গ্যাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের বৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। বন্ধের এ ঘটনা অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘ ৪১ দিন ধরে। ইউরিয়া সার উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন অনিশ্চয়তায় পড়েছে বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি। গ্যাস সরবরাহ করে কবে নাগাদ সঙ্কট কাটবে এরকম নেই কোন সরকারি উদ্যোগ। এবার নিয়ে চলতি অর্থবছরে দুইদফায় উৎপাদন বন্ধের কবলে পড়লো সার কারখানাটি। কারখানাটি দীর্ঘদিন এভাবে বন্ধ থাকলে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনগুলোতে দেখা দিতে পারে ত্রুটি, এমন আশঙ্কাও সংশ্লিষ্টদের।
জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে গত ১৩ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় শাহজালাল সার কারখানার সার উৎপাদন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে ১২৫ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৫০ হাজার টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহজালাল সারকারখানা জ্বালানি সঙ্কটে বন্ধ রাখার ফলে চলতি অর্থবছরে অর্জিত হবে না উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছর শাহজালালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার টন। মার্চ পর্যন্ত এ কারখানায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টন। বিদ্যমান পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে আগামী অর্থবছরেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ প্রসঙ্গে বাপেক্সের পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান জানান, শাহজালাল সার কারখানার জন্য বর্তমানে গ্যাস সরবরাহের বরাদ্দ নেই, তাই বন্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিলে পুনরায় দেয়া হবে গ্যাস সরবরাহ। শাহজালাল সার কারখানার কাছে বিপুল বকেয়া পাওনা জমা হয়েছে জালালাবাদ গ্যাসের। সরকার গ্যাসের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে প্রতি ঘনমিটার ১৬ টাকা করলেও আগের দাম ঘনমিটার প্রতি ৪ টাকা করে পরিশোধ করছে শাহজালাল সারকারখানা। ফলে বিপুল বকেয়া জমা পড়েছে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে। গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াবুল হোসেন জানান, সারকারখানা শুধুমাত্র গ্যাসের জন্য বন্ধ আছে। কারখানা চালু করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগোযোগ করা হচ্ছে। তিনি জালালাবাদ গ্যাসের বকেয়া প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। গ্যাসের মূল্য ইউনিট প্রতি ৪ টাকা থেকে ১৬ টাকায় করা হয়েছে। শাহজালাল সারকারখানায় বর্তমানে প্রতিটন সার উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত প্রতি টন সারের বিক্রয় মূল্য হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি টনে ঘাটতি প্রায় ১১ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, গ্যাসের মূল্য ইউনিট প্রতি ৪ টাকা দর দিয়ে উল্লেখিত ঘাটতি, এর বেশি দিলে সার কারখানার ফান্ডে কোনো টাকাই থাকবে না। সার কারখানা পুনরায় চালুর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তার কাছে কোনো তথ্য আসেনি বলেও জানান তিনি।

শাহজালাল সার কারখানার জিএম (অ্যাকাউন্ট) মো. আব্দুল বারিক বলেন, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ১৬ টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। জুন ২০২২ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে জালালাবাদ গ্যাসের বকেয়া পাওনা ৭৭৯ কোটি টাকা।

সার কারখানার উৎপাদন বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে দৈনিক ১৩০০ থেকে ১৪০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয় শাহজালাল সার কারখানায়। নির্মাণের পর ২০১৬ সালে শাহজালাল সারাকারখানা পুরোদমে উৎপাদনে যায়। যাত্রার পর থেকে এ সারকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন দিয়ে আসছিল। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে শাহজালাল সারকারখানার বিদ্যুতের সাব স্টেশনে গোলযোগ থেকে সৃষ্ট ফ্লাশিংয়ে কারখানার পাওয়ার হাউজের বয়লার শাটডাউন হয়ে পুরো সারকারখানার সবকটি প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় একটানা ৩৩ দিন বন্ধ ছিল কারখানার উৎপাদন।

বাংলাদেশে বিদ্যমান সার কারখানাগুলো উৎপাদনোক্ষম রাখা দরকার। কারণ দেশে এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। অপরদিকে বিদেশ থেকে ইউরিয়া আমদানি করতে প্রতি টনের খরচ হয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা।