বিলুপ্তির পথে শেরপুর গারো পাহাড়ের বন
১৪ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
মাত্র এক যুগ আগেও শেরপুরের গারো পাহাড় ছিল গভীর অরণ্য। সৌন্দর্যের আধার। বনজসম্পদে ঠাসা। ছিল শত শত প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য বনজ উদ্ভিদ। কিন্তু তৎকালীন বন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাঠ চোরদের যোগশাজসে সীমাহীন দুর্নীতির ফলে ব্যাপক বৃক্ষনিধনে ও লোকবল সঙ্কটের পাশাপাশি উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে বিলুপ্তির পথে বনজবৃক্ষ ও বনজসম্পদ। ওই সময়ে গারো পাহাড়ে ছিল শিল্পের কাঁচামাল, ঔষধি, ফলদ, দামি শাল, গজারী কাঠসহ নাম না জানা বিভিন্ন উদ্ভিদ। কিন্তু সেই গারো পাহাড় আজ বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। শেরপুর গারো পাহাড় ঝিনাইগাতী. শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় রয়েছে প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি। ছিল শাল গজারীসহ নানা প্রজাতির বনজ গাছ। কিন্তু বন বিভাগের সীমাহীন দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, ব্যাপক বৃক্ষ নিধন ও বন কর্মকর্তা কর্মচারী ও চোরাইকাঠ ব্যবসায়ীদের যোগশাজসে বনের কাঠ কেটে পাচার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ শেরপুরের গারো পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে পরিবেশবিধ্বংসী বিদেশি ইউক্লিপটাস, একাশিয়াসহ নানা গাছ। তৎকালে করা হয়েছে প্রাকৃতিক বন কেটে এসব পরিবেশবিধ্বংসী কাঠের বনায়ন। তখন ‘বন কেটে বনায়ন” শিরোনামে সংবাদ ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। শাল গজারীসহ নানা প্রজাতির গাছ কেটে সাবাড় করে করা হয় বনায়ন। বর্তমানে প্রধান সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে সামান্য কিছু শাল ও গজারী গাছ। যা নিতান্তই লোক দেখানোর জন্য। বন কেটে বনায়নেও বনকর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে পকেট ভারী হলেও সৌন্দর্য হারায় ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়! বন সৃষ্টির নামে আখের গোছায় বনকর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রকৃতিক শাল গজারীসহ বনজ ও ওষধি গাছ-গাছড়া কেটে কেন এসব আকাঠা পরিবেশবিধ্বংসী বৃক্ষ রোপণ করা হয় তা বন বিভাগই ভাল জানেন। তবে এতে যে পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
আবার জরাজীর্ণ বনাঞ্চলে এ শুকনো মৌসুমে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় প্রাকৃতিক শাল-গজারীর কপিজ গাছ। অভিযোগ উঠেছে, যেসব বাগান করা হয়েছে তাতেও কাঠ চোদেরকেই করা হয়েছে অংশীদার! ফলে চুরি হয়ে যাচ্ছে ওসব বাগানের কাঠ অংশীদারদের মাধ্যমেই। শুধু তাই নয়, ওসব অংশীদার বাগানের গাছ পুড়িয়ে সরকারি বনের হাজার হাজার একর জমিও দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে বাগান করা হলেও তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। জানা যায়, রক্তচন্দন, গামারি থেকে শুরু করে এমন কোনো বনজকাঠ ও ওষধি গাছ নেই যা এখানে ছিল না। আকাশমণি, অর্জুন বনকাঁঠাল, দেবদারু, ডুমুর, গামারী, গর্জন, হরিতকী, বহেড়া, জয়তুন, কাঞ্চন (লাল) রক্তকরবি, কাঁঠালচাপা, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি, মহুয়া, রাবার, বটগাছ. আম. জাম কাঠাল সেগুন, শিশু, অমলকি, গোলাপ জাম, জাম্বুরা, আমড়া, কামরাঙ্গা, বটের মতো বহু নাম না জানা প্রজাতির দুর্লভ গাছ ছিল গোটা গারো পাহাড়জুড়ে। বাসক, মাধবী লতাসহ আরো অনেক দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদে ছিল ঠাসা। দেশি-বিদেশি অনেক দামি ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদে ছিল সমৃদ্ধ। বর্তমানে সেসব দুর্লভ প্রজতির গাছ আর নেই! বলতে গেলে গারো পাহাড় হয়ে পড়েছে বৃক্ষশূন্য।
রাংটিয়া রেঞ্জ অফিসার আব্দুল করিম দৈনিক ইনকিলাকে বলেন এখন ও জনবল সঙ্কট রয়েছে এখানে। ফলে গারো পাহাড় সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যেসব গাছ এখনও আছে তারও সঠিকভাবে পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না জনবল সঙ্কটে। তিনি বলেন, লোকবল সঙ্কটের কথা বন বিভাগের উর্দ্ধতন মহলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যেই বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমিও বেহাত হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ও চরম উদাসিনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে সরকারি এই গারো পাহাড়ে বর্তমান হাল দেখে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কাপ্তাই অটোরিকশা চালকদের ১ম দিনের মত অবরোধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
সাকুরা পরিবহনের চাপায় চালকসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সভা অনুষ্ঠিত
বিটিভির নতুন মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম
কানপুরেও একই দল নিয়ে খেলবে ভারত
রাঙামাটিতে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : দ্বিতীয় দফা ভোট গণনা চলছে
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার আর নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ : লেবানন মন্ত্রণালয়
“তরুণ প্রজন্মকে মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যে সচেতন থাকতে হবে”
ইরানে কয়লা খনিতে বিস্ফোরণে নিহত ৫১
ভারতের কাছে হেরে ছয়ে নেমে গেল বাংলাদেশ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ২২৫তম শাখার উদ্বোধন
বিশ্বব্যাংকের কাছে কারিগরি সহায়তা চায় বিএসইসি
নববী আদর্শের আলোকে দেশ শাসনে ব্যর্থ হলে মানবতার শান্তি আসবে না-কুমিল্লায় মহাসম্মেলনে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম
মাদারীপুরে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
মাদারীপুরে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার জেরে অর্ধশত ঘর-বাড়ী ভাংচুর, ১০ ঘরে আগুন: আহত ২০
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় বন্দুক হামলায় নিহত ৪
সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে দুই কমিটি