ঢাকা   শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৩০ কার্তিক ১৪৩২
সীমান্তের ওপারে নাফ নদীর তীরে ভিড়

হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়

Daily Inqilab এম আর আয়াজ রবি, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৭ এএম

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র সংঘাতের বলি হচ্ছেন মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। উভয় গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে প্রতিদিন বাস্তুচ্যুত হয়ে গ্রাম ছাড়া হচ্ছেন একপ্রকার মাটি কামড়ে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে ওপারে নাফ নদীর তীরে ভিড় করেছে হাজারো রোহিঙ্গা। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে এক ভুক্তভোগীর বক্তব্যে এবং বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজের বরাতে বিষয়টিটা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জোরালো ভূমিকার কথা বলছেন উঠিয়া বটেক নাফসহ কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজ। কোনপ্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন না করে, শক্ত হাতে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য সীমান্তরক্ষী বাহিনী, কোস্টগার্ড এর অবস্থানের কথা বলছে প্রশাসন।

সংঘাতের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নাফ নদীর ওপারে জড়ো হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। কেউ কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই পথে। নাফ নদীর তীরে জড়ো হওয়ার গত তিন দিনের এমন কিছু ভিডিও এসেছে গণমাধ্যম এর কাছে। যাতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গারা দলে দলে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য।

সুত্রে জানা যায়, বিগত ১৭ এপ্রিল মিয়ানমারের মংডুর উত্তরের গ্রাম মাঙ্গালায় জান্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করে আরাকান আর্মি। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে যোগ দেয় আরও একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ত্রিমুখী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে, তিক্ত অভিজ্ঞতার ফল ভোগ করতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ত্রিমুখী সংঘর্ষের জেরে একের পর এক, গুলি, গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্রের অংশবিশেষ তাদের উপর পড়ায় মাঙ্গালা ছেড়ে পেরাংপুর, বাজারপাড়া, শলাকা গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা।

এদিকে রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, জান্তা বাহিনী এবং আরাকান আর্মি দু’পক্ষই চায় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে তাদের অবশিষ্ট আবাসগৃহ দখলে নিতে রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘এফডিএমএন আরসি’। এক বোর্ড সদস্যের বরাতে জানা যায়, তারা (এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা) বারবার তাদেরকে সতর্ক করে বলেছে কোনভাবেই যেন তারা বাংলাদেশে না আসে। প্রয়োজনে তারা যেন মিয়ানমারের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পালিয়ে থাকুক, তবু যেনো এপারে না আসে। কারণ হিসেবে তারা জানান, গত ৭ বছরেও তাদের কোন সদস্য মিয়ানমার ফেরত যেতে পারিনি। যদি বাকিরাও চলে আসে তাহলে আরাকানে রোহিঙ্গাদের শেকড় হারিয়ে যাবে।

সীমান্তবর্তী স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, যে কোনভাবে রোহিঙ্গা ঢল ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। এ ব্যাপারে হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজার জেলা শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক আয়াজ রবি বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য ও সীমান্তবর্তী অন্যান্য রাজ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও দ্বন্দ্বে বারবার বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট তারিখ থেকে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে দীর্ঘ অর্ধ যুগের বেশি সময় রোহিঙ্গা সমাস্যা বাংলাদেশকে সীমাহীন পীড়া দিচ্ছে। এখন রোহিঙ্গা সমাস্যা বাংলাদেশ মিয়ানমারের দ্বি-পাক্ষিক বিষয় নেই। এটি বহুপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আরাকান রাজ্য, বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমা, ভূ-আঞ্চলিক অবস্থান ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুসারে এতদঞ্চল ‘হট ইস্যু’ হিসেবে বিভিন্ন পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের কাছে মাথাব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই রোহিঙ্গা সমাস্যার স্থায়ী সমাধানের কূলকিনারা এখনো করতে না পারলেও নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য চরম মানবিক বিপর্যয়, শান্তি-শৃংখলা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার প্রশ্নে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই যেকোন ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই হবে।

স্থানীয় প্রশাসন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার দাবি, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রতিটি এলাকায় ফোর্স ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, যদি যেকোনভাবে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ে তবে তাদেরকে ফেরত পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা যেনো বর্ডার অতিক্রম করতে না পারে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, পুরাতন রোহিঙ্গা দালালরা এবং মিয়ানমার থেকে মানুষ আনার জন্য স্থানীয় কিছু দালাল সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে আমি মনে করি প্রশাসন রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বা অনুপ্রবেশ করা আগে দালালদের চিহ্নিত করা উচিত এবং তদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিত।

কক্সবাজার টেকনাফের ইউএনও আদনান চৌধুরী বলেন, আমরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি যেনো কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।

এদিকে মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের শুরুতে নিজদেশে ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মিকে ঘিরে আশান্বিত হলেও এখন পর্যন্ত সংগঠনটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। উল্টো রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকের অভিমত। তাই তারা জান্তা সরকারের অনুকম্পা পাননি, আরাকান আর্মিকে ঘিরে তাদের আশা আকাঙ্খার মধ্যেও আশায় গুঁড়োবালি অনুভব করছে। ##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল
জাতীয় ঈদগাহের সামনে ড্রামভর্তি খন্ডিত লাশ উদ্ধার
একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপির ধন্যবাদ
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে স্বাগত জানাল ১২ দলীয় জোট
আরও

আরও পড়ুন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল