ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে ভারতের পানি আগ্রাসন

কপোতাক্ষ ইছামতিসহ ২৭ নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে

Daily Inqilab ইনকিলাব রিপোর্ট

০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৫ এএম

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে মরণ দশায় পড়েছে দেশের শত শত নদ-নদী। উজানের পানি প্রবাহ কম হওয়ায় কোনো নদী শুকিয়ে গেছে, কোনোটার পানি প্রবাহ তলানিতে পড়েছে। পদ্মার উজানে ফারাক্কা এবং তিস্তার উজানে গজলডোবা বাধ দিয়ে ভারত একতরফা পানি উঠিয়ে নেয়ায় ভয়াবহ এ অবস্থা পড়েছে বাংলাদেশের নদ-নদী। ভারতের পানি আগ্রাসনে দেশের মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে অসংখ্য নদ-নদী। অন্যদিকে উপকুলের কাছাকাছি নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেন ভারত নদীতে বাধ দিয়ে পানি উঠিয়ে নেয়ায় দেশের নদ-নদীর পানির প্রবাহ চৈত্র মাসে স্বাভাবিক মাত্রায় নেই। নদীতে প্রবাহ কম হওয়ায় সমুদ্রের লোনা পানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসছে। এতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে এবং কৃষিকাজে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ফসলি জমি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগনের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্ছিত শুধু করেনি। বাংলাদেশের নদীগুলোকেও মরণ দশায় ফেলেছে। মিঠা পানি তথা নদী মার্তৃক বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার উপরিভাগ ও ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততা বাড়ানোর পথে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। উজান থেকে প্রবাহিত পানির প্রবাহ কম থাকায় উপকূলীয় নদ-নদী ভরাট হয়ে জোয়ারের সময় বাঁধ উপচে পড়ছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি চলে আসছে কৃষিজমিতে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিজমির স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা।

ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ফলে সারাদেশের নদ-নদীর বর্তমান মরণ দশা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন বেশ কয়েকটি পর্বে ছাপা হচ্ছে। আজ ছাপা হচ্ছে সাতক্ষীরা ও মানিকগঞ্জ এলাকার প্রতিবেদন।
সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, ভারতীয় পানি অগ্রাসন ও দখল দূষণের ফলে এ এলাকার ২৭টি নদ-নদী ও ৪২৯ টি খাল এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। এসব নদী ও খালের উপর নির্মিত ২২০টি স্লূইচ গেটের অধিকাংশই নষ্ট ও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। জোয়ার ভাটা না থাকায় জেলার সকল নদ-নদী ও খাল পলিমাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। যদিও শত শত কোটি টাকা খরচ করে কয়েকটি নদী ও খাল খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু জায়গায় খনন কাজ চলমান। কিন্তু তাতেও ফিরছে না নদীর প্রাণ।

সাতক্ষীরার যে ২৭টি নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে তাদের মধ্যে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ, বেতনা, মরিচ্চাপ, খোলপেটুয়া,যমুনা, লাবন্যবতী, ককশিয়ালী, কালিন্দী, সীমান্ত নদী ইছামতী, সুন্দরবনের রায়মঙ্গল ইত্যাদি।

পলি মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদ-নদী ও খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এসব নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে লোনা পানি তুলে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে একাধিক ইটভাটা। গড়ে উঠেছে দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শুঁটকি মাছের কারখানা, গোডাউন, ঘর-বাড়ি। নদী ও খাল দখলের যেনো প্রতিযোগিতা চলছে সাতক্ষীরায়। নদী-খাল ভরাট করে দখল হওয়ায় বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসময় বসত ঘর ফেলে রেখে অনেক পরিবার দূরে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, পলি মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের অবস্থানে নেই নদী-খালগুলো। তারপরও এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেয়ে চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, ৪৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এই খনন কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে জ. ই. আকাশ জানান, এ জেলার হরিরামপুর উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত ইছামতীর শাখা নদীর মাঝ দিয়ে একাধিক স্থায়ী বাধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এটি মৃত প্রায়। নদীর মাঝ দিয়ে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণে জলাবদ্ধতায় কচুরি পানা পচে পানি দূষণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার মানুষ। দখল, দূষণ আর অবহেলায় ইছামতীর এই শাখা নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি সহ সংকট দেখা দিয়েছে মিঠা পানির মাছের।

জানা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীটি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ভাঙাবাড়িয়া এলাকার কালিগঙ্গা থেকে হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর, বহুলাতুলি, কাণ্ঠাপাড়া হয়ে চালা ইউনিয়নের পূর্বখলিলপুর, পশ্চিম খলিলপুর, বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর, আন্ধারমানিক, দড়িকান্দি ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পিয়াজচর ও বাহিরচর হয়ে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালের দিকে পদ্মার তীব্র ভাঙন রোধে এই ইছামতীর নদীর ওপর দিয়ে বাহিরচর বাজার সংলগ্ন বালুচর এলাকায় নদীর দুইপাড় ভরাট করে একটি সরু কালভার্ট ব্রীজ নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই নদীর গতিপথ রোধ করা হয়। এরপর দড়িকান্দি ও বাহিরচর পশ্চিমপাড়া এলাকায় নদীর মাঝ দিয়ে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আন্ধারমানিক এলাকায় বর্তমান লেছড়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নদীর মাঝ দিয়ে আরও একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও কাণ্ঠাপাড়া-পশ্চিম খলিলপুর সংযোগে নদীর প্রস্থ কমিয়ে একটি সøুইস গেট নির্মাণ ও পূর্ব খলিলপুর-বহলাতুলী সংযোগস্থলে নদীর দুইপাশ ভরাট করে মাঝখানে প্রায় পনের ফিট দৈর্ঘ্য একটি কালভার্ট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে হরিরামপুর উপজেলার বাহিরচর পশ্চিমপাড়া থেকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাঙাবাড়িয়া এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর প্রবেশ মুখ পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটারের অধিক এলাকা নিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই ইছামতীর শাখা নদী।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা

বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা