জমি রক্ষা করতে পারছে না রেল
১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
১২ মার্কেটের ৯ একরের বেশি নিজেদের জমি রক্ষা করতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে একে একে বেহাত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই জমি। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, জমি তাদের। একই দাবি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই জমির আর্থিক মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি। সম্পত্তি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে টানাপোড়েন চলার মধ্যেই শূন্য দশমিক ৯৭ একর ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসসিসি। একই পরিকল্প নেওয়া হয়েছে পর্যায়ক্রমে সবকটি মার্কেটে।
রেলওয়ে বলছে, তাদের ১২ বাজারের জমি সিটি করপোরেশনে দেওয়া হয়েছিল ব্যবস্থাপনার জন্য। শর্ত ছিল, এসব মার্কেট থেকে আয়ের পাঁচ ভাগ তাদের দেওয়া হবে। কিন্তু ১৯৮৪ সালের পর থেকে একটি টাকাও পায়নি রেলওয়ে। উল্টো সিটি করপোরেশন এলাকায় সব জমি নিজেদের দাবি করে ১২ বাজারের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
সম্পত্তি নিজেদের জমি রক্ষায় তৎপর হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন ভূমিতে অবস্থিত খিলগাঁও বাজার এলাকায় ডিএসসিসির স্থাপনকৃত সীমানা বেড়া অপসারণে করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত চিঠি পাঠিয়েছেন রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা।
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ১৯৮৪ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের ১৪ জানুয়ারি এবং ১৯৮৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সাতটি নকশার মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (বর্তমান) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের যৌথ স্বাক্ষরে আলোচ্য খিলগাঁও মার্কেটসহ রেলওয়ের ভূমিতে অবস্থিত ১২টি বাজারের জমি (ভূমির পরিমাণ ৯ দশমিক ১৯ একর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে শুধু ব্যবস্থাপনার জন্য হস্তান্তর করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব মার্কেটের আয় থেকে পাঁচ ভাগ হারে ফি/ভাড়া পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু শর্তানুযায়ী মার্কেটগুলোর আয়ের পাঁচ ভাগ ফি/ভাড়া বাবদ অর্থ বাংলাদেশ রেলওয়েকে পরিশোধ করা হয়নি।
হস্তান্তরিত মার্কেটটির ভূমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৯৭ একর। গত ২৩ জানুয়ারি ডিএসসিসির পক্ষ থেকে খিলগাঁও কাঁচাবাজারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত বসবাসকারী ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানিরা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কার্যালয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে যান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। পরিদর্শনে দেখা যায়, হস্তান্তরিত শূন্য দশমিক ৯৭ একর ভূমির পরিবর্তে প্রায় ১ দশমিক ৫০ একর ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জমির ওপর সীমানা বেড়া দেওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
রেলওয়ের হস্তান্তরিত শূন্য দশমিক ৯৭ একর ভূমির অতিরিক্ত ভূমিতে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শেষে সিটি করপোরেশনের স্থাপনকৃত সীমানা বেড়া অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় রেলওয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে রেলের ১২টি মার্কেটে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চায় সিটি করপোরেশন। সবকটিই হবে আধুনিক কাঁচাবাজার। এ ক্ষেত্রে তাদের দাবি, সিটি করপোরেশন এলাকায় সব সম্পত্তির মালিক স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠান। এই অবস্থায় রেলের ১২ মার্কেটের বিপুল পরিমাণ জমি হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা। অথচ এ ভূমিতে রেল কর্তৃপক্ষ বহুতল ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিলে বিপুল অঙ্কের অর্থ আয় করতে পারে, যা বছর শেষে রেলওয়ের লোকসান অনেকটাই কমিয়ে আনা যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সাবরেজিস্ট্রারের মৌজাভিত্তিক সর্বশেষ দর অনুযায়ী মতিঝিলে প্রতি কাঠা জমির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৫ টাকা। খিলগাঁও বাণিজ্যিক এলাকায় কাঠাপ্রতি জমি ১ কোটি ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গড়ে ২ কোটি টাকা প্রতি কাঠা জমির মূল্য ধরা হলে রেলের ৯ দশমিক ১৯ একর জমির দাম দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এসব জমি অন্তত তিনগুণ বেশি দামে বিক্রির কথা জানা গেছে।
রেলওয়ে সূত্রগুলো বলছে, ইজারা নেওয়া জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে নিয়মিত ভাড়া আদায় করলেও ইজারা মূল্য বাবদ বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা রেলওয়েকে পরিশোধ করেনি সংস্থাটি। রেলওয়ের পক্ষ থেকে ইজারার অর্থ চেয়ে বারবার চিঠি দিলেও লাভ হয়নি। ২০১০ সাল পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে ইজারা মূল্য বাবদ রেলওয়ের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ খাতে রেলওয়ের বর্তমান পাওনা প্রায় ২০ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সে অর্থ পরিশোধ করছে না সিটি করপোরেশন।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, খিলগাঁও কাঁচাবাজারে অবৈধ দখলে থাকা সবকিছু উচ্ছেদ করে বেড়া দেওয়া হয়েছে। মূলত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটিসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার মাল্টি স্টোরড ভবন নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সবগুলোতে কাঁচাবাজার নির্মাণ করে প্রকৃত দাবিদারদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। রেল যদি বাজারগুলোর প্রকৃত দাবিদার হয়ে থাকে, তাহলে কাগজপত্র বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। তবে খিলগাঁও আবাসিক এলাকায় রেলের কিছু জমি আছে। আমরা ভবন নির্মাণের আগে দাবিদারের বিষয়টি সুহারা করব।
রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, রেলের পক্ষ থেকে ১২টি মার্কেটের জমি থেকে বৈধ পাওনা আদায়সহ নিজেদের সম্পত্তি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের জমিতে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালানো হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা
মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে
ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা
নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা
সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে