ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
রমজানে কম দামে গরুর গোশত বিক্রি করে তিন কসাই ভাইরাল পুরান ঢাকার নয়ন গরু চুরির অভিযোগে জেল খেটেছেন, মিরপুরের উজ্জ্বল দেনায় জর্জরিত আর শাহজাহানপুরের খলিল রহস্যময় চরিত্রের মানুষ

গোশতের নামে কী খাচ্ছেন

Daily Inqilab হাসান-উজ-জামান

২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম

মুসলমানদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার গরুর গোশত। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের মতো গরুর গোশতের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খাবার টেবিলে গরুর গোশত কমই থাকে। এমনও শোনা যায় রাজধানী ঢাকার হাজার হাজার পরিবার ঈদুল আজহায় কোরবানির গরুর গোশত খান; সারাবছর গরুর গোশত কিনতে পারেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরুর যে দাম তাতে প্রতিকেজি গোশত সাড়ে ৭শ’ টাকার কম বিক্রি করা অসম্ভব। কিন্তু কয়েক মাস হঠাৎ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে মাইক দিয়ে প্রচার করে ৫৯০ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি করা হয়। এর মধ্যেই এসে যায় রোজা। রোজায় ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় কয়েকজন কসাই ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রি শুরু করেন। ফলে ওই সব দোকানে শত শত গ্রাহক দীর্ঘ লাইন দিয়ে গোশত কেনেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কম দামে গরুর গোশত ক্রয় করার সদৃশ্য প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। রাতারাতি এ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। কম দামে গোশত বিক্রি করা কসাইরা রাতারাতি হিরো হয়ে যান। সবার মুখে মুখে তাদের নাম উচ্চারিত হয়। এমনকি প্রশাসনের লোকজন দিয়ে ওই কসাইদের কম দামে গোশত বিক্রিতে উৎসাহিত করেন। অন্যদিকে মহানায়ক কসাইদের কম দামে গোশত বিক্রি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই সন্দেহ করেন যে সত্যিই কী ওই কসাইরা মানসম্পন্ন ও ভাল মানের গোশত বিক্রি করেন? কেউ কেউ সন্দেহ করেন আসলে গোশতের নামে চর্বিই বিক্রি করছেন আলোচিত কসাইরা। প্রশ্ন হচ্ছে ভাইরাল হওয়া কসাই শাহজাহানপুরের খলিল, পুরান ঢাকার নয়ন ও মিরপুরের উজ্জ্বল গরুর গোশতের নামে কী বিক্রি করছেন? লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গরুর গোশতের নামে মানুষ কী কিনে খাচ্ছেন?

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং ফকিরাপুল বিসমিল্লাহ গোশত বিতানের মালিক গোলাম মর্তুজা মন্টু ইনকিলাবকে বলেন, সেই ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থাৎ ৫৫ বছর ধরে গরুর গোশতের ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্তমান গরুর বাজার মূল্যের ওপর নির্ভর করে সাড়ে ৭শ’ টাকার নিচে গরুর গোশত বিক্রি করা সম্ভব নয়। যারা কম দামে গোশত বিক্রি করছেন তারা ফার্মের গরু কেনেন। যেসব গরুর প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮ মণ গোশত হয়। ফিড খাওয়ানো গরু মোটা হবার পাশাপাশি চর্বিযুক্ত হয়। যে গরুর ৫ মণ গোশত হয় এরমধ্যে ৪০-৪৫ কেজি চর্বি হবেই। আর দেশি গরুর দুই মণ গোশতে ৩ থেকে ৪ কেজি চর্বি হয়। ফার্মের গরুর এসব চর্বি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গোশতের সঙ্গে চর্বি ও ওয়েস্টেজ হাড্ডি, গুরদা, মাথার গোশত, গরুর পা, এমনকি গরুর গোশতের মধ্যে একটি হারাম গোশত রয়েছে সেটিও নির্ধারিত দামে বিক্রি করেন।

রমজানের শুরু থেকে ৬শ’ টাকারও কমে গরুর গোশত বিক্রি করে আলোচিত হয়ে ওঠেন ঢাকার তিন ব্যবসায়ী। জনপ্রতিনিধি কিংবা সেলিব্রেটিদের মতোই এখন তাদের নাম ডাক। নাম বলা মাত্রই রিকশাওয়ালাও নিয়ে যায় তাদের ঠিকানায়।

এদের একজন শাহজাহানপুরের গোশত ব্যবসায়ী খলিল। ২৫ রমজান পর্যন্ত ৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর গোশত বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিছুদিন সে অনুযায়ী বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে তিনি লুফে নেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ‘ব্যবসায় উত্তম চর্চার স্বীকৃতি’ পুরস্কার। অপর দুই জনের একজন মিরপুরের উজ্জ্বল। তিনিও গরুর গোশত বিক্রি করেন ৫শ’ ৯৫ টাকায়। অপরজন পুরান ঢাকার নয়ন আহমেদ। যিনি ৫৮০ টাকায় গরুর গোশত বিক্রি করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

আলোচিত এসব ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা লাভের চেয়ে বেশি জনসেবা করেন। সাধারণ মানুষ যাতে গরুর গোশতের স্বাদ নিতে পারেন এটিই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

কম মূল্যে গোশত বিক্রিতে হইচই ফেলে দেয়া এ ব্যবসায়ীদের কারণে অন্য ব্যবসায়ীদেরও জবাবদিহি করতে হয়েছে। খলিল-নয়ন ও উজ্জ্বলের দাবি, ৫৭০ টাকায় গোশত বিক্রি করেও তারা লাভ করছেন। তবে লাভের পরিমাণ কম।

তবে আলোচিত এ ব্যবসায়ীদের দাবিকে অযৌক্তিক, বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছেন অন্যান্য গরুর গোশত ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, আলোচিত ব্যবসায়ীরা যা করছেন সেটা মানুষের সাথে প্রতারণা। কোন চোর ছাড়া বর্তমান বাজারে ৬শ’ টাকারও নিচে গরুর গোশত বিক্রি সম্ভব নয়। এর পেছনে গোপন কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। অথবা গোশতের নামে ক্রেতাদের সঙ্গে ঠকবাজি করছেন।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, মিরপুরের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দেনায় জর্জরিত। এক সময়ে গাবতলি হাট থেকে গরু কিনলেও এখন সেখানের পাওনাদারদের ভয়ে সেদিকে মুখ ঘোরাচ্ছেন না। অর্ধ কোটি টাকার কাছাকাছি তিনি দেনাগ্রস্ত। এসব দেনার একমাত্র কারণও ব্যবসায় লস হওয়া।

অপরদিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নয়ন আহমেদ আগে খাশির গোশত সাপ্লাই দিলেও বছর খানেক ধরে তিনি গরুর গোশত বিক্রি করেন। তবে আশ্চর্য্যরে বিষয় হচ্ছে, নয়ন আহমেদ নিজেই একজন গরু চোর। গত বছরের শেষ দিকে গাড়িতে করে চোরাই গরু সরবরাহকালে ওয়ারী থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। জেল খাটেন কয়েকদিন।

সব থেকে আলোচিত ব্যবসায়ীর নাম শাহজাহানপুরের খলিলুর রহমান। তিনি একজন পেশাদার ব্যবসায়ী। সুযোগ বুঝেই ছুরি চালান। তার চরিত্র রহস্যে ঘেরা। এক সময়ে ৮শ’ টাকায়ও গরুর গোশত বিক্রি করেছেন। এখন আলোচনায় আসতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক টাকার মালিক খলিল কম মূল্যে গরুর বিক্রি করার বিপরীতে তিনিই সব থেকে বেশি লাভ করছেন বলে দাবি করেন অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, খলিল, ৬০ টাকার গরুর চর্বি এখন গোশত হিসেবে বিক্রি করছেন ৬শ’ টাকা কেজি দরে।

বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট, মহাখালী কাঁচা বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার ও বনানী কাঁচা বাজার, গুলশান নতুন বাজার, যাত্রাবাড়ি, ফকিরাপুল, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, খিলগাঁও, কামরাঙ্গীরচরসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক গরুর গোশত ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, তারা বর্তমানে গরুর গোশত বিক্রি করছেন সাড়ে ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৮০ টাকায়। কোথাও কোথাও ৮শ’ টাকা। তবে হাড্ডি ও চর্বি ছাড়া ফ্রেশ গোশত ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে রোজার শুরুতে প্রায় একই সুরে খলিল-নয়ন ও উজ্জ্বলের কম কেজি প্রতি প্রায় দেড়শ’ টাকা কমে গোশত বিক্রির ঘোষণায় দামের পার্থক্য নিয়ে নানা প্রশ্নের দানা বেঁধেছে সকলের মনে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আরমানিটোলার নয়নের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে ৫৭০ টাকায় মিক্সড গোশত কিনছেন সাধারণ ক্রেতারা। ভলান্টিয়ারের ন্যায় পাহারা দিচ্ছে তার সহযোগীরা। এলাকাবাসী জানায়, জাতীয় নির্বাচনে তার পছন্দের এক প্রার্থীর বিজয় উৎসব ও উপহার হিসেবে তিনি ৫শ’ টাকায় গরুর গোশত বিক্রি করেন। ওয়ারী থানা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের শেষ দিকে তিনি চোরাই গরু ও পরিবহনসহ কয়েকজন সঙ্গীসহ গ্রেফতার হন। তবে নয়নের দাবি, পুলিশ তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়েছে। জানতে চাইলে নয়ন ইনকিলাবকে বলেন, জনসেবার জন্যই তিনি কম দামে গোশত বিক্রি করেন। বর্তমানে তার কাছে তেত্রিশ লাখ টাকা পাবেন গরু সাপ্লাই দিয়েছেন যারা। দৈনিক ৮টি গরু জবাই করলেও এ পর্যন্ত লাভ-লসের হিসেব মেলানো হয়নি।

টিপু সুলতান রোডের ব্যবসায়ী তারেক আজিজ ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান গরুর যে দাম তাতে বাটপার ছাড়া কেউ সাড়ে ৭শ’ টাকার নিচে গোশত বিক্রি করতে পারবে না। গত বুধবার তার দোকানে মহিষ জবাই হয়। এর আগে তিনি নিজের ব্যবসায়িক খাতা দেখিয়ে কসম খেয়ে বলেন, ওই সময়ের বিগত দুই দিনে গরুর গোশত বিক্রিতে তার ১৭ হাজার ৯শ’ টাকা লস হয়েছে। এখন ৮ লাখ টাকা কেনা দুটো মহিষে হয়তো লস কাটিয়ে উঠবেন।

তিনি বলেন, গরুর হাটগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে এ সমস্যা হতোনা। গরু ওজনে বিক্রি করা উচিৎ। কার, যিনি গরু বিক্রির জন্য আসেন তিনি ৩-৪ হাজার টাকা কম বেশি লাভে গরু বিক্রি করে চলে যান। কিন্তু যারা গোশত বিক্রি করেন, তারা অনুমান নির্ভর হয়ে গরু কিনেন। সে ক্ষেত্রে লসের সম্ভাবনা থাকে। ভারত থেকে গরু আমদানির ওপরও জোর দেন তিনি।

প্রায় একই সুরে কথা বলেন, ওই এলাকার ব্যবসায়ী বাদশার দোকানের কর্মচারী জসিম, নয়াবাজারের রাতুল, কাপ্তানবাজারের ছিদ্দিকসহ অসংখ্য ব্যবসায়ী।
নাজিরাবাজারের আগাসাদেক রোডে ত্রিশ বছরের ওপর পাইকারি গরুর গোশত বিক্রি করেন বাবুল মহাজন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, দৈনিক গড়ে তিনি ৮/৯টি গরু জবাই করেন। পাইকারি সাড়ে ৭শ’ ২০ টাকা করে গরুর গোশত বিক্রি করেন। যারা তার কাছ থেকে নেন তারা ওই সব গোশত ঝুলিয়ে সাড়ে ৭শ’ কিংবা ৭শ ৮০ টাকা অথবা কেজি প্রতি কিছুটা কম-বেশি দরে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, যারা বর্তমানে ৬শ’ টাকারও কমে গরুর গোশত বিক্রি করেন তারা জাতির সাথে শুধু প্রতারণা নয়Ñ নিয়মিত বেঈমানি করেন।

যুগের পর যুগ ধরে গরুর গোশত পাইকারি বিক্রি করতেন মিরপুর ১১ নম্বরের কামাল মিয়া। এক সময় ১১ নম্বরে তার দোকান ছিলো। দাম বাড়ার কারণে এখন গোশত বিক্রি বন্ধ করে গরুর সাপ্লাই দেন। তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হলে গরুর দাম বেড়ে যায়। যে কারণে অনেকেই গরুর গোশতের দোকান গুটিয়ে নিয়েছেন। ঢাকা শহরে ১০ বছর আগেও বাজার ও পাড়া মহল্লা মিলিয়ে ৭ হাজারের বেশি কসাইয়ের কিংবা গরুর গোশতের দোকান ছিলো। এখন সেখানে দোকান রয়েছে মোটের ওপর তিন হাজার। যারা বর্তমানে সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়েও কম টাকায় গরুর গোশত বিক্রি করছেন তাদেরকে ব্যবসায়ী হিসেবে শনাক্ত করাও উচিৎ নয়। তার ভাষ্য, এটিকে ব্যবসায়িক কৌশল বলা যাবে না। অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেদের জাহির করেছে। হয়তো কোনো প্রতারণাও তাদের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, কেউ কেউ হাড্ডি, চর্বি কিংবা গরুর মাথা, জিহবা সমেত গরুর গোশত ৬শ টাকায় বিক্রি করেন। সেখানেও লাভ কিন্তু লুকিয়ে নিয়েছে। এরাই আবার কিছু চাইনিজ ও ফাইভ স্টার কিংবা উন্নত মানের হোটেল মোটেলে ১১-১২শ’ টাকায় ফ্রেশ গোশত সাপ্লাই দেয়। ওই ফ্রেশ গোশতের হাড্ডিগুলোও কিন্তু সাধারণ পাবলিকের কাছে ৬শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কিন্তু কখনো ঠকেন না। যে কোনোভাবেই লাভ করেন। এখানেও ব্যবসায়িক কোনো ফন্দি লুকিয়ে আছে। তবে তাদের ভবিষ্যৎ ফলাফল কিন্তু ভালো মনে হয়না। হয়তো কোনোদিন শুনবেন তারা লাপাত্তা। তাদের কাছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আসছেন পাওনাদার।

এদিকে মিরপুরের উজ্জ্বল সম্পর্কে বেশ ভালো জানাশোনা ব্যক্তিরা বলেছেন, উজ্জ্বল পুরোনো ব্যবসায়ী। এক সময়ে গাবতলি হাট থেকে গরু কিনতেন। সেখানের পাইকাররা উজ্জ্বলের কাছে ৩০ লাখ টাকা পাবেন। দেনার দায়ে ছেড়েছেন গাবতলির হাট। এখন কুষ্টিয়ার এক পাইকারকে ম্যানেজ করে তার কাছ থেকে গরু আনেন। ওই মহাজনও ২০ লাখ টাকা পাবেন উজ্জ্বলের কাছে। তবে যেহেতু গড়ে ৭-৮টি গরু জবাই করেন উজ্জ্বল সে ক্ষেত্রে গরু প্রতি ৩ হাজার টাকা লাভ করলেও মাসে ওই ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকারও বেশি আয় করেন। সেক্ষেত্রে উজ্জ্বল কিছু টাকা চিরদিনের জন্য বাকি রাখলেও মহাজন তাতে লস দেখছেন না।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উজ্জ্বল তার লোকজনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় জবাই করা গরুর চর্বি ৭০ টাকা করে কিনে আনেন। যা তার দোকানে ৫৯৫ টাকার গোশতের সাথে মিশ্রণ করে বিক্রি করেন।
এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে শাহজাহানপুর আলোচিত খলিলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ১শ’ টাকা বাড়িয়ে ৬৯৫ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে তার দোকানের গরুর গোশত। লাইন তখনো লেগে আছে। দোকানের পাশেই কয়েকটি গরু বাঁধা। যা জবাইয়ের অপেক্ষায়। তার দোকানটি এমনভাবে ডেকোরেশন রয়েছে, ভেতরের একটি অংশ থেকে প্রস্তুত করা গোশত আসছে। তার পাশেই কর্ণারে স্তুপ করা চর্বি। আবার দোকানের নিচেও ফ্লোরে পলিথিনে রয়েছে চর্বি বোঝাই। সাধারণের চোখে সেটি পড়ার কথা নয়। যেখান থেকে গোশত ভরা হচ্ছে, ওই কর্মচারীকে প্রায়ই আড়াল করে রাখে খলিল সিন্ডিকেটের অন্যরা।

খলিল সম্পর্কে জানা যায়, খলিল বহুরূপী। তার চরিত্র বোঝা দায়। এর আগে সবাই যখন সাড়ে ৭শ’ টাকায় গরুর গোশত বিক্রি করছে তখন সে ৮শ’ টাকা কেজিতে গরুর গোশত বিক্রি করেছে। তখন ১-২টি গরু জবাই করতো। বর্তমানে তৈয়ব নামে এক পাইকারের কাছ থেকে গরু কিনেন। ৫৯৫ টাকায় গোশত বিক্রি করে আলোচিত হলে তিনি তখন বলেছিলেন, ওই দামে বিক্রি করেও তিনি সামান্য লাভ করেন। যেহেতু বেশি গরু বিক্রি হয় তাই পুষিয়ে যায়। তবে সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গত বৃহস্পতিবার তিনি ভোল পাল্টেন। কেজি প্রতি ১শ’ টাকা বাড়িয়ে দেন।

খলিলের দোকানের কয়েক গজের মধ্যেই প্রধান সড়কে রয়েছে হালাল মিট নামে অপর একটি গরুর গোশতের দোকান। ওই দোকানি জানান, তিনি দৈনিক ৩-৪টি করে গরু জবাই করেন। খলিলের অল্প টাকায় বিক্রির কারণে তার ক্রেতা কম কিনা জানতে চাইলে ওই দোকানি বলেন, সস্তা জিনিস কখনোই ভাল হয়না। এটা জ্ঞানীরাই বোঝেন। তিনি খলিলের দোকানের ইঙ্গিত করে বলেন, ওইখান থেকে ২ কেজি গরুর গোশত নিন আর যারা ঝুলিয়ে বিক্রি করেন তাদের কাছ থেকে একই পরিমাণ গোশত কিনুন। দুটোই আলাদা আলাদা পাত্রে রাখুন। তফাৎটা পরিষ্কার হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে গরু কিংবা পশুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সিন্ডিকেট ভাংতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮

পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮

জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার

জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার

নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার

নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার

বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি

বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি

নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল

নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল

নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং

নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং

পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে

পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে

পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে

পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে

৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে

৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে

সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা

সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে

৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান

৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ

জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে

জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে

রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা

গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়