শিগগিরই কোস্ট গার্ড আধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ ও হেলিকপ্টারে সজ্জিত হবে : প্রধানমন্ত্রী
১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সরকার একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে (বিসিজি) অতি-আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে সজ্জিত করে একটি আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে এমন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে খুব শিগগিরই এ বাহিনীতে যুক্ত হতে যাচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ, মেরিটাইম সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম, হোভারক্রাফট ও দ্রুত গতিসম্পন্ন বোট। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ডের ‘২৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং কোষ্ট গার্ড দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। কোস্ট গার্ড বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক জাহাজ, হেলিকপ্টার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি সমুদ্র নির্ভর পেশায় নিয়োজিত জনসাধারণের ও নৌ পথের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ড-এর গভীর সমুদ্রে টহল উপযোগী আরো ৪টি ওপিভি, ২টি মেরিটাইম ভার্সন হেলিকপ্টার সংগ্রহের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তি যা কোস্ট গার্ডকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সাথে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি ২টি হেলিকপ্টার উইংয়সহ এভিয়েশন উইং গঠনের নীতিগত অনুমোদন প্রদান করেছি যা সংযোজনের মাধ্যমে কোস্ট গার্ড-কে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে ৪টি অফশোর প্যাট্র্রল ভেসেলসহ বিভিন্ন আকারের ১৬টি জাহাজ ও ১৩৮টি বোট কোস্ট গার্ড বহরে সংযোজিত হয়েছে। গভীর সমুদ্রে কোস্ট গার্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১ এর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য আজ কোস্ট গার্ড-এর নবসংযোজিত ভিস্যাটনেট সিস্টেম ও ঢাকা জোন, পূর্ব জোন এবং দক্ষিণ জোনের বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ৯টি প্রতিস্থাপক জাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১৯৯৫ সালে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ২৯ বছরে আজ একটি আধুনিক ও যুুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার কোস্ট গার্ড-এর বিভিন্ন জোনের জন্য ভূমি বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন নতুন জলযান সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড-এর অগ্র্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ড-এর স্টেশন ও আউটপোস্ট সমূহে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এছাড়া,বিভিন্ন আকারের জলযান নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ড-এর জোনসমূহে কর্মরত সদস্যগণের বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্ট গার্ড-এর জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে তিনি নিজেই ‘বিসিজি বেইস অগ্রযাত্রা’ নামে কমিশন করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইনশোর প্যাট্র্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, টাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট তৈরি করা হয়েছে। এ বাহিনীর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর আধুনিকায়নে রূপকল্প ২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী বর্তমান জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার জন করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র রীতির পথ অনুসরণ করেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দৃষ্টিও এখন দেশের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে। সমুদ্রপথে আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে এবং সুনীল অর্থনীতির বিশাল ভান্ডার মজুত রয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, এই সমুদ্র সীমায় আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের অর্থনীতিতে কাজে লাগে সে জন্য ‘ব্লু ইকোনমি’ নীতি বাস্তবায়ন করছে সরকার। তাছাড়া সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটও আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। কারণ গবেষণাটা একান্তভাবে দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৎস গবেষণায় তাঁর সরকার জাহাজের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু সার্বিক সমুদ্র গবেষণার জন্য জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপও সরকার নিচ্ছে এবং পর্যটন শিল্পকেও গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৮০ মাইল বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আমাদের রয়েছে। যা অন্য কারো নেই। কাজেই সেটাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পকে আরো উন্নত ও আকর্ষণীয় করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন যেখানে আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধন রচনা করতে পারি। সেভাবেই আমাদের দেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা আমাদের একান্তভাবে দরকার। আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষের জানমাল রক্ষা করা, গভীর সমুদ্র যারা যান, মৎস আহরণে বা অন্যান্য কাজে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যায় সহ দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও আমি মনে করি এই বাহিনী যথাযথ অবদান রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, জনগণের বন্ধু হিসেবেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। নিজেদের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে।
বর্তমান সরকারের যে লক্ষ্য আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সে জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান নির্ভর করে গড়ে তুলছে সরকার এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বিশে^ মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। সে জন্য দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও তিনি আবারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বর্তমান ও সাবেক কোস্ট গার্ড সদস্যদের অবদান ও সাহসিকতার জন্য তাদের মাঝে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পদক, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক, রাষ্ট্র্রপতি কোস্ট গার্ড পদক এবং রাষ্ট্র্রপতি কোস্ট গার্ড (সেবা) পদক প্রদান করেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোস্টগার্ডের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে ভি-স্যাটনেট কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং ছয়টি স্টেশন ও আউটপোষ্ট এবং তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। নবসংযোজিত কোস্ট গার্ড ভিস্যাটনেট সিষ্টেম এর ওপর অনুষ্ঠানে একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হাসিনার আমলে মেট্রোরেলের আয় নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা
মাহিয়া মাহির দেড় মিনিটের ভিডিও ভাইরাল, কী আছে এতে
ভারতকে ইলিশ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন নেটিজেনরা
নতুন সরকারের ঘোষণা ফ্রান্সে
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল
নৌখাতে দুর্নীতি –অনিয়মে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : নৌপরিবহন, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা
সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক খেয়ে ধরলেন মুন্সিগঞ্জ বিসিক, অতিরিক্ত দায়িত্বে লিটনের আত্মীয় বায়েজিদ
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে