থমথমে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৭ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার অভ্যন্তরে জেনেভা ক্যাম্পের অবস্থান। যার দক্ষিণে রয়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ মোহাম্মদপুর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, পশ্চিমে মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল, পূর্বপাশে একাধিক হাসপাতাল আর উত্তর পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

এরকম একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গড়ে ওঠা জেনেভা ক্যাম্পে অবৈধ মাদকের স্পট চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বস্তির চেয়েও ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং সরু গলির কারণে ক্যাম্পটি মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ ঘাঁটি। প্রায় অর্ধ লাখ অবাঙালীর মানবেতর বসবাস এখানে। বছরের পর বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ধরনের মাদক স্পট দখলকে কেন্দ্র করে হামলা পাল্টা হামলা ও খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্য থাকায় মাদক ব্যবসা থেমে নেই ক্যাম্পটিতে। বর্তমানে ইয়াবা ও হেরোইনের পাশাপাশি গাঁজা বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।

ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্যাম্পের মাদক ডন ছিলো চুয়া সেলিম ও পঁচিশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে পঁচিশ নিহত হয়। চুয়া সেলিমের সঙ্গে যোগ দেয় কয়েকজন। ধীরে ধীরে ডনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে ক্যাম্পের মাদক সম্রাট হিসেবে অন্যতম ভূইয়া সোহেল গ্রুপ, পিচ্চি রাজা গ্রুপ, শাহ আলাম, গালকাটা মনু গ্রুপ এবং বাবু গ্রুপ ছাড়াও রয়েছে পৃথক পৃথক গ্রুপ। এরাই সেখানের অন্ততঃ ১৫টি মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে।

মাদকের নতুন স্পট দখল নিতে গিয়ে সেখানে ঈদুল ফিতরের পরদিন থেকে দফায় দফায় কয়েকদিন সংঘর্ষ হয়। গত ১৩ এপ্রিল রাতে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণ, সংঘর্ষ, হামলা ও পাল্টা হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় ১শ’ ২ জনকে নামীয় এবং আরো অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও মারামারির অভিযোগে মামলা করেন মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ রেজাউল। এর পরেও একাধিক দিন মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার এসআই রাজীব ইনকিলাবকে বলেন, বিস্ফোরক ও মাদক মামলায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত জড়িত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০/৪০ জন মাদক মামলার আসামি। এছাড়াও কয়েকজন রয়েছে পরোয়ানাভুক্ত আসামি। অব্যাহত অভিযানের ফলে সেখানের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।

ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে মারিজুয়ানার রানী নামে পরিচিত রানির এক ভাগ্নে ঈদের পরদিন হেরোইন বিক্রির জন্য স্পট নিতে গেলে আলতাফের গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এদিকে ক্যাম্পের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ১৫টির অধিক স্পটে সেলসম্যান রয়েছে ৩শ’ জন। এছাড়া প্রত্যেক গ্রুপ নিজেদের স্পট নিয়ন্ত্রণে কম করে হলেও ১০ জন করে ক্যাডার পুষে রাখেন। সে হিসেবে ক্যাম্পের অন্ততঃ ৫শ’ লোক এ অবৈধ মাদক স্পটের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকালে ওই ৫শ’ লোক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এমনকি তারাও সংঘর্ষে জড়ায়। এছাড়া ক্যাম্পের প্রত্যেকটি সেক্টরের জন্য রয়েছে একজন করে সেক্টর ইনচার্জ, রয়েছে রিলিফ কমিটি, এছাড়া আটকেপড়া পাকিস্তানিদের একমাত্র সংগঠন এসপিজিআরসির (স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানীজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশনস কমিটি) প্রধান কার্যালয়। এসব সেক্টর ইনচার্জ, এনআরসি এবং এসপিজিআরসির নেতাদের ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে গ্রুপগুলো। এছাড়া প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সাথে সু সম্পর্কের নাম ভাঙিয়ে ক্যাম্পের অলিখিত ডন মাছুয়া সাঈদ, ৯ নং সেক্টরের মাছুম, ৫ নং সেক্টরের মোল্লা বাছির, ৪ নং সেক্টরের রিয়াজ এবং ৭ নং সেক্টরের ইকবাল মাদক ব্যবসায়ীদের সেল্টার দিয়ে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রেফতার হলে এরাই তদবিবের চেষ্টা করে। ওয়ার্ড পর্যায়ের স্থানীয় একজন জনপ্রনিধির পিএস বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ। বর্তমানে চলমান অভিযানের মধ্যেও চলছে মাদক কেনা-বেচা। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ফের যে কোনো সময় সংঘর্ষ ঘটে যেতে পারে।
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, আমরা ক্যাম্পের আশপাশ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলতে পারি না। সন্ধ্যার পরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। অনেক সময় গাঁজার গন্ধে চলা দুস্কর। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে ক্যাম্পটি ঢাকার আশপাশে স্থানান্তরের দাবি জানান তারা।

আটকেপড়া পাকিস্তানি সাধারণ প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, মাদক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। তিনি প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে ক্যাম্পবাসীদের স্বস্তি দিতে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রওশনুল হক সৈকত বলেন, ‘ক্যাম্পে কোনো পুলিশ সদস্য না গেলেই মাদকচক্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ‘আমাদের দৃঢ় নজরদারি আছে এবং প্রতিদিন অভিযানও চালাই, কিন্তু যখনই তারা পুলিশের উপস্থিতি টের পায় তখনই তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়’।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেট্রোরেলে ভ্যাট এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের

মেট্রোরেলে ভ্যাট এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ

আবারো পেছালো রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন

আবারো পেছালো রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন

নেত্রকোণায় নো হেলমেট, নো ফুয়েল কার্যক্রম শুরু

নেত্রকোণায় নো হেলমেট, নো ফুয়েল কার্যক্রম শুরু

সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার

সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার

তিন জিম্মির পর গাজায় আরো এক জিম্মির লাশ উদ্ধার

তিন জিম্মির পর গাজায় আরো এক জিম্মির লাশ উদ্ধার

ফের মাউন্ট ইবু থেকে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত, খালি করা হল সাতটি গ্রাম

ফের মাউন্ট ইবু থেকে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত, খালি করা হল সাতটি গ্রাম

কেন চীনকে ‘সোনার তরী’ ভাবছে রাশিয়া?

কেন চীনকে ‘সোনার তরী’ ভাবছে রাশিয়া?

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণ : টিআইবি

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণ : টিআইবি

‘চ্যালেঞ্জের মুখে ব্র্যান্ড মোদি’

‘চ্যালেঞ্জের মুখে ব্র্যান্ড মোদি’

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে চোরাশিকারিদের গুলিতে খুন বনকর্মী

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে চোরাশিকারিদের গুলিতে খুন বনকর্মী

ঢাকার গণপরিবহনের চেয়ে আফ্রিকার ছোট শহরের বাস সুন্দর : কাদের

ঢাকার গণপরিবহনের চেয়ে আফ্রিকার ছোট শহরের বাস সুন্দর : কাদের

পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান, আক্রান্ত অন্তত ৩০

পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান, আক্রান্ত অন্তত ৩০

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু, চরম দুশ্চিন্তায় জেলেরা

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু, চরম দুশ্চিন্তায় জেলেরা

সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার

সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার

নগরকান্দায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত

নগরকান্দায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত

নালিতাবাড়ীতে আগুনে পুড়ে ভস্ম হলো এক বৃদ্ধা

নালিতাবাড়ীতে আগুনে পুড়ে ভস্ম হলো এক বৃদ্ধা

দেশের মানুষ কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

দেশের মানুষ কারো কাছে ভিক্ষা করে চলবে না : প্রধানমন্ত্রী

আরেকটি রক্তক্ষয়ী রাত দেখলো গাজাবাসী, এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ মানুষ

আরেকটি রক্তক্ষয়ী রাত দেখলো গাজাবাসী, এক সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ মানুষ

জম্মু ও কাশ্মীরে পৃথক হামলায় পর্যটক দম্পতি গুলিবিদ্ধ, নিহত ১

জম্মু ও কাশ্মীরে পৃথক হামলায় পর্যটক দম্পতি গুলিবিদ্ধ, নিহত ১