প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা বাগান মালিকদের

মহাসঙ্কটে চা শিল্প

Daily Inqilab ফয়সাল আমীন

২৭ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম

দেশে সর্বকালের সেরা রেকর্ড পরিমান চা উৎপাদন হয়েছিল গত বছর। ১৭০ বছরের চা শিল্পের ইতিহাসে এটি ছিল শ্রেষ্ঠতম অর্জন। অথচ মহাসঙ্কটের মুখে পড়েছে অর্থনীতির সম্ভাবনাময়ী এই শিল্প। বিরাজমান এ সঙ্কটের মধ্যে নতুন করে অনাবৃষ্টি, তীব্র রোদের কবলে পড়েছে চা-বাগানগুলো। অতিরিক্ত গরমে রেড স্পাইডারের আক্রমণের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক দিন আগের বৃষ্টিতে সতেজ ভাবে ফিরেছিল বাগানগুলো। কিন্তু এখন পুড়ছে প্রচণ্ড খরতাপে। সবমিলিয়ে মহাসঙ্কটের মুখে পতিত সিলেটের চা বাগানাগুলো।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড তাপমাত্রা হয় গত শনিবার ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা তেজিভাবে আগামী কয়েকদিন উঠা নামার মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এদিকে, চায়ের নিলাম বাজারে দাম না ওঠায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হিমশীম খাচ্ছেন বাগান মালিকরা। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। তাই অনেক বাগান মালিক শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেন না। এমন সমস্যা ও নানামুখী সঙ্কটের তথ্য তুলে সোচ্চার হয়েছেন বাগান মালিকরা। সে লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার সিলেট ও মৌলভীবাজারে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করেছেন স্মারকলিপি।

স্মারকলিপিতে চা বাগান মালিক নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগান শ্রমিকদের মজুরী দিতে পারছে না। সমস্যাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলাম মূল্য সঙ্গে নূন্যতম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করলে চা শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন চা-বাগান মালিকরা। এছাড়া রোধ করতে হবে চায়ের চোরাচালান। পঞ্চগড়ের চা জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও দুঃখজনক ভাবে সত্য যে, ওখানে চা উৎপাদনের কোন নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কোন ভ্যাট পরিশোধ না করে উৎপাদিত এ চা বিক্রি হচ্ছে অবৈধভাবে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চায়ের নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পাওয়াতে বাধার সৃষ্টি করছে। ছোট-বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক ঋণ নিয়ে থাকে এবং চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩% করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব। বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ, রুম ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী।

চা বোর্ডের বাধ্যতামূলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার উপর জোর দেয়া। বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তাই এই সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূর্ণ করে উৎপাদন বাড়াানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সদয় দিকনির্দেশনা চেয়েছেন বাগান মালিকরা। এছাড়া, ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে ফ্যাক্টরিতে সবুজ কাঁচা চা পাতা (যা পচনশীল) প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চায়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চা ফ্যাক্টরিগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে। অপরদিকে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা আমদানির জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণসহ চা শিল্প বাঁচাতে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর।

অন্যদিকে, হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, তীব্র রোদে অনেক বাগানের পাতা মৃয়মাণ। নালুয়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম বলেন, গত বছর যে সময়ে ২৮ হাজার কেজির মতো পাতা সংগ্রহ করা হয়, এ বছর এই সময় পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার কেজি পাতা। খরায় চা উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। গাছের কুঁড়ি শক্ত হয়ে যাওয়ায় পাতা তোলা যাচ্ছে না। চা উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা নতুনভাবে শুরু করা দরকার: ল্যাভরভ

ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা নতুনভাবে শুরু করা দরকার: ল্যাভরভ

রাজশাহী বাঘায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মারা গেলেন আ.লীগহ নেতা বাবুল

রাজশাহী বাঘায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মারা গেলেন আ.লীগহ নেতা বাবুল

ইউক্রেনের যুদ্ধে হতাহতের জন্য দায়ী সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ইউক্রেনের যুদ্ধে হতাহতের জন্য দায়ী সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেট অনুমোদন দিল এফডিএ

ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেট অনুমোদন দিল এফডিএ

আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ২১ নেতা -কর্মী কারাগারে

আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ২১ নেতা -কর্মী কারাগারে

দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় সুন্দরবনের মধু জিআই মর্যাদা হারিয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় সুন্দরবনের মধু জিআই মর্যাদা হারিয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ধূমপানের ভিডিও ঘুরছে চোখে চোখে !

এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ধূমপানের ভিডিও ঘুরছে চোখে চোখে !

প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি- এডভোকেট মনজিল মোরসেদ

প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি- এডভোকেট মনজিল মোরসেদ

খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন : মির্জা ফখরুল

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের এক বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়ল

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের এক বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়ল

মুক্ত জীবনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ফিরেছেন তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায়

মুক্ত জীবনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ফিরেছেন তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায়

বৃষ্টি কমছে, কমছে নদ-নদীর পানি দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি, সিলেটে বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ আপাতত ৮ শত কোটি!

বৃষ্টি কমছে, কমছে নদ-নদীর পানি দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি, সিলেটে বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ আপাতত ৮ শত কোটি!

ভারতকে করিডোর দিয়ে শেখ হাসিনা খাল কেটে কুমির এনেছেন: রিজভী

ভারতকে করিডোর দিয়ে শেখ হাসিনা খাল কেটে কুমির এনেছেন: রিজভী

মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে আরও এক বছর থাকছেন আমিন উল্লাহ নুরী

মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে আরও এক বছর থাকছেন আমিন উল্লাহ নুরী

যুক্তরাষ্ট্রকে কি শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা করার মূল্য দিতে হচ্ছে : প্রশ্ন দ্য ডিপ্লোম্যাট

যুক্তরাষ্ট্রকে কি শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা করার মূল্য দিতে হচ্ছে : প্রশ্ন দ্য ডিপ্লোম্যাট

দু’পক্ষের মারামারির পর মাদ্রাসায় আগুন, নারীসহ আহত ৭

দু’পক্ষের মারামারির পর মাদ্রাসায় আগুন, নারীসহ আহত ৭

আইএসডি’র উদ্যোগে কার্নেগি মেলন রোবোটিক্স সামার ক্যাম্প আয়োজিত

আইএসডি’র উদ্যোগে কার্নেগি মেলন রোবোটিক্স সামার ক্যাম্প আয়োজিত

পরিকল্পনার অভাবে ইউরোপের শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে রাবিড নেতৃবৃন্দ

পরিকল্পনার অভাবে ইউরোপের শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে রাবিড নেতৃবৃন্দ

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতি ও ইকো-ট্যুরিজম সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতি ও ইকো-ট্যুরিজম সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশমন্ত্রী

মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর

মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর