ঈদের আগেই ফিরবেন প্রত্যাশা স্বজনদের
২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
‘সর্বশেষ যখন কথা হয়, ছেলে বলেছে তারা ভালো আছে। খাবার, পানি নিয়ে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। নৌদস্যুরা তাদের সাথে খারাপ কিছু করছে না। মালিক পক্ষ যোগাযোগ করছে। আশা করি ঈদের আগেই আমরা ছাড়া পাবো, আমরাও চাই তারা খুব শিগগির ফিরে আসুক। আমরা এক সাথে ঈদ উদযাপন করি। এভাবে নিজের ছেলেকে ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জোৎন্সা বেগম।
গতকাল তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমরা তার প্রত্যাশায় আছি। জাহাজের মালিক পক্ষও আমাদের আশ^াস দিয়েছেন খুব কম সময়ে তারা ফিরে আসবে। সোমালিয়া নৌদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ওই জাহাজে থাকা অন্য ২২ নাবিকের পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদেরও প্রত্যাশা তারা খুব কম সময়ের মধ্যে মুক্তি পাবেন, অক্ষত অবস্থায় দেশে ফিরবেন। ভারত মহাসাগর থেকে অস্ত্রের মুখে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে গত ১২ মার্চ। ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহর জিম্মিদশার ১৬দিন পার হচ্ছে আজ। এর মধ্যে জাহাজ ছিনতাইকারী সোমালি দস্যুরা জাহাজ মালিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের তরফে বলা হচ্ছে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে কবে নাগাদ তাদের মুুক্ত করে আনা যাবে সেটাই এখন প্রশ্ন।
ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা বলেন, জাহাজে মালিক পক্ষ আমাদের বলেছে, আগেও জাহান মণি নামে তাদের একটি জাহাজ ছিনতাই হয়েছিল। ওই জাহাজ যেভাবে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় সেভাবেই এমভি আবদুল্লাহকে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। ১৩ বছর আগে একই মালিকের অপর একটি জাহাজ এমভি জাহান মণি সোমলি দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়। দস্যুকবলিত ওই জাহাজে আটকা ছিলেন ২৫ নাবিকসহ ২৬ জন। মুক্তিপণ দিয়ে তাদের জিম্মিদশা থেকে ফিরিয়ে আনতে সময় লেগেছিল ১০০দিন।
সেই অভিজ্ঞতায় এবার আরো কম সময়ের মধ্যে তাদের ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন মালিক পক্ষের কর্মকর্তারা। মালিক পক্ষের তরফে সোমালি নৌদস্যুদের সাথে তাদের আলোচনা যথেষ্ট এগিয়ে বলেছেও বলা হয়েছে। তবে মুক্তিপণের অংক এবং কারা কারা এই আলোচনা প্রক্রিয়ার সাথে আছে তাও বলা হচ্ছে না। তারা বলছেন, দ্রুত সময়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যাবে। গত শনিবার ২৩ নাবিকের পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতার আয়োজনেও এমন আশ^াস দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাবিকদের স্বজনেরা।
জিম্মি জাহাজটি এখন সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড প্রদেশের নুগাল অঞ্চলের জিফল উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙ্গর করে আছে। এর অদূরেই ইউরোপিয় ইউনিয়নের আটলান্টা অপারেশনের একটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন রয়েছে। আরো দূরে আছে ভারতীয় নৌবাহিনীর টহল জাহাজ। পান্টল্যান্ড প্রদেশের পুুলিশ এবং ইইউ নেভির জাহাজের পাহাড়ায় দস্যুরা চাপে আছে। আর এই কারণে নাবিকদের মুক্তি ত্বরান্বিত হতে পারে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মেরিনারেরা। তারা বলছেন, জিম্মি মুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নৌদস্যুদের সাথে নিয়মিত আলোচনা এবং মুক্তির বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ করে মুক্তিপণের বিষয়টি সুরাহা করা। আর সেটাই এখন করা হচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার আর জাহাজটির মালিক পক্ষ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সামরিক অভিযানে সম্মতি না দেয়ায় ইইউর জাহাজ দূরে অবস্থান করছে। তাদের হেলিকপ্টার মাঝে মাধ্যে এমভি আবদুল্লাহর উপর চক্কর দিচ্ছে। জাহাজে দস্যুরা তাদের অস্ত্রশস্ত্র আরো বাড়িয়েছে। ইইউর যুদ্ধ জাহাজ কিছুটা দূরে সরে যাওয়ায় জিম্মিদের উপর কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
নাবিকদের আগের মতো ২৪ ঘণ্টায় ব্রিজে না রেখে তাদের কেবিনে থাকার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। জাহাজে তারা জরুরি রুটিন কাজও করার সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষ করে ইঞ্জিন রুমের স্বাভাবিক কাজ করা যাচ্ছে। তাতে জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিরাপদে আছে। অগ্নিঝুঁকি থেকেও জাহাজটি নিরাপদে আছে। নাবিকদের খাবার আর পানির রেশনিং চলছে। খাবার বলতে ইফতারে ছোলা, পিঁয়াজু, শরবত আর সেহেরিতে মাছ ও গোশত দিয়ে ভাত খাওয়া যাচ্ছে। পুরো সপ্তাহে দুইবার গোসল আর কাপড় ধোয়ার সুযোগ পাচ্ছেন নাবিকেরা। জাহাজে ২৫ জনের মতো দস্যু আছে। স্থানীয়ভাবে তারা তাদের খাবার সংগ্রহ করছে। কোন কারণে বাহির থেকে খাবার আসতে দেরি হলে তারা জাহাজ থেকে খাবার খাচ্ছে।
জাহাজে জিম্মি নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চীফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চীফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. করিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৩ বছর পর লক্ষ্মীপুরে ৫টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহন চলছে
কম্বোডিয়ায় সামরিক ঘাঁটিতে অস্ত্রাগারে বিস্ফোরণ : নিহত ২০
আট জেলার ১৯ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট চলছে
আগামীদিনে ঘোরাঘুরির উপযুক্ত থাকবে না বিশ্বের একাধিক জায়গা, এমআইটির রিপোর্ট
হুথিদের হামলায় আরো এক মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত
ফ্রান্সে খাদ্য হিসেবে বাড়ছে শামুকের কদর
অস্ট্রেলিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ২
সিলেটে ট্রাকের ধাক্কায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট, শুরু চরম জনদুর্ভোগ
লাদাখের পর এবার সিয়াচেন নিয়ে উত্তেজনা!
পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলো ভারত
জোড়া গোলে নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন কেইন
বনানীতে বাসে আগুন: মোটরসাইকেলচালকের মৃত্যু
ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: একে একে পরিবারের সবার মৃত্যু
ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারে হুথিদের সরাসরি হামলা
জানা গেল এসএসসির ফল প্রকাশ কবে হতে পারে
বরিশালে ‘হিট স্ট্রোকে’ আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
জনপ্রিয় টিকটক তারকাকে গুলি করে হত্যা
ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে ধস, তথ্য সংগ্রহ করছে যুক্তরাষ্ট্র
এসটিপি ছাড়া নতুন বিল্ডিং করার অনুমোদন নয় : গণপূর্ত মন্ত্রী