রিজার্ভ থেকে আড়াই বছরে নেই ২৩ বিলিয়ন ডলার
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন। আড়াই বছর পর আর গত মঙ্গলবার দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ছিল ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। তবে এটি প্রকৃত রিজার্ভ নয়, এর বাইরে আরও একটি হিসাব হয় যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। সে হিসাবে আড়াই বছরেরই রিজার্ভ কমেছে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার।
ওই হিসাবে প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল, এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে এগুলো বাদ দিয়ে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশের প্রকৃত যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো কষ্টকর বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, কোন দেশের রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকা জরুরি। রিজার্ভের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারকদের মাঝে।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফের) ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণেও ব্যর্থ হচ্ছে। সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যেই ঋণের শর্তসমূহ নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফর বিশেষ দল গতকাল ঢাকায় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, আড়াই বছর আগে রিজার্ভ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে তা দিয়ে তেল-গ্যাস আমদানির খরচ মেটাতেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ আর বাড়ছে না। জরুরি এলসি নিষ্পত্তির জন্য বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের সরবরাহ বাড়াতে পদক্ষেপ খুব একটা কার্যকর হচ্ছে তবে তা দৃশমান না। এদিকে, রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারকদের মাঝে।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনের আগ মুহুর্তে অনেক অর্ডার নিতে পারিনি। এখন অর্ডার আসছে, মেশিনারিরও প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে এলসি খুলতে পারি নাই। যদিও ব্যাংকগুলোর আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ, এখনও আশায় আছি।
ওষুধ আমদানিকারক রাসেল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ডলার পাচ্ছি না এর মাঝে রিজার্ভ নিয়ে আবারও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে না পারার বিষয়টি বিদেশি ব্যাংক জানলে তারা এলসি খুলতে চাইবে না। আবার কোনো কোনো ব্যাংক বাড়তি চার্জ চাইবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট আট মাসে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। যা গড় হিসাবে প্রতি মাসে ৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। আলোচিত সময়ে বাণিজ্যিক কিছু ব্যাংক থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের মতো কেনা হয়েছে। আরও ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সোয়াপ পদ্ধতির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বন্ধক রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
এদিকে, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে দেশ। এখন তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা। অথচ তাদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের উন্নতি হয়নি। এমন বাস্তবতা সামনে রেখে ঋণের শর্ত পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি বিশেষ দল গতকাল ঢাকায় আসছে। আগামী ৮ মে পর্যন্ত বৈঠক চলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইএমএফের প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে। এবারের সফরে রাজস্ব নীতিতে গুরুত্ব দেবে দলটি। পাশাপাশি ব্যাংক সংস্কারের নামে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে কথা তুলতে পারে সংস্থাটি। তাছাড়া রিজার্ভ কেন বাড়ছে না, কেন লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না এবং রিজার্ভ কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, বিশদ পরিকল্পনা চাইতে পারে আইএমএফ।
৪৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের শর্ত হিসাবে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল বাংলাদেশ, তা অনুমোদন করেই দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করেছিল সংস্থাটি। আইএমএফর শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। আর মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, বাস্তবে তা ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। আবার গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তখনও প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অতিরিক্ত রিজার্ভ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কোন বিচারক পাবলিক কোন স্টেটমেন্ট দিতে পারবেননা : মৌলভীবাজারে প্রধান বিচারপতি
শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন মুফতি মাও: মুজির উদ্দিন ভোলা
উপজেলা নির্বাচন হবে প্রভাবমুক্ত- দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান
চীনের সাহায্যে চাঁদে পাড়ি দিল পাকিস্তানের প্রথম চন্দ্র-উপগ্রহ!
যুক্তরাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির বড় জয়, সুনাকের দল ধরাশায়ী
উপজেলা নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল
ইরানকে যেভাবে নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সাহায্য করছে চীন
মালদহে দেবের হেলিকপ্টারে আগুন
ফ্রিজের ভেতর থেকে চার শিশুর লাশ উদ্ধার, অতঃপর...
ফের কলকাতার সিনেমায় বাঁধন
গাজায় সাত মাসে ৩৪ হাজার ৬২২ ফিলিস্তিনি নিহত
তীব্র দাবদাহে মরছে মাছ, দিশেহারা চাষিরা
টানা আট ঘণ্টা নির্যাতন করে স্ত্রীকে হত্যা করলেন মন্ত্রী, দেশজুড়ে বিতর্ক
কোক স্টুডিও বাংলা’র নতুন গান ‘মা লো মা’
বালিশে বুক ঢেকে হোটেল থেকে বের হলেন ব্রিটনি, কী ঘটেছে মাঝরাতে?
কানাডায় নিজ্জর হত্যার ঘটনায় তিন ভারতীয় আটক
শাক্সগাম আমাদের, চীনা নির্মাণের উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসার পর দাবি ভারতের
ধর্মান্তরিত হওয়ার একদিন পরই নিজ ধর্মে ফিরলেন অভিনেত্রী
সরকার পতনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলো একাত্ম: ড. মঈন খান
জনপ্রিয়তায় ব্র্যাড পিটকে হার মানালেন শাহরুখ!