‘বউয়ের কথা শুনবেন না’
২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম
জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে আসা নেতারা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বউয়ের কথা শুনে রাজনীতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে এই বর্ধিত সভায় নেতারা বলেন, রওশনের কথা শুনে এরশাদ নিজের সর্বনাশ করেছিলেন। এখন জিএম কাদের বউয়ের কথা শোনায় দল করুণদশায় পড়েছে। করুণদশা থেকে বেরিয়ে আসতে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে বউয়ের কথা না শোনার পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে শুধুমাত্র বনানীর কার্যালয়ে বসে না থেকে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারাদেশ সফরেরও পরামর্শ দিলেন নেতারা। জাপার নেতারা জানান, জিএম কাদেরের স্ত্রী শরিফা কাদের ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন। তাকে প্রার্থী করার কারণে কাজী ফিরোজ রশিদ ও আবু হোসেন বাবলার আসন ছেড়ে দিতে হয়। শুধু তাই নয় শরিফা কাদের দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহিলা পার্টির সভাপতিসহ কয়েকটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ, ১৯৯৫ সালে কারাগার থেকে এইচ এম এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে চিঠি লিখে স্ত্রী রওশন এরশাদ ও প্রেমিকা জিনাত মোশাররফকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য করার নির্দেশনা দেন। পাল্টা চিঠিতে মিজান চৌধুরী লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট বউ আর প্রেমিকাকে কখনোই দলের রাজনীতিতে আনবেন না, তাদের কথা শুনবেন না; এতে আপনি ও দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে’। পরে রওশন এরশাদ ও জিনাত মোশাররফকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। রওশনকে রাজনীতিতে আনার পর এরশাদ বউকে রাজনীতিতে আনার মজা(!) হারে হারে টের পেয়েছেন। রওশন ২০০৭ সালে স্বামী এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কার করে নিজেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। অতপর ১৯৯৯ সাল থেকে যতদিন বেঁচে ছিলেন এরশাদ একই প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় বসবাস করেছেন। রওশন এরশাদ আলাদা বাসায় ছিলেন। শুধু কী তাই ২০০৭ সালের নির্বাচনে এরশাদের সিদ্ধানে বাইরে গিয়ে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেন। ২২ জানুয়ারির ওই নির্বাচন ১১ জানুয়ারি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ভন্ডুল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসেন ড. ফখরুদ্দিন-মঈন উ আহমদ। ২০১৪ সালেও এরশাদ নির্বাচন বর্জন করার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা হন। বউকে রাজনীতি আনার এরশাদের পরিণতির মতো জিএম কাদেরের যাতে না হয় সে লক্ষ্যে বউয়ের কথায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না নেয়ার পরামর্শ দেন দলের নেতারা।
বর্ধিত সভায় খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, ‘পার্টি কিছু নেতা রয়েছেন যারা সুযোগ সন্ধানী। এই সুযোগ সন্ধানী নেতারা রাজনীতির মাঠে না থেকেও বার বার এমপি-মন্ত্রীও হয়েছেন। সেজন্য জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মনোকষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতীয় পার্টির দুর্গ ছিল রংপুর। আজ সেই র্দুগ নেই। এর কারণ কি? কারণ একটাই, বউ এবং নেতৃত্বের অভাব। রওশন ওই আসনের এমপি ছিলেন। কান কথা শুনে রাজনীতির নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। দলের মধ্যে কান কথা বেশি চলছে। ফলে রংপুরের ঘাঁটি হারিয়ে গেছে। তাই এক কথায় বলতে হয়- বউ মরলে বউ পাওয়া যায়, ভাই মরলে ভাই পাওয়া যায় না ‘
কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ডা. আব্দুল হাই মঞ্চে বসে থাকা জাপা চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার আশেপাশে যারা বসা আছেন, তারা শুধু হালুয়া-রুটির জন্য আপনার আশে পাশে ঘুরঘুর করেন। হালুয়া-রুটির জন্য আপনার কাছে ধর্না দেন। এসব নেতাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। লেজুরভিত্তিক রাজনীতি না করে নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জনস্বার্থে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামুন।’
টাঙ্গাইল জেলা জাপার সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতীয় পার্টির রাজনীতি বনানী অফিস কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। যারা প্রতিদিন বনানী অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে দেখা করেন, তারা পদ-পদবি পান। আমরা সবসময় আওয়ামী লীগের দোষ দিয়ে থাকি। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৌশল অলম্বন করবে, এটাই স্বাভাবিক। জাতীয় পার্টি কেন কৌশল নিয়ে সামনে পথ চলছে না।’
দিনাজপুর জেলা জাপার সভাপতি রুবেল আহমেদ পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব। আপনি কয়টি জেলা সফর করেছেন? কয়টি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন? বানানী অফিসে বসে দলের নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।’
লালমনিরহাট জেলা জাপা সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তৃণমূলে জাতীয় পার্টির অবস্থা খুবই দুর্বল। দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় জাপা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও ভরাডুবি হবে।’
ঢাকা মহনগরের দক্ষিণের নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ‘৪২ বছর ধরে আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করি। আমার মতো অনেকে আছেন যারা এই দলটি করতে গিয়ে সবকিছু হারিয়েছেন। আজ আমাদের মাজা ভেঙে গেছে। বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল করছেন। তিনিও জানেন তাকে দিয়ে রাজনৈতিক দল হবে না। তাদের ওখানে যেসব নেতা রয়েছেন তারাও সময় মতো চলে আসবেন। তারাও নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন, এমপি হবেন।’
বর্ধিত সভায় যারা বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন তারাই দলকে সুসংগঠিত করার কথা বলেছেন। বউয়ের কথা না শুনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পিডিবিএলের ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
ইউএস ট্রেড শো : দর্শনার্থীদের ভিড় প্রসাধনীর স্টলে
সরকারি অনুষ্ঠানে ভোট প্রার্থণা প্রার্থীর
শঙ্কার কালো স্রোত পেরিয়ে অবশেষে জয়ের হাসি
সরাইলে ১১ দোকান পুড়ে ছাই
দেশের মানুষ আর দুর্দিন দেখতে চায় না- গৃহায়ণ মন্ত্রী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল, ফেসবুকে সমালোচনা
মানবতার দুশমন ইসরাইলকে সমুচিত জবাব দিতে হবে -জাতীয় উলামা মুভমেন্ট
গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জাতিসংঘকে উদ্যোগ নিতে হবে
বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হলেও ‘নীরব’ নির্বাচন কমিশন
লোহাগড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা
বেগমগঞ্জে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় লম্পটের শাস্তির দাবি
গালির বিপরীতে সমপরিমাণ গালি ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে।
ছোট পুঁজি নিয়েও লড়ছে বাংলাদেশ
গফরগাঁওয়ে উপজেলা নির্বাচনে ১৪ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল
পরিবেশ দূষণের অভিযোগে গাজীপুরে ফারদার ফ্যাশন লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা
অসাম্প্রদায়িকতা আমাদের জাতির মূল চালিকাশক্তি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে পাচারকালে দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে তিন কোটি টাকার সাপের বিষ উদ্ধার
সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবীতে আগামীকাল জাগপার গণমিছিল
লৌহজংয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, একজনকে কুপিয়ে আহত