তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৭ এএম
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়না অভিযোগে বিগত কয়েক বছর ধরেই নির্বাচন বর্জন করে আসছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি দলটি। নতুন করে ফের নির্বাচন ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির কোন কোন নেতা অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মনোভাবের ভিত্তিতেই নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলটি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের বিষয়ে সতর্কও করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ইতোমধ্যে পটুয়াখালী জেলার সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির রহমান ও কক্সবাজারের ঈদগাহ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনিকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, দল এখন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। এসব বিষয়ের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে বোকামি। কারণ বিগত যেসব নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের সেসব নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে মাত্র। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আগে থেকেই নেতাকর্মীদেরকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া ছিল অংশগ্রহণ না করার। আর গত ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
স্থায়ী কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, দলের অন্যতম একজন শীর্ষ নেতা সভার শুরুতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য ও যুক্তি তুলে ধরেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের মতামতের বিষয়টি তুলে ধরেন। পরবর্তীতে প্রত্যেক সদস্যই সভায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে মতামত দেন।
এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং প্রার্থী হতে পারেন এমন অনেকের সঙ্গেই কথা বলেন। তারা প্রত্যেকেই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
কয়েকটি জেলা ও উপজেলার নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সকলের কাছে মতামত জানতে চান। তিনি সকলের কাছে জানতে চান অংশগ্রহণ করলে কেন অংশগ্রহণ করা উচিত? আর না করলে কেন নয়? এসময় সকলেই যার যার মতামত দিয়েছেন। সকলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে মত দেন। তৃণমূলের নেতারা হাইকমান্ডকে জানান, যে কারণে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা হয়েছে সেটির এখনো সমাধান হয়নি। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী রয়েছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী। ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার হয়নি। তাহলে উপজেলা নির্বাচনে কেন অংশগ্রহণ করবো? আবার গাজীপুরের মেয়র আব্দুল মান্নান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এমন অনেক উদাহারণ রয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিলেই নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা শুরু হয়। অনেকেই ঘর-বাড়িতে থাকতে পারবেন না। ভোটের ফলাফলও হবে পূর্বনির্ধারিত। ফলে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আরেকটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হবে। বরং দল জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে পারে। তৃণমূলের নেতারা জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোন মতামত দেননি। তবে তিনি সকল পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী কমিটিতেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে না বলেই আমরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। তাহলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন অংশ নেবো? এই নির্বাচনে ফলাফল তো পূর্ব নির্ধারিত।
তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমরা অতীত অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতা তুলে ধরে কথা বলেছি। আমরা মনে করি, দল এখন নেত্রীর মুক্তি ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে রয়েছে। যারা এই সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করবে। বখতিয়ার আহমেদ জানান, তাদের বক্তব্য শুনে দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, দলের পক্ষ থেকে আগে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, সবার মতামত নেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা, উপজেলা ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা ব লেছেন। সকলে একমত হয়েছেন যে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের পরিবর্তে উপজেলায় উপজেলায় কর্মসভা, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি প্রদানের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ এই সরকারের অধীনে কি ধরণের নির্বাচন হবে সেটি আমাদের সবার জানা। আবার কেউ নির্বাচিত হলে যে দায়িত্ব পালন করতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই, জেলে থাকতে হবে না তার নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, যে লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের অসংখ্য সহকর্মী আহত হয়েছেন, মারা গেছেন সেই সংগ্রাম সফল না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নিলে তারা আত্মত্যাগ করলেন কেন?
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কেউ যদি দলের নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, যারা দলের পদে আছেন তারা কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী নয়। কিন্তু পদে নেই, সমর্থক এরকম দু’একজন প্রার্থী হয়েছেন।
তিনি বলেন, এই ভোটের বিষয়ে শুধু বিএনপিই নয়, ভোটারদেরও কোন আগ্রহ নেই। ভোটররাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। কারণ এই নির্বাচন কেমন হবে সেটি সকলে জানেন।
দুলু বলেন, আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা কেউ জনপ্রতিনিধি নন, ক্যাডার-সন্ত্রাসী। তারা মনে করে সরকার যেভাবে জোর করে ক্ষমতায় আছে, তারাও একইভাবে বিজয়ী হবেন।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, যারা দলীয় পদে নেই তারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির কিছু করার নেই। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। জয়-পরাজয় তো পরের কথা, কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের বিষয়ে দল তার অবস্থানে অটল। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। যাদের বিএনপির পদ নেই-তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা তো বিএনপির কেউ না।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব
আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের
কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও অনুপ্রবেশকারীর দলে জায়গা হবে না-কেন্দ্রীয় যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরল ইসলাম নয়ন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ
বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের
রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক