দেশের উন্নয়নে আর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ পরিহার করতে হবে। অহেতুক ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। অন্যদিকে যেসব অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে বা যেসকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সাধিত হয়েছে সে গুলো যেন টেকসই হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।বৈদেশিক মুদ্রা যেন অযথা ব্যয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিদারিদ্রের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদেরকে ঘর করে দেয়া হয়েছে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আসবাপত্র, পাটজাত দ্রব্য,হস্ত-কারুশিল্পকে গামেন্টস শিল্পের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সুনীল অর্থনীতির আওতায় সমন্বিতভাবে সমুদ্রের সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শূন্যপদে নিয়োগের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। পদোন্নতির সময় নারী কর্মকর্তারা যেন অন্যায়ভাবে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রথাগত আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে অতিক্রম করে সংবেদনশীল ও জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া আত্নপ্রত্যয়, আত্নমর্যাদা ও আত্নবিশ্¦াস নিয়ে সচিবদের কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রথম সচিব সভায় অনুষ্ঠিত সভায় ৩৫টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই এসব নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের জোর তাগাদা দিয়েছে সরকার। গত ৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি ইতিমধ্যে সকল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদপ্তর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, নতুন সরকারের প্রথম সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য সকল সচিবদের ব্যক্তিগত মনযোগ আকর্ষণ করে চিটি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের হার কতদুর সম্পন্ন হয়েছে সে বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমাণের ৪টি স্তম্ভ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি,স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ গঠন নিশ্চিত করতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের করনীয় চিহিৃত করে সমাবন্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম যথাযথভাবে সহয়তা করতে হবে। আইন-প্রনয়ন পদ্ধতি ও সংসদের কার্যপ্রণালীসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে সহায়তা করতে হবে। প্রশ্নোত্তর পূর্বে সংসদের মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যক্রম চিহিৃত করে কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়মিত পরিবীক্ষণ করতে হবে। বলা হয়েছে, সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে মূল্যেস্ফীতি হ্রাস সর্বাত্নাক প্রচেষ্টা নিতে হবে। মূল্যস্ফীতির হার যেন প্রবৃদ্ধির হারের নিচে থাকে সে লক্ষ্যে সমম্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। নিত্যপ্রয়েজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি এবং বাজার ব্যবস্থা নিয়মিত পরিবিক্ষণ করতে হবে এবং সমম্বিতভাবে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। পণ্য পরিবহনের পথে চাঁদাবাজি বন্ধের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজস্ব আদায়ের পরিমান বৃদ্ধি কল্পে করজাল (ট্যাক্স নেট) সম্প্রসারণ করতে হবে। কেউ যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন স্থলবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরগুলোকে অটোমেশন করতে হবে। কর-ভ্যাট-শুল্ক ফাঁকি দেয়ার সব ধরনের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনুকুল পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেন সহযোগিতার অভাবে ফেরত না যায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং কোনো প্রতিকুলতা থাকলে তা দ্রুত দুর করতে হবে। নির্দেশনার মধ্যে আরো উল্লেখ্য রয়েছে, সরকারি ব্যয়ে মিতব্যয়ী হতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা যেন অযথা ব্যয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে সকল প্রকল্প অল্প ব্যয় করলেই সমাপ্ত হয়ে যাবে, সেগুলো দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য,পূর্ব-ইউরোপ,জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল বা বা দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। জুট জেনোম আবিস্কার হওয়ায় পাটের বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
সচিব সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সচিব সভায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সকলকে আন্তরিক হতে বলেছেন। অনাবাদি জমি চায়ের আওতায় আনার গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে চরাঞ্চলে বাদাম, শষ্যসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিল চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই তিন ফসলী জমি নষ্ট করা যাবে না, সে দিকে কর্মকর্তাদের নজর রাখতে হবে। খাদ্য, সবজি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে সহায়তা করতে হবে। বিদ্যু ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। সেচযন্ত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্টান এবং প্রয়োজ্যক্ষেত্রে শিল্পকারখানায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সার্ভিস সেক্টরে সাটিফিকেট কোর্সসহ মানস্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যুগের পরিবর্তন ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। বই মেলাকে ক্রমান্বয়ে উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিশোর গ্যাং এবং ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু-কিশোররা নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে কি- না তা পরিবীক্ষণ করতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের আলোকে সাময়িক শাসনের জারি করা অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে যে ১৬টি আইন এখনো বিযুক্তিকরণ সম্পন্ন হয়নি সেগুলো বিযুক্তিকরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শূন্যপদে নিয়োগের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া নিয়মিত পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। পদোন্নতির সময় নারী কর্মকর্তারা যেন অন্যায়ভাবে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। পানিপ্রবাহ সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে বা অন্য কোনো কারণে নদীর পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করা যাবে না। সেচের কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির বদলে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। সুনীল অর্থনীতির আওতায় সমন্বিতভাবে সমুদ্রের সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পযর্টন বিকাশে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। দুর্নীতি দমন শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের একার কাজ নয়। এ বিষয়ে সকল মন্ত্রণালয়ও বিভাগগুলোকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারি সকল সেবা অনলাইনভিত্তিক করতে হবে।

এ বিষয়ে একাধিক সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। সকল জটিলতা দুর করে সহসা লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে তারা আশা ব্যক্ত করেছেন।