রিকশার দখলে ঢাকা
০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাজধানী ঢাকা এখন রিকশার শহর। প্রায় প্রত্যেক সড়কই এখন রিকশার দখলে চলে গেছে। এই শহরের রাস্তায় কতগুলো রিকশা চলাচল করছে তার সঠিক হিসেব নেই। সিটি করপোরেশনের নিবন্ধিত রিকশার বাইরেও চলাচল করছে আরো অসংখ্য অনিবন্ধিত রিকশা। এখন আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব এই যানটি নগরবাসীর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ রিকশায় সয়লাব ঢাকা মহানগর। বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রিকশা ঢাকায় চলাচল করছে।
এছাড়া অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশার দাপটে সড়কে অন্য যানবাহন ও মানুষের চলাচল করা দায়। রিকশার দাপটে যানজট বেড়েছে, দ্রুতগতির যানবাহনের গতি কমেছে, সড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গুটি কয়েক বড় সড়ক ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশের আর সব সড়কে এখন রাজত্ব চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশার। তার কোনোটি সনাতন রিকশায় মোটর সংযোজন করা, কোনোটি স্টিল বড়ি রিকশা, আর অন্যটি অটোরিকশার আদলে ইজি বাইক। দিনে দিনে বেড়ে দেশের পথঘাট সয়লাব এসব অনুমোদনহীন রিকশায়। রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে এসব রিকশা চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় দেদার চলছে বিভিন্ন সড়কে। দ্রুতগতির এসব হালকা বাহনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎ অপচয় তো আছেই। রাজধানীর কেন্দ্রে দেখা না গেলেও আশপাশের অনেক মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। পাড়া-মহল্লার ছোট-বড় সব গলিতে ছুটছে হরণ বাজাতে বাজাতে। অনেক জায়গায় অনুমোদিত পায়েচালিত রিকশা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এসব অটোরিকশার দাপটে। রাজধানীতে এসব অটোরিকশার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কুড়িল, ভাটারা, জুরাইন, রামপুরা, বনশ্রী, মুগদা, বাসাবো, মিরপুর, গাবতলি, মোহাম্মদপুর এলাকায় রয়েছে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা। এছাড়া অন্য এলাকাগুলোতেও রয়েছে এসব রিকশার দাপট। তবে এসব এলাকায় কত সংখ্যক রিকশা রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পায়েচালিত রিকশার গ্যারেজেই দেখা মিলেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। সাধারণ রিকশা মালিকরা বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রতি। ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে আয় প্রায় তিন গুণ।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বা বিলসের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ঢাকা শহরে ১১ লাখ রিকশা চলাচল করছে। এই সংখ্যা গত ৫ বছরে অনেক বেড়েছে। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেতরে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ রিকশা চলাচল করছে। মোট অবৈধ রিকশার সংখ্যা একেবারেই ধারণার ওপর নির্ভর করে। রিকশার ওপর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ কখনোই ছিল না। দুই সিটি করপোরেশেনের এলাকায় প্রায় ১৩ লাখ রিকশা চলাচল করছে। ২ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলছে। সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা অবৈধ রিকশা রাস্তায় নামানোর জন্য প্রধানত দায়ী।
পায়ে চালিত অবৈধ রিকশার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ২ লাখ ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করছে। প্রতিদিনই এসব রিকশার সংখ্যা বেড়ে চলছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা জড়িত। রাজনৈতিক দলের ইউনিট পর্যায় থেকে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা এর পেছনে রয়েছেন। তারাই ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় নামাচ্ছেন। প্রায় দুই লাখ ব্যাটারি চালিত রিকশার প্রতিটির জন্য রিকশা মালিককে প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
রিকশা মালিকরা বলছেন, একটি সাধারণ রিকশা তৈরিতে খরচ হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এরপর লাইসেন্স নিতে খরচ হয় প্রায় একই রকম। কিন্তু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা যায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। তাতে নেই লাইসেন্স নেয়ার ঝামেলা। সহজে চালানো যায়। তাই অনেক সাধারণ মানুষও এসব রিকশা কিনে কারও হাতে ধরিয়ে দিয়ে পথে নামাচ্ছেন।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, জনবহুল এই নগরীতে পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকার কারণেই অবৈধ রিকশা বেড়েছে। রিকশার কারণে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে, যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এখন বহু মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাই সড়ক থেকে রিকশা তুলে দেয়া সম্ভব নয়। রিকশা চলাচলের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে। প্রধান সড়ক থেকে রিকশার পরিবর্তে বেশিসংখ্যক যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন নামানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারসমূহের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন : সাইফুল হক
দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকবে : আইজিপি
নব-নির্বাচিত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা-কে বাংলাদেশ ন্যাপ'র অভিনন্দন
ছাত্র - জনতার গনবিপ্লবে সংগঠিত সকল গনহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনার বিচার চাই [ সৈয়দ ফজলুল করিম ]
লেবাননে ইসরাইলের হামলা যুদ্ধবিস্তারের প্রচেষ্টা : এরদোগান
সীতাকুণ্ডে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত জামায়াত নেতার জানাজা সম্পন্ন
সিংগাইরে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে নিখোঁজের ৩ দিনপর এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
রপ্তানিতে বাংলাদেশকে বড় সুখবর দিলো চীন
পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে আলেম ও ইসলামী স্কলার অন্তর্ভুক্ত করুন
প্রবাসী কর্মী ও রাষ্ট্রকে জিম্মি করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে রুহুল আমিন স্বপন
বগুড়ায় এক পশলা বৃষ্টি, জনমনে স্বস্তি...
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চক্রান্ত সম্মিলিত ভাবে রুখে দিতে হবে
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চীনের ব্যাপক সাফল্য
যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ‘ছাত্র হত্যাকারী চেয়ারম্যান’কে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা
মির্জাপুরে বন্ধুদের সঙ্গে নদীতে গোসলে নেমে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি বর্ষণকারী চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ গ্রেপ্তার -ছড়িয়ে নিতে সন্ত্রাসীদের থানায় হামলা
ভ্রমণে সঙ্গী সাপ! হুলুস্থুল কাণ্ড চলন্ত ট্রেনে
এপিসি থেকে ফেলা ইয়ামিনকে হত্যায় হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. জাকিরের মতবিনিময়
ফ্যাসিবাদের দোসর গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি উপদেষ্টা নাহিদের কড়া বার্তা