সোনার ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক
২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম
দেশের হাওর এলাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পুরোদমে চলছে ধান কাটা ও মাড়াই। সোনার ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব জায়গাতেই ধান কাটার মহোৎসব চলছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগবালাই কম থাকায় ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। যেদিকে দৃষ্টি যায় শুধু ধান আর ধান। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকেই পুরোদমে বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে হাওরের কৃষকরা।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে, হাওরভুক্ত দেশের ৭টি জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, এবং সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে এবার বোরো ধান আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে। এই জেলাগুলোতে হাওরের বাইরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। হাওরের পাকা ধান দ্রুততার সঙ্গে কাটার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাওরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপারে ধান কাটা হচ্ছে।
নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার তলার হাওরের কৃষক মালেক মিয়ার চোখমুখে আনন্দের ছাপ। তিনি বলেন, এবার ৩০০ কাঠা জমিতে বোরো চাষ করেছি। ফলন খুব ভাল হয়েছে। ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুক’লে থাকলে আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সব জমির ধান ঘরে তুলতে পারবো। তলার হাওরের কয়েকজন কৃষক জানান, প্রায়ই আগাম বন্যায় তাদের সব ধান পানিতে ডুবে যায়। তাই এবার শুরুতেই ব্রি-২৮ ধান রোপণ করে ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। শতকরা ৯৫ ভাগ ধান ইতোমধ্যে পেকে যাওয়াতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রকৃতির অবস্থা এখনও ভালো আছে। আরও ১০-১২ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার শতভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে তারা আশাবাদী।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় চলছে ধান কাটার ধুম। বৈশাখের শুরুতে যে জমিগুলোতে ধান পেকেছে সেগুলো কাটার ধুম পড়েছে। বর্তমানে দম ফেলার ফুরসত নেই কৃষক পরিবারগুলোর। হাতে ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুত ধান কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে ধান কাটার আধুনিক যন্ত্র কম্ভাইন্ড হারভেস্টার। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কৃষকরা পরিবার-পরিজন ও দিনমজুর নিয়ে সোনালি ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১২টি উপজেলায় চলছে একযোগে ধান কাটা। কৃষি বিভাগ আশা করছে- আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জেলার সকল হাওরের জমির ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবে কৃষক।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বিশাল হাওরের এখন চারদিকে অবারিত ফলের মাঠ। যে দিকেই চোখ যায় সেখানে ধান আর ধান। পহেলা বৈশাখে এখানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ ভাগ জমির ধান কেটে ফেলেছে কৃষক। হাওরে শ্রমিকের পাশাপাশি হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা চলছে মহা উৎসবে। অন্য জেলার শ্রমিকরা হাওর অঞ্চলে এসে অবস্থান নিয়েছে। এখন পর্যন্ত শ্রমিক সংকট নেই। তবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শ্রমিকের মজুরি। এ নিয়ে দিশেহারা কৃষক। ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নরসিংদী, রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলার শ্রমিকেরা হাওরে ধান কাটতে এসে তাদের থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় প্রতিবছর। রাজশাহীর তানোর উপজেলার শ্রমিক জাহিদ, কাশেম, ফরিদ ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের আকিল, মফিজ, একিন মিয়া নান্দাইল উপজেলার হৃদয় হাসান, শাহেদ আলীর সাথে মজলিশপুর বাজারে কথা হলে তারা বলেন, আমরা প্রতিবছর হাওরে ধান কাঠতে আসি কিন্তু রাত্রি যাপন নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বছর আমরা উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদরাসা, কলেজের বারান্দায় রাত্রিযাপন করতাম কিন্তু এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কারণে তারা বেছে নিয়েছেন হাট-বাজার। কিংবা নিচ্ছেন ঘরভাড়া। নানশ্রী বাঘুয়াখালী গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া, জালালপুর গ্রামের কৃষক আ: হামিদ, দামপাড়া গ্রামের কৃষক রজব আলী, সিংপুর নাগরপুর হাটির নজরুল তারা ইনকিলাবকে বলেন মাঠে শ্রমিক মজুরি ১০০০ হাজার থেকে ১১ শত টাকা। শুস্ক আবহাওয়া থাকায় মাঠে একরকম কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কার আগে কে ধান কেটে ঘরে উঠাতে পারে। গতকাল ২০ এপ্রিল সকাল বেলা সরেজমিনে গেলে টেংগুরিয়া গ্রামের কৃষক মৃত আব্দুল ছোবানের ছেলে মুকশুধুর রহমান শান্তি, আলীয়া পাড়া গ্রামের মৃত গোলাম হোসেনের ছেলে খোকন এবং দামপাড়া কামালপুর গ্রামের মৃত সদর উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কৃষি উপকরণের মূল্যে বৃদ্ধি পাওয়াতে ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি পড়েছে। তারা জানান ৩৫ শতাংশ জমিতে হালচাষে ১২শ’ বীজধান ৬শ’, বীজতলা নির্মাণ ৮শ’, সার ১২শ’, কীটনাশক ৬শ’, নিড়ানি ১২শ’, পানিসেচ ২ হাজার ১শ’, ধানকাটা ৪ হাজার, ধানমাড়াই ১ হাজার, শুকানো ও অন্যান্য ৫শ’, জমি লিজ ৫ হাজার প্রান্তিক চাষিদের মোট খরচ হবে ১৮ হাজার ১শ টাকা। ৩৫ শতাংশ জমিতে ধান হবে সর্বোচ্চ ২৩ থেকে ২৫ মণ। বর্তমানে প্রতিমণ ধানের মূল্য ৯ শ’ টাকা সে হিসাবে ২৩ মণ ধানের দাম হয় ২০ হাজার ৭ শত টাকা। এবার ফলন ভালো হওয়াতে ধান কাটায় কৃষকের মুখে ফুটেছে উৎসবের হাসি। এই বোরো ধানের ওপর কৃষক পরিবার তাদের সারা বছরের সংসার খরচ, ছেলে মেয়েদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল কিছুই নির্বাহ করে থাকে।
উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাখাওয়াত হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর উঁচু এবং নিচু জমিতে ব্রি- ৮৮, ব্রি ৯২, ব্রি ৯৬, ব্রি ২৪ ব্রি বঙ্গবন্ধু ১০০সহ ১৬ প্রজাতির বোর ধান মাঠে চাষ করা হয়েছে। হাওরে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ ভাগ ধান কাটা হয়েছে বাকি জমিগুলো কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ভাবে ধান কাটা শেষ করবে কৃষকেরা। এবার ফলন ভালো হয়েছে। সাধারণ কৃষকেরা বলেন যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তবে এবারের ফসল হবে অন্যান্য বছরের তুলনায় সেরা ফসল। ইতিমধ্যে নিকলীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা করিমগঞ্জ, ইটনা মিঠামইন, অষ্ট্রগ্রাম ও বাজিতপুর হাওরে ধান কাটার ধুম পড়েছে। কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা
জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ
সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ
তাসকিনের শিকার রোহিত
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন
বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।