ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
১৪১ চিকিৎসক পদের ১৩৭টি পদই খালি ৫ হাজার জনবল পাইপলাইনে রয়েছে রিক্রুট করার জন্য : এ এস এম আনিসুল হক :: ১৪১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র কয়েকজনের ঘাটতি : মো. মাইন উদ্দিন ভূইয়া :: কারাবন্দীদের মানবাধিকারের দিকে কারও লক্ষ্য নেই : অধ্যাপক মিজানুর রহমান

কারাগারে স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০২ এএম

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় এবং ৫৫টি জেলা কারাগারসহ মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮। এসব কারাগারে মোট বন্দীর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন। তবে এখন বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি, প্রায় ৮২ হাজারেরও বেশি। নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাদের গণহারে গ্রেফতার করায় কিছুদিন আগেও বন্দীর সংখ্যা আরো বেশি ছিল। কারাগারের জন্য অনুমোদিত চিকিৎসক পদ রয়েছে ১৪১টি। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ১৩৭টি পদ খালি পড়ে আছে। কারাগারগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। থাকা, খাওয়া, গোসল ইত্যাদি কষ্টদায়ক হওয়ায় বন্দী রোগীদের প্রায় অর্ধেক যক্ষ্মা, টাইফয়েড, কিডনি, লিভার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। তাঁদের ধারাবাহিক চিকিৎসার প্রয়োজন। অথচ বন্দীর চিকিৎসায় অনুমোদিত চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪ জন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ১০ হাজার বন্দীর বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসক আছেন একজন।

জানতে চাইলে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূইয়া গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, কারাগারের পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক ভালো। যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে বর্তমান কারা মহাপরিদর্শক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সকল ধরনের অনিয়ম শক্ত হাতে দমন করা হচ্ছে। ১৪১ জন চিকিৎসক চাহিদার বিপরীতে মাত্র কয়েকজনের ঘাটতি রয়েছে। তবে ডিপ্লোমা নার্স ও ফার্মাসি বিশেষজ্ঞরা সব সময়ই থাকেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যে দেশে গরিব মানুষের অধিকার নেই, সেখানে রাষ্ট্র কারাবন্দীদের পেছনে টাকা খরচ করবে, তা চিন্তাও করা যায় না। কারাবন্দীদের মানবাধিকারের দিকে কারও লক্ষ্য নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। খাবার, চিকিৎসা, আবাসন সবক্ষেত্রেই পদে পদে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বোবা কান্নায় কাটছে কারাগারের বন্দীদের জীবন। যদিও কারা অধিদপ্তরের মূল শ্লোগান বা ভিশন হচ্ছে, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এবং ভিশন হচ্ছে বন্দিদের সাথে মানবিক আচরণ, বন্দিদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীর সাথে সাক্ষাত নিশ্চিতসহ সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা। কিন্তু বাস্তবতার সাথে এ লক্ষ্যের মিল নেই। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৪০ জন বন্দী। গত বছরে এ সংখ্যা ১২০। ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, কারাগারে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা না পেয়েই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্দীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবাসিক সঙ্কট এর অন্যতম কারণ। মুক্তি বা জামিন লাভের পরেও দীর্ঘদিন সময় লাগে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। দেশের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে জেলা কারাগারগুলোর প্রায় একই চিত্র।

কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, দেশের কারাগারগুলোতে চাহিদার বিপরীতে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে, এটি সত্যি। তবে নিয়মিত নির্ধারিত সময়ে ডেপুটেশনে থাকা চিকিৎসক অসুস্থ কারাবন্দীদের সেবা দেন। এছাড়া ডিপ্লোমাধারী নার্স এবং ফার্মাসিস্ট থাকেন সব সময়। খুবই জরুরি হলে রাতের যে কোনো সময় অসুস্থ বন্দীদের বাইরের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে এটি মানতে নারাজ ভূক্তভোগীরা।

রাজধানীর ডেমরা থানার একটি চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানিগঞ্জে) হাজতি হিসেবে বন্দী ছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার বাসিন্দা শামসুল আরেফিন (৫৫)। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি কারাগারে তার সাথে দেখা করেন নিজের ছোট ভাই মো. আজাদুল ইসলাম। ওই সময় শামুসল তার ভাইকে জানিয়েছিলেন, কারাগারের ফ্লোরে পড়ে থাকায় সে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। কারা হাসপাতালে নেবুলাইজার দিলেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। জরুরিভিত্তিতে তার শীতের পোশাক লাগবে। পরদিন ১৩ জানুয়ারি সকাল ৯টায় ভাইয়ের জন্য কাপড়-চোপড় নিয়ে আবার কারাগারে যান আজাদ। শ্লিপ পাঠিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর কারা কর্তৃপক্ষ জানায় শামসুলকে অসুস্থজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আজাদ দ্রুত ছুটে যান ঢাকা মেডিকেলে। জরুরি বিভাগ থেকে একজন বলেন, মর্গে খবর নিতে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান ভাইয়ের নিথর লাশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাগজে উল্লেখ রয়েছে, শামসুলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে হাসপাতালে। ভাই হারানো আজাদ অভিযোগ করে ইনকিলাবকে বলেন, একটু ঠাণ্ডার কারণে যদি একজন সুস্থ মানুষ মারা যায়, তাহলে কারা হাসপাতালের চিকিৎসার ধরণ সম্পর্কে সহজেই ধারণা করা যায়। আজাদের দাবি, উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা না পেয়েই তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।

জেলে তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে সম্প্রতি মুুক্তি পাওয়া বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি ১৯৭৮ সাল থেকে কারাগারে আসা-যাওয়ার কারণে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বহুবার জেলে গেছি। বহুবার জেল থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু এখন জেলখানায় একজন মানুষ ঢোকা মানে হলো তার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে ঢোকা। জেলখানায় কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কোন ব্যবস্থাই নেই। অর্থাৎ অসুখ হোক, সে মরে যাক। তিনি আরো বলেন, কারাগারে আমি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লে ব্যক্তিগতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি, অনুরোধ করেও বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি।

গত ৬ জানুয়ারি গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানিগঞ্জ) ছিলেন ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। গত ৫ মার্চ জেল থেকে ছাড়া পাবার ঘণ্টাখানেক পরেই তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, গ্রেফতারের পর পুলিশের নির্যাতনের কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে কারণে তাকে কারা হাসপাতালে থাকতে হয়েছে ১৭ দিন। তিনি নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, তার ধারণা কারা হাসপাতালে সব রোগের জন্য প্রায় একই ওষুধ। বিকেল সাড়ে ৩টার পর কোনো চিকিৎসক থাকেন না হাসপাতালে। রাইটার এবং নিজস্ব প্রশিক্ষণ দেয়া লোকের কাছে কিছু ওষুধ থাকে মাত্র। কিছুটা সুস্থ হলেই হাসপাতাল ছাড়তে হয়। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, রাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও পরদিন সঠিক সময়ে চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত ওই রোগীকে অসহ্য যন্ত্রণা পোহাতে হয়। বাইরের হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হলেও নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের (সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ছাড়পত্র) অনুমতি ছাড়া বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, হঠাৎ অসুস্থ কিংবা গুরুতর এ ধরনের বন্দীর ক্ষেত্রে জটিল এ আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত। কারণ সবার আগে মানবিকতা।

সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পাওয়া একাধিক ব্যক্তি ইনকিলাবকে বলেন, কারাগার মানেই বন্দী জীবন। সব কিছুতেই বন্দী। তার পরেও বলব, কারাগারে সব থেকে বেশি কষ্ট ভোগ করেন যারা ওয়ার্ডে থাকেন। কারণ দেশের কারাগারগুলোতে অধিকাংশ সময় থাকে দ্বিগুন বন্দী। যারা সেলে থাকেন তাদেরও কষ্ট। কিন্তু ওয়ার্ডে কোনো কোনো সময় ২০ জনের জায়গায় ৫০ জনকেও থাকতে হয় গাদাগারি করে। প্রচলিত রয়েছে যাকে বলে বলে ইলিশ কাৎ। ওয়ার্ডের বন্দীরা নিজের অজান্তেই বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হন।

আবার সেল হোক কিংবা ওয়ার্ডই হোক, স্বল্প পরিসরের ছোট্ট রুমে দ্বিগুন থাকা বন্দীদের সব থেকে যন্ত্রণার নাম শৌচাগার বা টয়লেট। একজনের পেছনে আরেকজন দাঁড়িয়ে থাকেন টয়লেটে থাকা বন্দীর বের হবার অপেক্ষায়। সকাল বেলার যন্ত্রণা ভূক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো উপলব্দি করা সম্ভব নয়। শরীরের বিশেষ কোনো অঙ্গ চেপে কেউ কেউ টয়লেটের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরের জনকে দ্রুত বের হবার সংকেত দেন। এটা এক বিব্রতকর পরিস্থিতি। আবার মাদকাসক্ত বন্দীদের কেউ কেউ টয়লেটকে নিরাপদ জেনে সেখানে বসেই নেশা করে। এ সময় কেউ টয়লেটে যেতে চাইলে তাকেও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।

সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং দুপুর ২টা থেকে ৪টা নিদৃষ্ট সময়ে সুযোগ মেলে গোসলের। গোসল এবং টয়লেটের জন্য প্রতিদিন লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কখনো এক মগ কিংবা দুই মগ পানি মেলে গোসল ও কাপড় ধোয়ার জন্য। মুক্তির এমনই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন মামলায় কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া বন্দীরা।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে কারা হেফাজতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসেও এ সংখ্যা ছিল ১৯। ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মৃত ১৯ ব্যক্তির মধ্যে ৯ জন কয়েদি ও ১০ জন হাজতি। এছাড়া গত বছরে মারা গেছেন আরো শতাধিক। গত মাসেই কেরানিগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাতজন এবং গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, বগুড়া জেলা কারাগার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, নোয়াখালী জেলা কারাগার, চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার, নওগাঁ জেলা কারাগার, ঝিনাইদহ জেলা কারাগার এবং মৌলভীবাজার কারাগারে একজন করে মারা যান। এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

গত ৫ মার্চ কক্সবাজার জেলা কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কারাগারগুলোতে সুন্দর পরিবেশ, উন্নত খাদ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও কয়েদিদের অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে কারাগারকে সংশোধনাগার করে তুলতে নিয়মিত শুদ্ধাচার ও নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রতিনিধিদল কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে অবহিত করেন।

কারা সূত্র জানায়, দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার মিলিয়ে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। সবগুলো কারাগার মিলিয়ে বন্দির ধারণক্ষমতা সর্বসাকুল্যে ৪২ হাজার ৮৬৬ জনের। অথচ অধিকাংশ সময়ই বন্দি থাকে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি। কারা সংশ্লিষ্টরাও এসব বিষয়গুলো স্বীকার করে বলেন, সেই ১৮৬৪ সালের ব্রিটিশ জেলকোড অনুযায়ী এখনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বন্দিরা। ৩৬ স্কয়ার ফিট বা ৬ ফিট বাই ৬ ফিট জায়গা বরাদ্ধ একজন বন্দির জন্য। কিন্তু বন্দি দ্বিগুন হলে সেই জায়গায়ও অর্ধেকে সংকুচিত হয়।

কারা সূত্র জানায়, গতকাল সারাদেশের কারাগারগুলোকে মোট বন্দী ছিলেন ৭৩ হাজার ৫৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭০ হাজার ৬৫৭ এবং নারী ২ হাজার ৯৩৯ জন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারাগার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। যার ধারণ ক্ষমতা দুই হাজার ৪৯ জন। কিন্তু গত ৫ মার্চের হিসাব অনুযায়ী সেখানে বন্দী রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। জায়গার তুলনায় এত বড় সংখ্যার বন্দী সামাল দিতে কারা কর্তৃপক্ষ রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। বন্দিরাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মিলছে না ওজু গোসলের পানি। ঘুমাতে হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। এলার্জি, চর্ম রোগসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন কারাবন্দিরা। কারাগারে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদল নেতা আবদুল হালিম স্বপন বলেন, কারাগারের ওয়ার্ডে অতিরিক্ত বন্দির কারণে রাতে ঘুমানো যায় না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা টয়লেট। যা বোঝানো সম্ভব নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া কাগারে ধারণ ক্ষমতা নারী পুরুষ ওয়ার্ড মিলে সর্ব সাকুল্যে ৭৭৫ জন। অথচ গত ৪ মার্চ সেখানে বন্দী ছিলো ৯০ জন নারীসহ ২২০১ জন। তার মানে সেখানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ প্লাস। ওই দিন মুক্তিপ্রাপ্তরা জানান, সেখানের তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা লকাপে ওঠার পর একটি ওয়ার্ডের বাথরুম ও অজু করা নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। সেখানের জেল সুপারের মতে কারাগার সম্প্রসারণ ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান হবে না।

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৯৯৬ জন হলেও বতর্মানে বন্দি রয়েছে দ্বিগুণ। এই অবস্থায় বন্দির চাপ সামলাতে বিগত আট বছর ধরে চলছে ‘কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীরণ প্রকল্পের’ কাজ। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম বলেন, বতর্মানে কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ১৮৯০ জন। এর মধ্যে নারী বন্দির সংখ্যা ৬৬ জন। তারও দাবি কারাগার সম্প্রসারণের শেষ হলে এই পরিস্থিতি আর থাকবে না। কারাগারে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি কক্ষে মাত্র দুটি টয়লেট। আবাসনের অপর্যাপ্ততায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ বন্দি থাকছেন।

কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক বলেন, কয়েদী বন্দি থেকে হাজতি বন্দি কয়েকগুণ বেশি। কারা সংশোধনের অংশ এবং মানবিকতার বিষয়ে বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই বন্দিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। কারাবন্দিদের উন্নত চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ মনোযোগী। এছাড়া প্রায় ৫ হাজার জনবল পাইপলাইনে রয়েছে রিক্রুট করার জন্য।

জানতে চাইলে সহকারী কারা মহপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূইয়া গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এটা সত্য, কারাগারে গাইনি কিংবা হার্টের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক নেই। তবে প্রতিটি কারাগারেই একজন এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছেন। গাইনি রোগী হলেও প্রাথমিকভাবে তিনি যতটুকু সম্ভব সেবা দেন। প্রয়োজনে বাইরে রেফার করেন। সেল লক আপের পর কোনো বন্দী গুরুতর অসুস্থ হলে জরুরিভিত্তিতে ফার্মাসিস্ট দেখেন। তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আবাসন সমস্যা সম্পর্কে মাইন উদ্দিন ভূইয়া বলেন, খুলনা ও নরসিংদীতে কারাগার নির্মাণসহ কুমিল্লা, জামালপুর ও ময়মনসিংহে পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করার কাজ চলছে। বন্দিদের বর্তমানে খাবার তালিকার যা বরাদ্দ রয়েছে, যেমন- মাছ ৩৬ গ্রামসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী অপ্রতুল। মাছ-গোশতসহ প্রয়োজনীয় আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খাবার মেনু বৃদ্ধিতে প্রস্তাবণা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে অপর এক কারা কর্মকর্তা বলেন, কারাগারগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তিতে মনিটরিং ব্যবস্থার জন্য অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৪০টি কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভেতরে বাইরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) টিভি স্থাপন করা হয়েছে। জনবল সংকটের চেষ্টা চলছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা

হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা

মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে

মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে

ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা

ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা

নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে

নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে

জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল

জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল

নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ

সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে