রাজধানীতে পাঁচ হাজার রেস্টুরেন্টের ৯৬ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে
০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম
বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে রাজধানীতে কতগুলো রেস্টুরেন্ট রয়েছে এবং অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনে কত সংখ্যক রেস্টুরেন্ট চলছে, কীভাবে চলছে? গত দুদিন সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলেনি। ঢাকায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, বিপণিবিতান, মিডিয়া হাউজ, হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ অগ্নিঝুঁঁকিতে থাকা ভবনের পরিসংখ্যান আছে। তবে আলাদাভাবে অগ্নিঝুঁঁকিতে থাকা রেস্টুরেন্টের কোনো তালিকা করেননি ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিস্টরা।
অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দি থেকে যায় বছরের পর বছর। কমিটির সুপারিশগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলোর মুখ দেখে না। কমিশন মনে করে অগ্নিনির্বাপণে শুধু দমকল বিভাগ নয়, পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন দপ্তরগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিভাগ সমন্বিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ মোকাবিলায় একটি রূপরেখা তৈরি করে, সে অনুসারে অগ্নিনির্বাপণ কর্মকাণ্ড সমন্বয় করতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে সেটি বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার রেস্টুরেন্ট ও খাবারের হোটেল রয়েছে। এর ৯৬ শতাংশই নিয়ম না মেনে কিংবা ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনে বিপজ্জনক পরিবেশে চলছে। এছাড়া আবাসিকের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন করা হয়েছে বহু জায়গায়। যেখানে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে রেস্তোরাঁসহ নানা বাণিজ্যিক কারবার। অগ্নিদুর্ঘটনা এবং এতে হতাহতের ঘটনা এড়াতে অবৈধ ও নিয়ম না মেনে চালানো এসব রেস্টুরেন্ট বন্ধের দাবি জানান তারা।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিনিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন শর্তে ফায়ার সার্ভিস বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত বহুতল ভবন বা বাণিজ্যিক ভবনের ছাড়পত্র প্রদান করে থাকে। সেবা গ্রহণকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং সেফটি প্ল্যান যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নির্ধারিত নিরাপত্তা শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এসব ছাড়পত্র প্রদান করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মূল কাজ অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা এবং যেকোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্য পরিচালনা। এছাড়া দুর্ঘটনা ও দুর্যোগে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, গুরুতর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ এবং রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক অগ্নিদুর্ঘটনাসহ যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা ও জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা; বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, শিল্প কারখানা ও বস্তি এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ প্রদান ও মহড়া পরিচালনা করা; বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তামূলক ছাড়পত্র প্রদান ও ছাড়পত্রের শর্তগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা আমাদের কাজ। অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমরা সবসময় চুপচাপ থেকে নিজেদের কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ঢাকায় অসংখ্য আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া ও ফায়ার সেফটি রীতি অনুসরণ না করে গড়ে তোলা হোটেল রেস্তোরাঁ-রেস্টুরেন্টের ব্যাপারে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। তিনি আরও বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশের অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর হোটেল রেস্তোরাঁর তালিকা করছি। শিগগিরই সে তালিকা ধরে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বেইলি রোডে আগুনের ঘটনা আরও ২ দগ্ধ ছাড়পত্র পেলেন: বেইলি রোডে ভবনে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ ফারদিন ও অনন্ত কাজী নামে দুইজনকে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাকিব, মেহেদি ও সুমাইয়া নামে আরও তিনজন ভর্তি আছেন। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন প্রথমে ১৪ জন ইনস্টিটিউটে আসেন। এরমধ্যে ১১ জনকে ভর্তি দেয়া হয়। শনিবার ৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবং রোববার আরও দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আপাতত তিনজন ভর্তি আছে। তবে সবার অবস্থা উন্নতির দিকে।
ডা. তরিকুল বলেন, ভর্তি তিনজনের ভেতর দুইজনের আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। একজনের আঘাতজনিত সমস্যা ছিল। তাদের বিশেষভাবে কেয়ার নেয়া হচ্ছে। ধোয়ার কারণে তাদের শ্বাসনালি ক্ষতি হওয়ায় এখনও শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা রয়েছে। প্রয়োজন মতো অক্সিজেন দিয়ে রাখা হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুড়ের শত শত দোকান পুরোনো বসতবাড়িতে: রাজধানীর খিলগাঁও এখন অনেকটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুড দোকানের ‘বিশেষায়িত জোন’। খিলগাঁও তালতলা মার্কেট থেকে মালিবাগ আবুল হোটেলের মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে আবাসিক ভবনে করা হয়েছে শত শত রেস্তোরাঁ ও নানারকম খাবারের দোকান। বহু পুরোনা আবাসিক বাড়িকে নানা সাজে সাজিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। খিলগাঁও তালতলা সি ব্লকের ৫৬৮ নম্বর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ তলা ভবনে অলিভার, ক্যাফে অ্যাপেলিয়ানো, পিৎজাবার, সানসেট লাউন্স রেস্তোরাঁ রয়েছে। ভবনটির খোলা ছাদেও চেয়ার টেবিল বসিয়ে খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত মানুষের ভিড় থাকে। ভবনে ওঠানামার জন্য চারজন ধারণ ক্ষমতার একটি মাত্র ছোট লিফট। দেখলেই বোঝা যায় পুরাতন কাঠামোতে অনেকটা জোর করে লিফট বসানো হয়েছে। লিফট আপনাকে নিয়ে যাবে সরাসরি রেস্তোরাঁর ভেতরে। অর্থাৎ লিফটের চারপাশে কোনো জায়গা নেই। ভবনের পেছনে ছোট একটি সিঁড়ি থাকলেও তা রেস্তোরাঁর রান্নাঘর সংলগ্ন হওয়ায় ব্যবহার হয় না কিংবা অনেকেই তা জানেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্তোরাঁর কয়েকজন কর্মচারী বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে হলে মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা তো চাকরি করি। যতটুকু জানি আবাসিক ভবন সংস্কার করে রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। আপনি দেখলেই তো বুঝতে পারেন। বেইলি রোডের ঘটনায় আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করে। দুর্ঘটনা তো বলে-কয়ে আসে না। ঝুঁকির মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হয়। ওই ভবনের পাশেই নাইট এঙ্গেল স্কাইভিউ হাইটসের ৬ তলা আরও একটি ভবন রয়েছে। ওই ভবনের চিত্রও প্রায় একইরকম। সেখানেও পাস্তা ক্লাব, শরমা কিং, ক্যাফে আইপ্যানিমা, থ্রি ডোরস ও ক্যাফে সুইট অ্যান্ড সেভরি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এ ভবনে ছোট লিফট ও সিঁড়ি পাশাপাশি পাওয়া গেলেও ভোজন রসিকদের অনেককে সরু গেট পেরিয়ে রেস্তোরাঁগুলোতে প্রবেশ করতে হয়। এই ভবনেও ফায়ার সেফটির জন্য আধুনিক ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। এক সময়ের আবাসিক ভবন এখন পুরো মাত্রায় বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। সামনের দিকে রেস্তোরাঁ হলেও পেছনের অংশ এখনো আবাসিক হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ভবনের ঝুঁকির বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেস্তোরাঁগুলোতে কাজ করা কর্মচারীরা বলেন, ভাই এটা ভবন মালিক ও আমাদের রেস্তোরাঁ মালিকদের বিষয়। তাছাড়া এটা দেখার জন্য রাজউক ও সিটি করপোরেশন রয়েছে। তাদের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। মাঝে মাঝে দুই একজন আসে, ম্যানেজ হয়ে চলে যায়। এ বিষয়ে আপনি মালিকদের সমিতি আছে, সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।
খিলগাঁও তালতলা বিসনেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সমিতির আওতায় ১০০টির বেশি রেস্তোরাঁ ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমাদের সদস্যদের নিয়ে আমরা নিয়মিত সভা করে থাকি। ভবন ব্যবস্থাপনার বিষয়টি জমি বা ভবনের মালিকের। তবে রেস্তোরাঁ মালিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে। শিগগিরই আমরা সভা ডেকেছি। সেখানে ভবনের ফায়ার সেফটি ও রেস্তোরাঁর পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব করব। কারণ আমরা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সাবেক শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ভানু লাল রায় কারাগারে
ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে, উপহার নয় : রিজওয়ানা হাসান
কোনো উন্নয়ন কাজ বন্ধ করেনি বর্তমান সরকার: উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন
মাগুরায় মাজলিসুল মুফাসসীরিনের জেলা সম্মেলনে ১১সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন
সাকিবের চোট নিয়ে যা বললেন হান্নান
গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা-কামালসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে ভোলার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা। ভোগান্তিতে গ্রাহকরা।
ছুটির দিনসহ সপ্তাহে ৭ দিনই শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’
রাজবাড়ীতে সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাই কারাগারে
শিবগঞ্জে যুব-স্বেচ্ছাসেবকদলের ২ নেতা জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১
চৌগাছায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা
মজিব সভাপতি, সাইফুল সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন
রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার
তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ
কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন
কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ
চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭
শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে
নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি