বহুমুখী ঝুঁকিতে অর্থনীতি
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ এএম
উচ্চ মূল্যস্ফিতী, নগদ টাকা ও ডলারের সঙ্কট। ডলারের অভাবে জ¦ালানি তেল আমদানির ব্যয় মেটানোর সামর্থ্যরে অভাব। জনজীবন এবং শিল্প-কারখানা সচল রাখার জন্য চাহিদা অনুপাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস, কয়লা ও জ¦ালানি তেল আমদানির খরচ, বকেয়া বিল পাওনা মেটাতে নগদ টাকা ও ডলারের অভাব। নগদ টাকা ও ডলারের ঘাটতি বা সঙ্কট প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। আমদানি ও রফতানি প্রবাহ হ্রাসের ফলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে নেই কন্টেইনার কিংবা কার্গোজট। জাহাজের জটও নেই। নেই আমদানি-রফতানিকারকদের ব্যস্ততা। যা আগের বছরগুলোতে ছিল দৃশ্যমান। তার ওপর ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে যাওয়ায় সারা দেশে উচ্চ তাপপ্রবাহ, টানা খরা-অনাবৃষ্টির বৈরী আবহাওয়ার কবলে হ্রাস পাচ্ছে মানুষের কর্মক্ষমতা। এর ফলে বোরো-ইরির আবাদ-উৎপাদন, আম-লিচুর ফলন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায় থেকে শহর-নগর-শিল্পাঞ্চলে মানবসম্পদের গড় উৎপাদনশীলতা হ্রাস অথচ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘন ঘন লোডশেডিং যন্ত্রণা। আর দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের মূল্য। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সঙ্কটে ফেলছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশীয় সামষ্টিক অর্থনীতিতে চলমান সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে শিপিং খরচসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়বে। এরফলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হলে তা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানি বিল বাড়ানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে। সরকার বেশি দামে জ্বালানি আমদানিতে ব্যর্থ হলে লোডশেডিং ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়তে পারে। বিশেষ করে পোশাক রপ্তানি নতুন করে উদ্বেগের মুখে পড়েছে। স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন-ব্যবসার খরচ আরও বাড়বে। কারণ, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তেলের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া কারখানাগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারলে আরও অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ দীর্ঘদিন থেকে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে এই সময়ে ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার কথা শিল্প কারখানাগুলোর। অথচ ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে শিল্প কারখানা। গতকালও শ্রমিকদের না জানিয়েই ঈদের ছুটির মধ্যে কারখানা লে-অফের নোটিশ দিয়েছে গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা গ্রামের বাড়ি যান, ঈদ শেষে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরে দেখেন কারখানা বন্ধের নোটিশ।
দেশে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে সর্বস্তরে পুষ্টিহীনতা সমস্যা হচ্ছে প্রকটতর। কর্মসংস্থনের ক্ষেত্র ও সুযোগ-সম্ভাবনা অন্ধকারে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, অশিক্ষিত ও অর্ধ-দক্ষ কোটি যুবা-তরুণ বেকারত্বে হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকার তথা প্রশাসনিক ব্যয়ের বোঝা ক্রমাগত বাড়লেও, সেই তুলনায় বাড়ছে না গড় উৎপাদনশীলতা তথা জনকল্যাণে অবদান, সেবাখাতের দক্ষতা। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সীমিত আয়ের মানুষ। সমাজের টপ টু বটম সম্পদ ও আয়বৈষম্য ও ব্যবধান ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির প্রধান সূচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমতির দিকে। অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের সর্বনিম্ন ধারায় চলছে। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ’ প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। একই সঙ্গে চলতি বছর মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে মূল্যস্ফীতি আগের মাসে কমার পর ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ক্রমাগত ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক আগেই দেশের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতিতে অন্তত ৫টি চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি, সমস্যা-সঙ্কট চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হচ্ছেÑ জ¦ালানি স্বল্পতা ও ক্রয়ক্ষমতার আর্থিক ঘাটটি, মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও বেকারত্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে যে গতিতে আগাচ্ছিল তাতে বর্তমানে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ন্যূনতম দুই অঙ্কে থাকার কথা। অথচ গত কয়েক বছর ডলার সঙ্কট নিরসনে আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষতঃ মূলধনি সামগ্রীর আমদানি কমিয়ে অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্পে কাঁচামাল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বন্ধ করায় নতুন শিল্প কারখানা গড়েতো উঠেইনি বরং কাঁচামাল সঙ্কটে অন্যান্য উৎপদনশীলখাতও বন্ধের পথে। এতে স্বল্প মেয়াদে প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে সঙ্কটের মুখে ফেলে দিয়েছে।
চলমান অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এটা খুবই উদ্বেগজনক। অর্থনীতির সার্বিক গতি হ্রাস বা মন্থর হয়ে পড়া নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে। দেখা যাক অর্থমন্ত্রী কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের একীভূতকরণ কোন টেকসই বা সুষ্ঠু সমাধান নয়। বরং এর মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের শাস্তির আওতায় আনার পরিবর্তে বৈধতা ও অবমুক্তি দেয়া হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। উচ্চ তাপপ্রবাহের বৈরী আবহাওয়ায় মানুষের গড় উৎপাদন, কর্মক্ষমতা কমছেÑ এটা ঠিক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়াগত সমস্যা তো স্বাভাবিক, যা এড়ানোর উপায় নেই।
“এতো বিদ্যুৎ গেলো কই?”
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে গেল দুই বছর লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। এবারও গ্রীষ্মকাল আসার আগে গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকেই শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং যন্ত্রণা। এ অবস্থায় এখানে সেখানে আলাপে-আড্ডায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ লোকজন ক্ষোভ-অসন্তোষের সাথেই জানতে চায়Ñ ‘সরকারের এতো বিদ্যুৎ গেলো কই?’ গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎসহ সমগ্র জ¦ালানি খাতের চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পায়। দেশে সাধারণত মার্চ মাস থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। মাঝখানে বর্ষায় জুন-জুলাইয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা হয় এপ্রিল-মে মাসে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাত, উপখাতে বহুমুখী সমস্যা-সঙ্কট বিশেষ করে নগদ টাকা ও ডলার সঙ্কটের মধ্যেই চলতি বছর বোরো-ইরি সেচ মওসুম এবং বৈশাখ মাস দিয়ে সদ্য শুরু হওয়া ভরা গ্রীষ্মকালকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের সময় এখন। সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গত দুই বছরের গ্রীষ্ম মওসুমের চেয়েও এবার ভয়াবহ লোডশেডিং বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার আলামত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে এতোদিন মার্কেট বন্ধ ছিল ও কারখানা বন্ধ ছিল বিদ্যুতের চাহিদা তেমন ছিল না। ঈদের ছুটির পর হঠাৎ করে একসঙ্গে সবকিছু চালু হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে তাপমাত্রার পারদ বাড়ায় সারা দেশে উচ্চ তাপপ্রবাহে বাসা-বাড়িতেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।
রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ফাল্গুন-চৈত্র মাস থেকেই লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম-জনপদের অবস্থা এখনই নাজুক। মূলত নগদ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার উভয়েরই সঙ্কটে ক্রমাগত নিপতিত বিদ্যুৎ খাত। এতে করে এ বছরও ঘন ঘন এবং দিন দিন বর্ধিত মাত্রায় লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে জনজীবন ও বিদ্যুৎ-নির্ভর ক্ষুদ্রশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উৎপাদনব্যবস্থা। নিত্যপণ্যের দামেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়য়, এ বছর গ্রীষ্মকালীন পিক আওয়ারে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট সর্বোচ্চ চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে। তার বিপরীতে দৈনিক ১৭ হাজার ৩০০ মে.ও. বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করছে আমদানিকৃত গ্যাস, কয়লা ও জ¦ালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন এবং পর্যাপ্ত সরবরাহের উপর। যা সরকার ডলার সঙ্কটের কারণে নিশ্চিত করতে পারছে না। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত জ¦ালানি আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
দেশে গতবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। এবারও উৎপাদন সক্ষমতার বৃহৎ অংশ অলস বসিয়ে রাখতে হবে নগদ টাকা-ডলার সঙ্কট ও জ্বালানি আমদানির অভাবে। গত বছর ২৫ শতাংশ সক্ষমতা অলস বসে ছিল পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়েও। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত বন্ধ রাখা হয় আরো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সক্ষমতা।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকুক বা বন্ধ থাকুক, চুক্তি অনুসারে সব কেন্দ্রকে ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ‘ক্যাপাসিটি চার্জে’র নামে। গত অর্থবছরে পিডিবি ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধ বাবদ। এ বছর তা আরও বেড়ে যাবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলেছে, গত বছর ৪১ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা অলস বসে ছিল। এ বছরও বিদ্যুতে উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক অলস বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না।
পিডিবি সূত্র বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেলের (ডিজেল, ফার্নেস অয়েল) সরবরাহে অনিশ্চয়তা কাটেনি। চাহিদামতো জ্বালানি না পাওয়ায় গত দুই বছর গ্রীষ্মকালে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ। এর প্রধান কারণ ডলার সঙ্কট। এবার তা আরও প্রকট।
কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় উৎস গ্যাস। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ২৩২ কোটি ঘনফুট। গত বছর সর্বোচ্চ ১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৫ কোটি ঘনফুট। এবার গ্রীষ্মকালে দৈনিক অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চায় পিডিবি। তবে গ্যাস সরবরাহ গত বছরের চেয়ে বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। এবার গ্যাসভিত্তিক সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার মে.ও. বিদ্যুৎ মিলতে পারে। অথচ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মে.ও.।
তাছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের বকেয়া পাওনার কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন থমকে যেতে পারে। প্রায় সব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই বিল বকেয়া। পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাসিক বিল গড়ে ৮ থেকে ৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে অনিয়মিত বিল পরিশোধের কারণে তাদের বিল বকেয়া পড়েছে ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, কম বিনিয়োগ এবং আমদানি বিধিনিষেধ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে উৎপাদন ও সেবা খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির পেছনে বাইরের কারণের চেয়ে দেশীয় কারণই বেশি দায়ী। তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে। ফলে জনগণের আয়ের সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে আমদানি আরও কঠিন হয়ে পড়ায় উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। যন্ত্রপাতি আমদানি করতে না পারলে উৎপাদনের গতি ধরে রাখা কঠিন। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের উৎপাদন খাত রপ্তানিমুখী এবং অভ্যন্তরীণ-উভয়মুখী। তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় চাহিদার অভাবে দেশীয় বাজারে উৎপাদন কমেছে। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সামগ্রিক পতনের পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন: সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, আমদানি বিধিনিষেধ এবং দুর্দশাগ্রস্ত আর্থিক খাত।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা প্রকট হয়ে উঠেছে, যার ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে আমদানি সীমিত করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়ায় এ ধরনের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পান না। পরিবর্তে, ঋণখেলাপিরা ঠিকই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন ড. জাহিদ হোসেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা