অর্থনীতিতে সরকারের পাঁচ চ্যালেঞ্জ
০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
অর্থনীতিতে সরকার বর্তমানে পাঁচ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বলে মনে করে গবেষনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- কম রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব আদায়ের সুযোগ কমে আসা, সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা অব্যাহত থাকা ও তারল্য কমে আসা, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্র চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পাওয়া এবং রিজার্ভ অবস্থার অবনতি। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা। ২০১৯ সাল থেকে খাদ্যমূল্য বিবেচনা করলে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি। আয় কম, কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হয়। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। ধনী ও গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। গরিবের আয় বাড়েনি। সিপিডি’র মতে, নিত্যপণ্য, বিলাসী পণ্যে পরিণত হচ্ছে। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ১০৫ টাকা, কিন্তু দেশে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকার ওপরের। ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনির দাম। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে শুধু চাল কিংবা ভাতা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই বলে মনে করছে সিপিডি। তারা বলছে, নি¤œ আয়ের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা দিতে হবে। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়ছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের ভূমিকা রাখতে পারছে না। রাজস্ব আহরণের ফাঁকফোকর বন্ধ করার তাগিদ দিয়ে সংস্থাটি বলছে, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণ খুব জরুরি না। রবিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ঢাকায় সিপিডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা। নিত্যপণ্য এখন বিলাসি পণ্যে পরিণত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২০২৪ সালের মে মাসে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম কত বাড়ল, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। যেমন মসুর ডালের দাম ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এক কেজি মসুর ডালের (বড় দানা) দাম ছিল ৫৫ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দাম কেজিপ্রতি ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৫৩ টাকা হয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৮৪ শতাংশ বেড়ে উঠেছে ১৫০ টাকায়। একই সময়ে পাম তেলের দাম বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। এখন পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৩০ টাকা। সিপিডি আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। গত সাড়ে ৫ বছরে এর দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে। এক কেজি চিনির দাম এখন ১৩০ টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এক কেজি চিনির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৯ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ টাকা। এ ছাড়া গত সাড়ে পাঁচ বছরে গরুর গোশতের দাম ৫৮ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমদানি শুল্ক কমিয়ে পণ্যে দাম কমানোর চেষ্টায় সুফল মিলছে না। শুল্ক কমানোর সুফল কিছু আমদানিকারক ব্যবসায়ী নিয়ে যাচ্ছেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর মর্জির ওপর বাজার চলতে পারে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে ১৭টি দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি এবং খাবারে পেছনে মাথাপিছু খরচের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে ওই ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম, ৭ হাজার ৮০৫ ডলার। এটি ২০২২ সালে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে ডলারের হিসাবে। অথচ ওই ১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ ৯২৪ ডলার। এই তালিকায় অন্য ১৬টি দেশ হলো ইরান, ভারত, লাওস, শ্রীলঙ্কা, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া, বলিভিয়া, মরক্কো, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, জর্ডান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাস মহামারিতে অর্থনীতি যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল পরের বছর কিছুটা কমে এলেও সঙ্গে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নীতির দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যর্থতা। এগুলো ধারাবাহিকভাবে চলেছে।
তিনি বলেন, এ সব চ্যালেঞ্জ চলতি বছরেই নতুন না। আগের বছরেও ছিল। এগুলো মোকাবিলা করতেই সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারে গেছে, ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই সংস্কার কর্মসূচি বড় ধরণের কোনো ফল দেবে, এখন পর্যন্ত তা চোখে পড়েনি। সরকারের সামনে দুটি পথ রয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর সামগ্রিক স্থিতিশীলতা। উচ্চ প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে এগুলো উচিত। কিন্তু সরকারের সূচকগুলো ধরার ক্ষেত্রে এক ধরণের গতানুগতিক পথে রয়েছে। সূচকগুলো উচ্চ লেবেলে ধরা হয়। চলতি ২০২৪ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। এডিপি বলছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, আইএমএফ বলছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, বিশ্ব ব্যাংক বলছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যে প্রবৃদ্ধি সরকারি সংস্থাগুলো দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরও কম প্রাক্কলন করছে। আমরা দেখতে চাই এই নি¤œ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পেরেছে কিনা। তা না পারলের দুদিক থেকে ক্ষতি হবে।
বাজেটের প্রাক্কলনে সরকার গতানুগতিক ভুল পদ্ধতির ওপর রয়েছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রথম ছয় মাসের হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে। এখানে ছয় মাসের মূল সূচকগুলো নেওয়া হয়েছে এবং একই সাথে যেগুলোর তথ্য উপাত্ত নেই সেগুলোর ক্ষেত্রে বাজেটে যে টার্গেট ধরা হয়েছিল সেটি ধরে প্রবৃদ্ধির এই হিসাব করা হয়েছে। এই পদ্ধতিকে আমরা ভুল (ভ্রমাত্মক) বলে মনে করি। কারণ, যে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে অর্জন করা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। সেই বাজেটের প্রাক্কলন যদি এখনকার প্রাক্কলন করা হয় তাহলে সেটিও অর্জনযোগ্য হবে না। যেটা আগের বছরগুলোয় আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতে এখনো যেখানে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব সেখানে বৃদ্ধি; সিলেট ও দক্ষিণাঞ্চলের এক ফসিল জমিকে কমপক্ষে দুই ফসলি জমিতে রূপান্তর; সৌদি আরবের মতো যে সব দেশে লোক বেশি গেলেও সে হারে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা এবং ডলারের ক্রলিং প্যাকের মাধ্যমে ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি