ইরান-ইসরাইল সংঘাতে নতুন সংকটে পোশাক শিল্প

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম

চলমান লোহিত সাগর সংকট ও গাজা যুদ্ধের কারণে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পোশাক রপ্তানি নতুন করে উদ্বেগের মুখে পড়েছে। দেশের গ্রার্মেন্টস ব্যবসায়ীর (পোশাক রপ্তানিকারক) আশঙ্কা করছেন ব্যবসার খরচ আরো বাড়বে। কারণ, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তেলের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, লোহিত সাগর সংকটের কারণে বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানিকারকদের কম দাম দিয়ে জাহাজ পরিচালনার খরচ তুলে নিচ্ছে।
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত রোববার ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণে বিদেশি ক্রেতারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পণ্য সরবরাহ করতে বলেছেন। কেননা, গত অক্টোবরে লোহিত সাগর সংকটের পর পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, সুয়েজ খালের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী লোহিত সাগরে সংকট বৈশ্বিক উত্তেজনার কেন্দ্র হিসেবে দেখা দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বন্দরে পণ্য পাঠাতে সাধারণত ৩০ দিন লাগত। সেই নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলো লক্ষ্য করে হুতিদের হামলার কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ ঘুরে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ঘুরে যাওয়ার কারণে পণ্য সরবরাহে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হচ্ছে এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এই সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা এড়াতে কিছু পণ্যের কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক বা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে। কার্যাদেশ কমে যাওয়ার এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটলো যখন বাংলাদেশের আয়ের সবচেয়ে বড় খাতটি করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মারাত্মক বিপর্যয় থেকে ঘুরে দ্বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
জানতে চাইলে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ গণমাধ্যমকে বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাছাকাছি জায়গা (দেশ) থেকে পণ্য নেওয়া হচ্ছে। এসব কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও অনেক ক্রেতা তুরস্ককে দিচ্ছেন। কারণ সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ক্রেতাদের জন্য জরুরি।
বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এক সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বলে কম সময়ের মধ্যে পণ্য বাজারে আনার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম কমে যায়। এটি শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমিয়ে দেয়।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ চলাচলের খরচ বহন করে তবু অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রপ্তানিকারকদের ওপর খরচ চাপিয়ে দেন। ৯৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে ক্রেতারা ফ্রেইট অন বোর্ড পদ্ধতিতে পণ্য কেনায় জাহাজের খরচ দিয়ে থাকেন। রপ্তানিকারকরা পাঁচ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ দেন। তবে ক্রেতারা যেকোনো অতিরিক্ত খরচ রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দেন।
গার্মেন্টস মালিকদের আশঙ্কা ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বাড়লে তা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে। তেলের দাম বাড়লে জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। এটি উৎপাদন ও পণ্য পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তুলবে।
দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্য সংকট চললে সউদী আরব, কুয়েত, ইরাক ও ইরানের মতো উদীয়মান বাজারগুলোয় পোশাক বিক্রি ততটা সহজ হবে না যতটা অনেকে আশা করছিলেন।
বিজিএমইএ›র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, লোহিত সাগর সংকট শুরুর পর ঢাকা থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে গেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে তা আরও বাড়তে পারে।
ঢাকা থেকে ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোয় এক কেজি পণ্য পরিবহনে এয়ারলাইনসগুলো আড়াই ডলারের বেশি চার্জ করে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একই গন্তব্যে ৩০ মার্কিন সেন্টের চেয়ে বেশি দরকার হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা

বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া

ওয়ালটন ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া

জোড়া গোলে মিউনিখে বায়ার্নকে রুখে দিলেন ভিনিসিয়ুস

জোড়া গোলে মিউনিখে বায়ার্নকে রুখে দিলেন ভিনিসিয়ুস

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উড়ল ফিলিস্তিনের ঝান্ডা!

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

ক্যাডবারি চকোলেটের ওপর মিলল ফাঙ্গাস

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

পেরুতে ৬৫০ ফুট গভীর খাদে পড়ল বাস, হতাহত ৪৫

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে জাপানের কড়াকড়ি : চীনের উদ্বেগ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

সিনচিয়াংয়ের মরুভূমিতে চলছে ধানচাষ

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার বানাল ইরান

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

রুকু থেকে উঠার সময় ‘সামিআললাহু লীমান হামিদাহ’ বলা প্রসঙ্গে।

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে আসামি ধরতে গিয়ে গুলিতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

ইন্দোনেশিয়ায় ফের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

জার্মানিতে ৬ বছরের নিখোঁজ শিশুর সন্ধানে ১,২০০ জন

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ‘প্রত্যাখ্যান’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ কি বৈধ?

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিল ‘র’ অফিসার!

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান প্রেসিডেন্টের

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

২০৩০ সাল নাগাদ চীনে বাণিজ্যিকভাবে আসবে ৬-জি

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৯ সেনা নিহত