কুপিয়ে খুঁচিয়ে পঙ্গু করলো সাংবাদিক কাজী ইকরামকে
২২ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
সালথায় নির্বাচনী সহিংসতা শিকার সাংবাদিক কাজী ইকরাম। কুপিয়ে খুঁচিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় ৪নং আসামি মো. জনি ফকিরকে সালথা থানা পুলিশ আটক করছেন বলে ওসি মো. ফাইজুর রহমান (পিপিএম) ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেন।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিক ইকরাম মোট ১১ জনের নাম দিয়ে এজাহার করেছেন। অজ্ঞাত নামাও আরো ২০/২৫ আসামি আছে। তিনি বললেন, গত ১৯ মে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
ইকরাম বলেন, আমার উপর এ নগ্ন হামলার ঘটনায় সালথা থানায় পরপর তিনবার এজাহার নেওয়ার অভিযোগ পাঠালোও থানায় মামলা নেয়নি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের চাপে ওসি মামলা নিতে বাধ্য হন।
তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাকে পঙ্গু করেই ক্ষান্ত হননি। ট্রাক যোগে আমার বাড়ী ঘরের কয়েক লাখ টাকার আসবাবপত্রও লুট করে নিয়ে যায়। লুন্ঠনকৃত মালামাল উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী মো. ওহিদুজ্জামান সংবাদকর্মীদের বলেন, এদেশের নাগরিকরা কে কাকে ভোট দিবে, কার দল করবেন এটা সম্পূর্ণ তার নাগরিক অধিকার। প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি বলে একজন সংবাদকর্মীকে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে, খুঁচিয়ে, হাত পা ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছে।
সোমবার রাতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শরীরে ৩২টি আঘাতের চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের বেডে আধমরা অবস্থায় পড়ে আছে সাংবাদিক ইকরাম।
কাজী ইকরামের ছোট বোন পিয়া বলেন, আমার ভাই একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচন করবেন না। তাকে বাধ্যতামুলক তার দল করতে হবে এমন কথার কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমাদের সালথা বাড়ীতে নিজ ঘরের মধ্যে ঢুকে ৪/৫ জন লোক আমার ভাইকে খুন করতে আসে। হত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আমার ভাইকে পিটিয়ে কুপিয়ে খুঁচিয়ে থেঁতলে তার শরীরে ৩২টি আঘাত করে সন্ত্রাসীরা।
সাংবাদিক ইকরাম সালথার একটি এতিহ্যবাহী কামেল ও আলেমে দ্বীন পরিবারের সন্তান।
সচেতন মহল বলছেন, আগামী দিনে এই চেয়ারম্যান গংরাই সংসদ সদস্য লাবু চৌধুরীর দিনকেই রাত করে ফেলবে। এতই দুর্ধর্ষ এবং দাঙ্গাবাজ এ গোষ্ঠী।
ইনকিলাবের এ প্রতিবেদককে দেখে ইকরামের বৃদ্ধ মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার যে কি আকুতি। সন্তানের রক্তে ভেজা শরীর মুছে এবং সন্তানের নিশ্চিত মৃত্যু জেনে বার বার ফ্লোরের মধ্যে নামাজের সিজদায় পড়েন। ছেলের জীবন ভিক্ষায় নামাজ পড়ছেন।
অচেতন ইকরাম রক্তে ভেজা জামা, প্যান্ট, ৪ খানা গামছা দিয়ে হাত পা মাথা মুখ জড়িয়ে মোড়ানো। সবগুলো কাপড় রক্তে ভিজে নিস্তেজ শরীর। নিরব নিথর দেহের রক্ত ঝরার মধ্যেই হাতে আসল ছাড়পত্র। এটাও কি সম্ভব। ইকরাম হাসপাতালের নতুন ভবনের ১০তলার সার্জারি বেড নং ৩ এ ভর্তি আছেন।
এ প্রতিনিধি সোমবার হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন ৩২টি আঘাতের রক্তাক্ত জখমী ইকরামের নাম কেটে ছাড় পত্র দিয়ে দিয়েছেন ডাক্তার।
প্রশ্ন করা হলো, কার আন্ডারে ভর্তি হয়েছেন ইকরাম। ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ডাক্তার শাহীন জোয়ার্দারের সাথে। তিনি বলেন, আমি জানি না। আমি কাটিনি। তবে এরকম নাম বাণিজ্য হাসপাতালের নতুন ঘটনা নয়।
এখানেও চলছে সালথার নোংরা রাজনীতির থাবা। জড়িয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও গ্রামের রাজনীতি।
ইকরামের অভিযোগ, ‘আমি বেড থেকে উঠে বসা তো দুরের কথা, এপাশ ওপাশ করাতে দুই জন লোক লাগে।
এর মধ্যে আমার নাম কেটে ছাড়পত্র হাতে ধরিয়ে দিলেন নার্স। অর্ডার নাকি ইন্টার্নি ডাক্তারের।
কর্তব্যরত ডাক্তার শাহিন রোগীর স্বজনদেরকেও বললেন, নাম কাটলো কে? আমি কাটিনি।
গিয়ে দেখা যায়, ইকরামের শরীরের আঘাতের জায়গা থেকে এখন টপ টপ করে রক্ত ঝরছে। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের ইকরামকে কমপক্ষে ৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। কর্তব্যরত ডাক্তার বলছেন, ইকরাম কে বাঁচাতে আরো রক্ত দিতে হবে। সারা শরীরের দগদগে ঘা, উপচেপড়া রক্তের চিহ্ন। রড ও দা’য়ের আঘাতে ফুলে ফুটে উঠেছে সারা দেহ ভরে। উপচে উঠছে রক্ত পানি রস। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে উঠা ইকরাম অল্পতে অলৌকিক শক্তিতে প্রাণ ফিরে পাওয়া মানুষটি গত দুই রাত মরণ যন্ত্রণায় কাতরিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালে কোন রকম চোখ খুলে। গত দুই দিনে এক ফোটাও পানিও খেতে পারেনি ইকরাম।
একমাত্র ছোট বোন পিয়া রক্তাক্ত জখমী ভাইয়ের মুখে রোববার সকালে একটা কলা রুটি তুলে দেয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই আসলেন ছাত্র ডাক্তার ও নার্স। নার্স ও এক ইন্টার্নি চিকিৎসক এসে বললেন, ‘ইউ আর অল রাইট এন্ড এ্যব্রিথিং ওকে এন্ড ইউ গো হোম এন্ড বেড রেস্ট।” বলে ইকরামের ছাড়পত্র ধরিয়ে দিলো তার হাতে। এখানে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে ইনকিলাবকে এমনটাই বললেন ইকরামের মা-বোন। ছাড়পত্র বেডে আসার সময়ও ইকরাম কথা বলার শক্তিটুকু ফিরে পায়নি।
তার বোন ও তার সহকারীরা বলছেন, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী কাজী ইকরামের সাথে একি অমানবিকতা!
রক্ত ঝরার মধ্যেই হাতে আসল ছাড়পত্র। আমরা এর বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই। তার নাম কাটলো কে? এবং ছাড়পত্রই বা হলো কার স্বাক্ষরে। এমন অমানবিক কাজটি করলো ডাক্তার নাকি নার্স। বিষয়টির বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসবই নাকি সালথার নির্বাচনী এবং এলাকার আধিপত্যের ডামাঢোলের জানান দেওয়া একজন অশিক্ষিত ইউপি চেয়ারম্যান মাতব্বরের খেলা।
উল্লেখ্য, ইনকিলাবের সংবাদদাতা ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে সাংবাদিক কাজী ইকরামকে ফের হাসপাতালে ভর্তি রাখতে বাধ্য হন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
‘প্রতি বছরই সম্পদের হিসাব দিতে হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের’
গোয়ালন্দে চরমপন্থি দলের সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
দিসানায়েক : দিনমজুরের ছেলে থেকে শ্রলীঙ্কার প্রেসিডেন্ট
ভারতে মহাসংকটে ভোডাফোন-আইডিয়ার ভবিষ্যৎ
পর্তুগালে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বেজা বিএনপির সভা
‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু’ বলায় গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো কিশোরীকে
বিএনপির সমাবেশে হামলা-ভাঙচুরের দুই বছর পর আ.লীগের ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তার ভাবি শরীফা আক্তার
চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে জার্মানিতে
ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, গাজায় আরও ৪০ জনকে হত্যা
নতুন মামলায় সাবেক আইজিপি মামুন দুটি এবং আনিসুল একটিতে গ্রেপ্তার
কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না ট্রাম্প
নার্সিং কাউন্সিলের নতুন রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার
নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত
রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার
ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন
মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট
বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ
বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা