ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে

জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে নেয়া হবে নতুন প্রকল্প

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০২ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন এবং কারও মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দেশে। এ লক্ষ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বলা যায়, মাঝপথেই শেষ হচ্ছে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প। যদিও নতুন আঙ্গিকে সরকারি অর্থে অথবা ইউনিসেফের সহায়তায় নতুন করে প্রকল্প নেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ এর আওতায়, কোনো শিশু জন্মের পর তার নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য সরকার নির্ধারিত নিবন্ধক নির্দিষ্ট ডেটাবেজে সংরক্ষণ করেন এবং নিবন্ধন সনদ দেন। একইভাবে কোনো মৃত ব্যক্তির নাম, মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান, লিঙ্গ, পিতা/মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর নাম নির্ধারিত নিবন্ধক কম্পিউটারে এন্ট্রি করেন ও ডেটাবেজে সংরক্ষণ করে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়, শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে ১৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় সর্বশেষ চার বছরে (২০২০ থেকে ২০২৩ সালে) জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৫ জনের। একই সময়ে ২১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জনের মৃত্যু নিবন্ধন হয়। গত চার বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ২০২২ সালে। ২০২২ সালে জন্ম নিবন্ধন হয় ২ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ জনের। একই বছরে মৃত্যু নিবন্ধন হয়েছে ৬ লাখ ৪৫ হাজার জনের। নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আনতে চায় সরকার।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (১ম পর্যায়) শীর্ষক পাইলট প্রকল্প শুরু হয় ২০০১ সালে। ২০০৬ সালে শেষ হওয়া এ পাইলট প্রকল্পে সহায়তা করে ইউনিসেফ। এ সময় মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত আগের আইন রহিত করে ১৮৭৩ সালের জন্ম আইন ও ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরপর ২০০৬ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা কর্যকর হয় ২০০৬ সালের ৩ জুলাই।

সর্বশেষ চার বছরে জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৫ জনের। একই সময়ে ২১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জনের মৃত্যু নিবন্ধন হয়। গত চার বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ২০২২ সালে, ২ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ জনের। পরবর্তীতে ইউনিসেফের সহায়তায় ২০০৭ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (২য় পর্যায়) প্রকল্প নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালে শেষ হওয়া এ প্রকল্পে ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পন্ন করতে তৈরি করা হয় সফটওয়্যার, যা চালু হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে। প্রথম পর্যায়ে ২৯ জেলায় অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। এর আওতায় ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩ কোটি ৭৬ লাখ জন্মনিবন্ধন করা হয় অনলাইনে।

একই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (৩য় পর্যায়) প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ২০১৬ সালে শেষ হওয়া এ ধাপের প্রকল্পেও সহায়তা করে ইউনিসেফ। এ পর্যায়ে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশি সব নাগরিকের অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। তবে জন্ম ও মৃত্যু যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া। ফলে ২০১৬ সালের জুনে ৩য় পর্যায়ের প্রকল্প শেষ হতেই জুলাই মাসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় কার্যক্রম শুরু করে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্প এখন এ কার্যালয়ের আওতাধীন।

এছাড়া প্রকল্পে নতুন একটি খাত অন্তর্ভুক্তিসহ ৮ খাতে ব্যয় বেড়েছে। উল্টোদিকে ব্যয় কমেছে ২১ খাতে। এ সব খাতের ব্যয় সমন্বয় করে আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) জাতীয় ডেটা সেন্টারে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সার্ভারে র‌্যাক স্পেস রয়েছে। এ র‌্যাক ভাড়া বাবদ বিসিসিকে পরিশোধ করতে হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এতে অতিরিক্ত এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া হার্ডওয়্যার বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। এসব ব্যয় সমন্বয়ে প্রকল্পটি সংশোধন হচ্ছে।
সার্ভার র‌্যাক স্পেস চার্জ বাবদ আগেই এক কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা বিধি-বহির্ভূত বলছে পরিকল্পনা কমিশন।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল (যুগ্ম সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। তবে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, এটা রাজস্ব খাতের আওতায় চলছে। নতুন করে সরকারি অর্থায়নে আবারও এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হবে। তবে তার আগে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করবো। দরকার হলে সরকারি অর্থায়নে নতুন করে প্রকল্প নেয়া হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

বার্সা চাইলে ফিরতে প্রস্তুত ব্রাভো

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

চোটে পড়ে মৌসুম থেকে ছিটকেই গেলেন টের স্টেগেন

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ইন্টার মায়ামি ছাড়ছেন মেসি?

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

ডেভিস কাপ দিয়ে কোর্টে ফিরছেন নাদাল

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে