নৌপরিবহন অধিদফতরের ঘুম ভাঙছে না
২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৫২ এএম
সমুদ্রে চলাচল করা প্রতিটি জাহাজে এল আর আই টি সংযুক্ত থাকে যা প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর জাহাজের সব ডাটা আপডেট করা হয়। জাহাজ কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার এর ইমেইল ও মোবাইলে এসএমএস চলে আসে। জাহাজ আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করার খবর কে এস আর এম এর কোম্পানি সিকিউরিটি অফিসার সাথে সাথেই জেনেছেন। অথচ তারা ডিজি শিপিংকে জানাননি। এক্ষেত্রে চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন কেনো ডিজি কে জানাননি এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে প্রতিটি সমুদ্রগামী জাহাজ এল আর আই টি সংযুক্ত থাকে যা প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর জাহাজের সব ডাটা আপডেট করা হয়। জাহাজ কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার এর ইমেইল ও মোবাইলে এস এম এস আসলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেনের কোন গাফলাতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন যেখানে সরকার সব কিছু করতেছে আমরা তা অবগত আছি।
সোমালি দস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ আবদুল্লাহ ছিনতাই করার পর থেকে জলদস্যুতা নির্মূলে কাজ করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স ‘অপারেশন আটালান্টার’ অংশ হিসেবে জাহাজটির ওপর নজর রাখছে। ইউরোপীয় এই বাহিনী এরই মধ্যে জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। গত ১৫ দিন ধরে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে রেখেছে সোমালি সশস্ত্র জলদস্যুরা। জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মালিকপক্ষের সঙ্গে দস্যুদের যোগাযোগ চলছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সমঝোতা নিয়ে যোগাযোগের খবরের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় চলছে। অর্থচ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নৌ সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে দক্ষ, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব নৌ চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব নৌপরিবহন অধিদপ্তরের। এ সংস্থাটি এ বিষয়ে কোনো সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এসেছে এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কথা। অন্যদিকে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইকারী জলদস্যুদের সঙ্গে স্থলভাগের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজের মালিকপক্ষের তরফ থেকে সামরিক অভিযানের বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করে আসা হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌপরিবহন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো জাহাজ সমুদ্র ছেড়ে গেলে এবং আন্তজাতিক জাহাজ আসলে তার সব খবর নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জানবেন। তিনি জানার পরও বিষয়টি ডিজিকে অবগত করেনি।
দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নৌ সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে দক্ষ, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব নৌ চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব হচ্ছে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের। কিছুই জানেনা চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। যেকোনো জাহাজ পাইরেট দ্বারা আক্রান্ত হলে শিপ সিকিউরিটি অ্যালার্ট বাটনে চাপ দেয়। এতে করে জাহাজ কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার ও নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার এর ইমেইল ও মোবাইলে এসএমএস চলে আসে যে জাহাজটি আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করেছে। এইখানে কে এস আর এম এর কোম্পানি সিকিউরিটি অফিসার সাথে সাথেই জেনেছেন এইটা সিউর এবং কোম্পানির ঊর্ধ্বতন দের সাথে আলোচনাও করেছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে তারা ডিজি শিপিং কে জানাননি। এক্ষেত্রে চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন কেনো ডিজি কে জানান নাই? তাছাড়া প্রতিটি সমুদ্রগামী জাহাজ এল আর আই টি সংযুক্ত থাকে যা প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর জাহাজের সব ডাটা আপডেট দেয় যার রিপোর্ট সি এন এস ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনের কাছে যাওয়ার কথা। ক্যাপ্টেন গিয়াস জাহাজের পজিশন দেখে তো বুঝার কথা এবং ডিজি কে জানানোর কথা। তিনি কেনো জানান নাই? এখন বলি আসল কথা, ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ এর এইসব বিষয়ে কোনো আইডিয়াই নাই অথচ টাকার জোরে তিনি হয়ে আছেন চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার। সে চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার এর কোনো কাজেই বুঝেন না, বুঝার কোনোও ইচ্ছেও নেই। যেইসব কাজে টাকা নেই দায়িত্ব আছে সেইসব কাজ সে জানতেও চান না। এই দেশের বড়ই দুর্ভাগ্য এই জাতীয় লোকজন পদ নিয়ে আছে। ইইউ নেভাল ফোর্সের ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১৮ মিনিটে এমভি আবদুল্লাহর কাছে তাদের জাহাজ মোতায়েনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশি জাহাজটি ঘিরে ইইউ নেভির একটি হেলিকপ্টার চক্কর দেওয়ার কথাও জানানো হয়। ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও শিগগিরই কোনো অভিযানের পরিকল্পনার বিষয়ে জানায়নি। ইইউ নেভাল ফোর্স এর আগেও জিম্মি জাহাজ আবদুল্লাহ উদ্ধারে অভিযানের আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ নিয়ে দফায় দফায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে দস্যুরা। যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন এবং সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড স্বশাসিত অঞ্চলের পুলিশের অভিযান নিয়ে হঠাৎ চাপের মুখে পড়েছে তারা।
জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহেরুল করিম বলেন, নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি, তাঁরা (নাবিক) সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন ও সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের নুগাল অঞ্চলের পুলিশের অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মেহেরুল করিম বলেন, এ ব্যাপারে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজ আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করার খবর কে এস আর এম এর কোম্পানি সিকিউরিটি অফিসার সাথে সাথেই জেনেছেন। অথচ ডিজি শিপিংকে জানাননি।চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন।
এমভি আবদুল্লাহতে বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া কেউ অভিযান চালাতে পারে কি না এ প্রশ্নের জবাবে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাহাজটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী। তাই জাহাজে অভিযান চালাতে গেলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি লাগবে।
বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মতো ২০১০ সালে এ দেশের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেটির নাম ছিল জাহান মণি। ১০০ দিন পর সেই জাহাজে থাকা ২৬ জন মুক্তি পান। জাহান মণি অপহরণের শিকার হয়েছিল ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর। এটিও ছিল চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন। ওই জাহাজে ২৫ জন নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী ছিলেন।জাহান মণি জাহাজটি ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর সেটি সিঙ্গাপুরে এসে যাত্রাবিরতি করে। সিঙ্গাপুর থেকে ২৭ নভেম্বর গ্রিসের দিকে রওনা দেয়। জাহাজটিতে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন নিকেলের আকরিক ছিল। আরব সাগর দিয়ে যাত্রার সময় ভারতের লক্ষা দ্বীপ থকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহান মণি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা ছোট ছোট জলযান নিয়ে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলেছিল। হুক ও মই ব্যবহার করে জাহাজে উঠে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে নাবিক ও কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ফেলে তারা।
সোমালি জলদস্যুরা জাহান মণি জাহাজটিকে অপহরণ করে ১১ ডিসেম্বর সোমালিয়ার উপকূলের একটি স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা মুক্তিপণ হিসেবে ৯ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান বাজারমূল্যে ৯৯ কোটি টাকা) দাবি করে। মুক্তিপণ নিয়ে সে সময় জলদস্যু ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছিল। জলদস্যুরা ফোনে জিম্মিদের সঙ্গে দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনের মাঝেমধ্যে কথাবার্তা বলার সুযোগ দিয়েছিল। এতে তাঁদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কমে। কিন্তু পরিবারগুলো পণবন্দীদের মুক্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগে ছিল। জাহাজটি অপহরণের ১০০ দিন পরে, ২০১১ সালের ১৩ মার্চ ভোরে জলদস্যুরা পণবন্দীদের মুক্তি দেয়। তবে মুক্তিপণের টাকা দেওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, মুক্তিপণ হিসেবে ৪ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার ও জ্বালানি খরচ হিসেবে আরও ১ লাখ ডলার (বর্তমান মূল্যে মোট প্রায় ৫২ কোটি টাকা) দুটি জলনিরোধ বক্সে করে জলদস্যুদের নির্দেশনা মোতাবেক পাঠানো হয়েছিল। এর পরেই তারা জিম্মিদের মুক্তি দেয়। অবশ্য মুক্তিপণ পাঠানো বিষয়ে কোনো পক্ষই কোনো কথা বলেনি। বিষয়টি স্বীকারও করেনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং
পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে
৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে
সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ