীতিকেরা?’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
দেশি বিদেশী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রকারান্তরে ডিজিটাল আইন হিসেবে বহাল রয়েছে বলে মনে করেন ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া এই রাজনীতিকেরা। তবে একজন রাজনীতিক ভিন্নমত পোষণ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আসলে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে বহাল রয়েছে বলে মনে করেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বর্তমান সরকারের জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই আইনের ভিত্তি হলো ভয়, সাংবাদিক ও বোদ্ধা মহল যা বলতে চায়, সে কথা যাতে যথাযথভাবে বলতে না পারে। সরকার যে কাজ করে ও ভাবে, তার বাইরে কথা বলতে গেলে তার বিরুদ্ধে কতগুলো খড়্গ নেমে আসবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগই অপপ্রয়োগ। এটা কোনো আইন নয়। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, একটা জবরদস্তিমূলক শাসন কায়েমের জন্য এই আইন করা হয়েছে। আইনটি জনগণকে শাস্তি দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমানে বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি মূলত করা হয়েছে প্রতিপক্ষের মনে ভয় সৃষ্টির জন্য। নিজেদের যে শক্তিমত্তা, তা প্রদর্শনের জন্য। এখানে সরকারের কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। এখানে কেবল শাসকগোষ্ঠী ও তাদের কিছু লোকজনের অপকর্ম ঢেকে রাখা, তাদের দুর্নীতি-লুটপাট- বিদেশে টাকা পাচার নিয়ে কথা না বলা, তাদের যে দুর্বলতা-অক্ষমতা আছে, সেগুলো যেন জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে না যায়, সে জন্য আইনটি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু দাবি করেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটি জনস্বার্থে করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে নাগরিকদের আবেদন থাকে, তাদের যেন শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সরকার শুধু সেই চেষ্টা করার জন্য আইনটি প্রণয়ন করেছে, কোনো সাংবাদিক বা রাজনীতিককে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়। যারা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশের অপরাধপ্রবণতা দূর করার জন্যই এই আইন করা হয়েছে।
সব আইন জনকল্যাণমূলক নয় বলে মন্তব্য করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে শত শত কোটি টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সাইবার অপরাধ। অথচ এ ঘটনায় একজনও গ্রেপ্তার হয়নি।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারা জামিন অযোগ্য উল্লেখ করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ অনেকখানি রুদ্ধ হয়েছে। সাংবাদিকেরা ভয় পাচ্ছেন। কিছু লিখতে গেলে বার বার চিন্তা করেন সরকারের রোষানলে পড়বো নাতো? তা ছাড়া এই আইনের বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ভিন্নমত ও বিরোধীদের কেন্দ্র করে। নাগরিকদের অধিকার, সাইবার পরিসর, অনলাইন ও ডেটাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই আইন হয়নি। রাজনৈতিক ভিন্নমত, সরকারবিরোধীদের দমন করার জন্য আইনটি করা হয়েছে।
ওয়েবিনারের শুরুতে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সিজিএস ২০২০ সাল থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনের মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইনের অধীনে সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত হয়েছেন রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকেরা। একইভাবে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ১৮টি মামলা হয়েছে, যেখানে ১০ জন সাংবাদিক ও ৮ জন রাজনীতিবিদ অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ডিজিটাল এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন উভয়কেই ব্যবহার করা হয়েছে, আগামীতেও হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন
ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?
ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার