খরচের খাতা খোলা, নেই নতুন নির্বাচন
১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে ছাত্ররাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের আজকের এই তারিখে নির্বাচন পায় দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট খ্যাত এ রাজনৈতিক সূতিকাগার। কিন্তু সে নির্বাচনের ৫ বছর পূর্ণ হলেও নেই নতুন নির্বাচনের কোনো আভাস। ফলে ফের বন্ধ্যাত্বের পথে হাঁটছে ডাকসু। ডাকসু ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদের কক্ষও অনেকটাই বেদখল ও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কক্ষ ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হওয়ার পর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর একটিতে বসতেন ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও আরেকটিতে সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। বাকি কক্ষগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি কক্ষ পত্রিকা পড়ার কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কয়েক মাস ধরে এখানে পত্রিকা রাখা হচ্ছে না বলে জানান একজন কর্মচারী। একই কারণে কলাভবনের ছাত্রীদের কমন রুমেও বর্তমানে পত্রিকা দেওয়া হচ্ছে না। বাকি কক্ষগুলো মাঝে মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে ব্যবহার করে থাকেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি কক্ষকে ডাকসুর সাবেক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবহার করতে দেখা যায়। অন্যান্য কক্ষে ডাকসুর ট্রেজারারের অনুমতিক্রমে ছোট পরিসরে আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আরেকটি কক্ষে ডাকসুর সিনিয়র প্রশাসনিক কর্তকর্তা আবুল কালাম আজাদ বসেন। ওই কক্ষটিও অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। ডাকসু কার্যকর না থাকায় প্রতিদিন অলস সময় কাটান তিনি।
আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও এই ভবনের তত্বাবধানে রয়েছে ৪জন কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা নিয়মিত বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না নতুন নির্বাচন। ডাকসু ভবনের নিচ তলায় রয়েছে ডাকসু সংগ্রহশালা ও ক্যাফেটেরিয়া। ডাকসু না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিনি জাদুঘরেও আসছেন না শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী জানেই না এই জাদুঘরের কথা। সম্প্রতি এই জাদুঘরের কেয়ারটেকার অবসরে যাওয়ার পর ওই পদে নতুন কাউকে নিয়োগও দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে ডাকসুর অন্যান্য কর্মচারীরাই জাদুঘরের দেখভাল করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল সংসদের কক্ষগুলোও হচ্ছে বেদখল। হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতারা এখন অনেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় মেয়াদ শেষেও তারা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছে এসব কক্ষ। এছাড়া হলের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও মাঝে মাঝে ব্যবহার করে থাকেন এসব কক্ষ।
দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্ধ্যাত্ব ঘুচে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন পায় ঢাবি শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরাজ করে এক নতুন আমেজ। কিন্তু সেই নির্বাচনের ধারা রক্ষা করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অপরদিকে স্থবির ডাকসুর কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেছনে প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় খরচ করছে লাখ লাখ টাকা। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভর্তির সময় হল ইউনিয়ন ও কেন্দ্রীয় সংসদের নামে দিতে হচ্ছে ১২০ টাকা। যা মোট শিক্ষার্থী অনুপাতে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ টাকায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ডাকসুর নামে নেওয়া এত এত টাকা যাচ্ছে কোথায়? এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, ডাকসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই। তাই যে টাকাটা ডাকসুর নামে নেওয়া হচ্ছে তা কেন্দ্রীয়ভাবে অন্যান্য সকল খাতে খরচ করা হচ্ছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ডাকসু ও হল সংসদগুলো কার্যকর না থাকায় বর্তমানে হল সংসদের জন্য শিক্ষার্থীদের পদেয় টাকাও পাচ্ছে না বলে জানান একাধিক হল প্রভোস্ট। তারা জানান, হল ইউনিয়নের নামে যে যতসামান্য টাকা শিক্ষার্থীরা প্রদান করে থাকে সেটাও আমরা এখন পাচ্ছি না। অন্যদিকে আমাদের হলের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় বছরে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু বছরে একবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আমাদের দেওয়া হয়। যা এই খাতে মোট ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। ফলে হল পরিচালনায় আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। এরমধ্যে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের পরাধীন রাষ্ট্রের ৫০ বছরে হয়েছে সর্বাধিক ২৮ বার। অন্যদিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ৫৩ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৯বার। ১৯৯০ এর স্বৈরশাসক পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে দীর্ঘ ২৮ বছরের খরা পায় ডাকসু। যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য প্রহসন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাকসু নির্বাচন হলে সরকার তার স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি বলেন, সরকার চায় না ডাকসু হোক। কারণ এতে তাদের স্বৈরশাসন হুমকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চায় না তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি তাঁদের স্বার্থে কথা বলুক। দেশের রাজনীতিতে এখন অযোগ্য মানুষের আধিপত্য। ফলে মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ও জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারসহ সকল মহলের সহযোগিতায় যদি একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রেখে ও উন্নয়ন অব্যাহত রেখে ডাকসু নির্বাচন দিতে আমাদের তরফ থেকে কোন আপত্তি নেই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা
মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে
ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা
নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা
সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে