আমি আর ডামি আগ্রহ নেই ভোটারের
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৬ এএম
গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনেও নেই কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা। অনেকটা আমি আর ডামির এই নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কোন আগ্রহ নেই। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। খোলা মাঠেই নিজেদের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ। একতরফা এই নির্বাচনকে ঘিরে সরকারি দলের বিরোধ আরো বাড়ছে। নেতার বিরুদ্ধে কর্মী আবার কোথাও প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধে দলের সমর্থকেরা প্রার্থী হয়ে গেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে করে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন মন্ত্রী, এমপিদের স্বজনেরাও।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে একতরফা জাতীয় নির্বাচনে ভোটার টানতে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হিসাবে লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। তাতে ভোটারেরা কেন্দ্রে আসেনি, উল্টো দলে বিভক্তি চরমে উঠে। কয়েকটি এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের বিরুদ্ধে সংঘাত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে তিনটি আসনে নৌকা ডুবিয়ে স্বতন্ত্ররা বিজয়ী হয়ে আসেন। ওই তিনটি আসনসহ চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রায় সবকটিতে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্ররা লড়াইয়ে ছিলেন। দলীয় প্রার্থী আর প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় দলের তৃণমূলে যে বিরোধ সৃষ্টি হয় তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে চলমান উপজেলা নির্বাচন।
কখনো ভোটে কখানো বিনা ভোটে টানা চার দফায় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর এই কারণে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলের নেতারা ক্ষমতা উপভোগে ব্যস্ত। রাজনীতি আর ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় দলের সর্বস্তুরের নেতাদের মাঝে গা-ছাড়া ভাব। সংগঠনকে গোছানো কোন তাগিদ নেই। চট্টগ্রাম মহানগর আওমায়ী লীগের সম্মেলন নেই বিগত ১৫ বছর। বার বার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েও দলের হাল ধরে আছেন সাবেক সিটি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনা থেকে শুরু করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরে আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তিনি। তার পরও দলীয় প্রতিপতক্ষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাকে। দলে বিভক্তির কারণে সাংগঠনিক ভিত রচনায় দুর্বলতা রয়েই যাচ্ছে। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগেও চলছে স্থবিরতা। জাতীয় নির্বাচনের পর সংগঠন গোছানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে সাংগঠনিক তৎপরতা ফের স্থগিত করা হয়।
চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ৮ মে। ওইদিন চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলো হলো- সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড। দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। ওইদিন রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে ভোট হবে আগামী ২৯ মে। এইদিন চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। বাকি আছে কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়া উপজেলা। পরবর্তী ধাপে এসব উপজেলার তফসিল ঘোষণা হবে। তফসিল ঘোষণার পর চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় জেলা এবং মহানগরীর নেতারা তাদের সমর্থক নেতাদের উপজেলায় জিতিয়ে আনতে চেষ্টা তদবির শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নির্বাচন নিয়ে দলের মন্ত্রী, এমপিদের ভূমিকা না রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশনা মানছেন না কেউ। যথারীতি এবারও রাউজানে ভোট ছাড়া নির্বাচিত হচ্ছেন চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান। একই অবস্থা পাশের উপজেলা রাঙ্গুনিয়াতেও। ওই দুই এলাকার সংসদ সদস্যের আঙ্গুলি হেলেনে দলের আর কেউ প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি। তাতে সংসদ সদস্যদের অনুগতরাই ঘুরেফিরে উপজেলা পরিষদে থাকছেন।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবেও কাউকে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হচ্ছেন। আর তাতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নেতায় নেতায় বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। মীরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন একাধিক স্থানীয় নেতা।
এভাবে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তরুণ নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও নেতাদের বিরুদ্ধে দলের সমর্থকরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়েছেন। প্রার্থীরা ভোটের মাঠে বিজয়ী হতে যে যার মতো নেতাকর্মীদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ে টেনে নিচ্ছেন। তাতে কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরোধে তৃণমূলে যে বিরোধের সূচনা হয় তা এখন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে।
উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীসহ প্রায় সবকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের বিরোধ রয়েছে। এসব আসনে বিগত নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। তারা তাদের প্রভাব ধরে রাখতে উপজেলায় প্রার্থী দিয়েছেন। আবার সংসদ সদস্যরাও এলাকায় নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে নেপথ্যে থেকে নিজ নিজ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বোয়ালখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বাঁশখালী এবং সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন যথাক্রমে মুজিবুর রহমান ও এম আবদুল মোতালেব। দুজনেই আওয়ামী লীগ নেতা। আর বোয়ালখালীতে দলীয় স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কাকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আবদুচ ছালাম। উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা তাদের পছন্দের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। আবার পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতারাও প্রার্থী দিয়েছেন।
আনোয়ারা কর্ণফুলী আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নতুন মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পাননি। আনোয়ারার সাবেক নেতা মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা ওয়াসিকা আয়শা খানকে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আনোয়ারা এবং কর্ণফুলী উপজেলায় এ দুই নেতার অনুসারীরা এখন মুখোমুখি। তারা এখন পাল্টাপাল্টি শোডাউনে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের দুঃসময়ের কান্ডারী মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ইন্তেকালের পর ওই শূন্য আসনে উপ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। প্রথম দফায় প্রতিমন্ত্রী এবং দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে দক্ষতা ও সততার সাথে ভূমি মন্ত্রণালয় সামলান তিনি। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাব না দিয়ে আলোচনায় আসেন জাবেদ।
এ কারণে তিনি নতুন মন্ত্রীসভায় জায়গায় পাননি বলে প্রচারণায় রয়েছে। তবে লন্ডনে তার যেসব সম্পত্তির তালিকা প্রকাশ হয়েছে তা শতভাগ বৈধ বলে দাবি করেছেন তিনি। এ অবস্থায় তার অনুসারীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন নতুন প্রতিমন্ত্রীর সমর্থকেরা। উপজেলা নির্বাচনে দুই নেতার অনুসারীরা প্রার্থী হচ্ছেন। এ নিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগে বিভক্তি আরও প্রকট হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে না। এ কারণে দলের পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়নও দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটি উপজেলায় যারা নিজেদের যোগ্য মনে করছেন তারাই প্রার্থী হচ্ছেন। এ নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলে বিভক্তি আরও বাড়ছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় দলে কিছুটা ভিন্ন মত থাকে। দলের প্রয়োজনে একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব
আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের
কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও অনুপ্রবেশকারীর দলে জায়গা হবে না-কেন্দ্রীয় যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরল ইসলাম নয়ন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ
বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি