ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি স্বজনদের
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০২ এএম
সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা ধ্বসের ১১ বছর পরও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানান স্বজনরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্তিতে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এছাড়া আহত নিহতের পরিবারও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন।
রানা প্লাজায় ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর সময় চোখের জলে স্মৃতিচারণা করেন আহত শ্রমিক ও নিহতের স্বজনরা। তারা ভবন মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।
রানা প্লাজার ছয় তলায় কাজ করতেন মনির হোসেন। ভবন ধসে পড়লে সেটির নিচে তিন দিন চাপা পড়ে থাকার পর উদ্ধার করা হয় তাকে। পায়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি। এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই আঘাতের ক্ষত।
মনির হোসেন বলেন, পাঁচ মাস আগেও অসুস্থ হয়ে পড়ি। লিভারে সমস্যা। রক্তবমি হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলে লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু টাকা পাই নাই।
একই কারখানার শ্রমিক তাসলিমা বলেন, ১১ বছর পরেও সেদিনের ঘটনা ভুলতে পারেন না। সবসময়ই সেই দিনের কথা মনে পড়ে। আজীবন মনে হয় ভুলতে পারবেন না। কেউ কিছু করল না আমাদের জন্য। এখন বোতল কুড়ায়ে খাই। পা ভাঙা। কোনো কাজ করতে পারি না। ১১ বছর কী করল সরকার? বছর হলেই নেতারা আসে। ছবি তোলে। কিছুই পেলাম না। বিচারও হলো না। আমাদের এমন যারা করলো তাদের বিচার হলো না। এখন দোয়া করি, যাতে আল্লাহ বিচার করে।
রানা প্লাজায় দুই ছেলেকে হারানো রুবি আক্তার বলেন, আমার বড় ছেলে আবু জাফর সেন্টু ছিল আট তলায়। ছোট ছেলে সেকেন্দার ছিল ছয় তলায়। বড় ছেলের লাশ পাইছি ১৬ দিন পর। তাকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে কেটে উদ্ধার করা হয়। সেই লাশ পাই। আর ছোটটার লাশ পাইনি। সে আজও নিখোঁজ। একদিকে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, অপরদিকে এখনও বিচার না মেলায় ক্ষোভ জানিয়ে রুবি বলেন, আজও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। বিচারটাও পেলাম না।
তার মতো স্বজন হারিয়েছেন আরো অনেকেই। হাজারো শ্রমিক নিজে হয়েছেন পঙ্গু কিংবা হয়েছেন শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ঘটনার পর থেকেই ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী ও নিহত শ্রমিকের স্বজনরা। ১১ বছরেও সেই দাবি পূরণ হয়নি।
তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর এই দিনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা আলোচনায় এলেও তারপর সবাই চুপ করে যায়। ভুক্তভোগীদের দাবি, এক যুগ পূরণ হওয়ার আগেই যাতে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও বিচার পান তারা।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মামলার বিচারে সরকারের সদিচ্ছার দরকার। মামলা করেছে সরকার। তারা চাইলে এতো দিনে বিচার হতো। ১১ বছরে এ মামলায় ৪৮ বার দিন পড়েছে। গতকাল সরকারের প্রসিকিউটর এক সভায় বলেছেন নানা রকম সমস্যা আছে। ৫০০’র মতো সাক্ষীকে পাওয়া যায় না। তারা বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন, আসা-যাওয়ার খরচ পান না। সেখান থেকে আইনজীবীরাও টাকা পান না। আগামী বছর ঘটনার এক যুগ হবে। তার আগে আমরা এ মামলার বিচার চাই।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজার ১১ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু এখনও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসা কোনোটাই দেয়া হয়নি। আরো দুঃখজনক হলো- ১১ বছরেও এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীরা দিব্যি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আমরা চাই অবিলম্বে রানা প্লাজা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের বিচার করতে হবে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এ বিষয়ে আমাদের যতটা সুযোগ আছে আমরা কাজ করছি।
গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম বলেন, রানা প্লাজা নির্মম হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর আজ। এগারো বছর আগে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ঘটে দেশের ইতিহাসের এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। ২৪ এপ্রিলের ওই ভবনধস নেহাত কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং তা সুস্পষ্টভাবেই মালিকপক্ষের অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। এ ভবন ধসে আহত সহস্রাধিক শ্রমিক যাঁদের অধিকাংশই কর্মক্ষমতা হারিয়ে পঙ্গুত্ব জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছেন। তাদের সবাই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। হৃদয়বিদারক এ ঘটনা শুধু দেশ নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল।
ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই দুর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় শিল্পদুর্ঘটনা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত অন্তত ৩৯, নিখোঁজ ৬৮
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও জিতে ব্যবধান ২-০ করার লক্ষ্য বাংলাদেশের
১৭ জন রোগীকে হত্যার অভিযোগে ৭০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড নার্সের
১৭ জন রোগীকে হত্যার অভিযোগে ৭০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড নার্সের
চীন সবসময় সার্বিয়ার সেরা অংশীদার: প্রেসিডেন্ট ভুসিক
ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে
গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মিসরে ঐকমত্য
আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন প্রতিযোগিতায় ইরানি শিক্ষার্থীদের সাফল্য
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার
গোবিন্দগঞ্জে দুবৃর্ত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত\ আটক ২
কুমিল্লায় তরুণীসহ প্রতারকচক্রের সাতজন গ্রেফতার
লন্ডনে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন সাদিক খান
আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ
সুন্দরবনে ভয়াবহ আগুন
রাশিয়ার আর্টিলারি হামলায় ইউক্রেনের গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস
ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিতে পারে জি৭
প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে -রাজশাহীতে রাশেদা সুলতানা
ইউক্রেন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিকল্পনা তৈরি করেছেন ট্রাম্প
ফরিদপুরে স্বর্ণের কারিগরকে কোপাল ছাত্রলীগ নেতা
গাম্বিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কৃষিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর