যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরে তিনি ব্যবসা-বিনিয়োগ, নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকারসহ দুই দেশের জন্য অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দিনের প্রথম ভাগে কলম্বো থেকে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে ডোনাল্ড লুর। গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর বাংলাদেশ সফর করেন ডোনাল্ড লু। তবে নির্বাচনের পর এটি তাঁর প্রথম সফর।

কূটণৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরের প্রথম দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় ডোনাল্ড লুর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।

ডোনাল্ড লুর সফরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা স্পষ্ট করেছেন। ওই চিঠির শুরুতে বাইডেন ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্ব’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন; যা থেকে স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মনোযোগ দিচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে আসছেন দু দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যা বলছেন তার বাস্তবায়নটা আমরা দেখব।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হিসেবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন; জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিক অধিকারের বিষয়ে নাগরিক সমাজের কাছ থেকে বক্তব্য শুনবেন লু। ডোনাল্ড লু ঢাকায় এলে এসব বিষয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেয় এমব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকারসহ সামগ্রিক মানবাধিকারের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই এ বিষয়গুলো আলোচনা থেকে হারিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্যই নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন লু।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন। গত মাসে বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন টিকফা ফোরামের বৈঠকের পাশাপাশি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন ব্যবসা ও বিনিয়োগে জোর দিচ্ছে, সেখানে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচনায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর আসন্ন ঢাকা সফরে র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।