পতাকা বৈঠকেই আটকা বিজিবি
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যাকাণ্ড একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিএসএফকে বলা হয় ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বাহিনী। তারা নিরস্ত্র, সীমান্তবর্তী বাংলাদেশী নাগরিকদের দিকে রাইফেলের ট্রিগার টিপতে পারলেই আনন্দিত হয়। বিএসএফ আসলে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদেরকে গুলি ছোড়ার অনুশীলনের জন্য টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করতেই পছন্দ করে থাকে! এক সপ্তাহ আগে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুই রাখালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ রয়েছে বিএসএফয়ের বিরুদ্ধে। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। এ ঘটনার পর ওই সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত সোমবার ১৫ এপ্রিল ভোরে উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া সীমান্ত পিলারের কাছে থেকে আমিনুর রহমান নামে এক যুবককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। আমিনুর রহমান ওই এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে। দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশীদের গুলি করা এবং ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরেও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি অনেকটাই নিরব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা সময়ে বিজিবি ও বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার কথাও বলেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত; কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই চোখে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশীদের নির্মমভাবে হত্যা ও নির্যাতন করছে। অন্যদিকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি বিএসএফয়ের সাথে পতাকা বৈঠক বা চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে।
মানবাধিকার কর্মী ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে যতটা জোরালো প্রতিবাদ জানানোর রেওয়াজ ছিল, এখন সেটা ততটা জোরালো নয়। অনেকে হয়রানির ভয়ে বিএসএফের নির্যাতনের কথা স্বীকার করছেন না। আন্তজাতিক আইনেরও তোয়াক্কা করছে না বিএসএফ। ফলে বাংলাদেশীদের হত্যা বা নির্যাতনে বিএসএফ এখন বেপরোয়া। সীমান্তে চোরাকারবারিদের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সখ্যতা দীর্ঘ দিনের। চোরাকারবারিদের সঙ্গে দুই দেশের কিছু অসাধু সীমান্তরক্ষীদের ঘনিষ্ঠ যোগসাজশ রয়েছে। ফলে নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চোরকারবারিরা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিহত বাংলাদেশিরা মূলত রাখাল ও গরু চোরাকারবারি।
বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মইনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সীমান্তে কোনো নাগরিককে হত্যার অধিকার কারও নেই। এটা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামাতে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে হবে। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বিজিবির হাতেও অস্ত্র রয়েছে। সীমান্তে শান্তি রক্ষায় বিজিবিকে অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় কথা ছিল সীমান্তে প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি যাতে রক্ষা করা হয় সেটা নিয়মিত ফলোআপ করা দরকার। দেশ পাহারা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। দেশপ্রেম নিয়েই সেটা করে যেতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুই রাখালকে লক্ষ্য করে গুলি করে বিএসএফ। কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর খামারভাতি এলাকার ৯১৩ নম্বর মেইন পিলার সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বাংলাদেশি দুই রাখাল হলেন- উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের খামারভাতি গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক (২৮) ও একই এলাকার বাবর আলীর ছেলে ইন্টু মিয়া। স্থানীয়রা জানান, ওই দিন দুপুরে বাংলাদেশ সীমান্তের জমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এনামুল হক ও ইন্দু মিয়া। এ সময় হঠাৎ করেই বিএসএফের এক সদস্য তাদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ওই বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। দুই যুবক তাৎক্ষণিক সরে গেলে তাদের শরীরে কোনো গুলি লাগেনি। এ ঘটনার পর থেকেই খামারভাতি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এ ঘটনায় বিজিবির কোন উদ্যোগ বা প্রতিবাদ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী রাখালদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশি রাখালদের ধাওয়া করেন। এমনকি অনেক সময় আটকে মারধর করেন। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে গেলে বিএসএফ বাঁধা দেয়। পরে বিএসএফ ধাওয়া করলেও পালিয়ে আসার সময় তাদের লক্ষ্য করে বিএসএফ গুলি চালায়। যদিও ওই গুলিতে কেউ আহত হয়নি। তারা দুজনেই ভালো আছেন।
গত ১৫ এপ্রিল সোমবার ভোরে উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া সীমান্ত পিলারের কাছে থেকে আমিনুর রহমান নামে ওই যুবককে ধরে নিয়ে যায়। আমিনুর রহমান ওই এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। স্থানীয়রা জানায়, ভোরে আমিনুর রহমানসহ কয়েকজন ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। ফেরার পথে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা থানার বারোঘরিয়া এলাকার বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। পরে আমিনুর রহমানের সহযোগীরা পালাতে সক্ষম হলেও তাকে আটক করে নিয়ে যায় বিএসএফ। তাকে গতকাল পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয়নি।
তিস্তা ব্যাটালিয়ন-২(৬১ বিজিবি)›র অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশী যুবক আমিনুর রহমান ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে ভারতের স্থানীয় পুলিশ মামলা করেছে। ভারতের আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবে বিএসএফ। আমরা বিএসএফয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি যাতে তাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জোড়া গোলে মিউনিখে বায়ার্নকে রুখে দিলেন ভিনিসিয়ুস
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!
ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস
পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫
সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ
সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ
পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান
রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত
অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?
পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!
জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের
২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি
কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত
বহির্বিশ্বে মিলল প্রাণের সন্ধান!
মোদির ভারতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মুসলিমদের