যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) বিশ্বসেরা ১ হাজার ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ১৫ বিশ্ববিদ্যালয়। এ দৌঁড়ে অনেক দূর এগিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে এবার কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৫৫৪। এছাড়া পূর্বের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে ৭৬১-৭৭০তম এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত কিউএসের ওয়েবসাইটে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে দেশের আরো ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০-এর মধ্যে স্থান পেয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়।
কিউএসের ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস ২০২৫: টপ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিজ’ শীর্ষক এ র‌্যাঙ্কিংয়ে এবার সারা বিশ্বের ১ হাজার ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের মোট ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে৷
বিভিন্ন সূচকে প্রতিষ্ঠানটির র‌্যাঙ্কিংয়ে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (৯০১-৯৫০), বেসরকারি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় (১০০১-১২০০তম)। ১২০১-১৪০০ এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১ হাজার ৪০০-এর পরে আছে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)।
জানা যায়, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করলেও ২০১০ সালে আলাদা হয়ে যায় কিউএস। এর পর থেকে আলাদাভাবে র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করে আসছে তারা। কিউএসের প্রকাশিত সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাকে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য র‌্যাঙ্কিংগুলোর একটি মনে করা হয়। এই র‌্যাঙ্কিংয়ে এখন ৯টি সূচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মান নিরূপণ করা হয়। প্রতিটি সূচকে ১০০ করে স্কোর থাকে। সব সূচকের যোগফলের গড়ের ভিত্তিতে সামগ্রিক স্কোর নির্ধারিত হয়।
কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ের সূচকগুলো হলো একাডেমিক খ্যাতি (একাডেমিক রেপুটেশন), শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি (সাইটেশনস পার ফ্যাকাল্টি), কর্মসংস্থান (অ্যামপ্লয়মেন্ট আউটকামস্), চাকরির বাজারে সুনাম (অ্যামপ্লয়ার রেপুটেশন), শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত (ফ্যাকাল্টি-স্টুডেন্ট রেশিও), আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি রেশিও), আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক (ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ নেটওয়ার্ক), আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রেশিও) ও স্থায়িত্ব (সাসটেইনেবিলিটি)।
২০২৫ সালের জন্য সদ্য প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক স্কোর ২২ দশমিক ৪০। এর মধ্যে একাডেমিক খ্যাতিতে ২৩, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতিতে ২ দশমিক ৯০, কর্মসংস্থানে ৯৩ দশমিক ৭০, চাকরির বাজারে সুনামে ৪৫ দশমিক ৬০, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে ১১ দশমিক ২০, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত ১ দশমিক ৬০, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্কে ৫২, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাতে ১ এবং স্থায়িত্বে ১১ দশমিক ৮০ স্কোর করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অবশ্য এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পাওয়া বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনোটিরই সামগ্রিক স্কোর উল্লেখ করেনি কিউএস। কিউএসের ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০-এর মধ্যে ছিল। ২০২৪ সালের র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুটা উন্নতি হয়। অবস্থান হয় ৬৯১-৭০০তম। এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে আরও উন্নতি করে ৫৫৪তম অবস্থানে উঠে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের প্রকাশিত কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে বুয়েটের অবস্থান ছিল ৮০১-১০০০তম। এ বছরের র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অবস্থান ৭৬১-৭৭০তম।
কিউএসের এবারের র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের ১ হাজার ৫০৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১০০-তে ১০০ স্কোর নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। ৯৮ দশমিক ৫০ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন। ৯৬ দশমিক ৯০ স্কোর নিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আছে তৃতীয় অবস্থানে। চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ৯৬ দশমিক ৮০। আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ৯৬ দশমিক ৭০। এরপরের সেরা দশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড, সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যের ইউসিএল, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৫০টি ও পাকিস্তানের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কিউএসের প্রকাশিত এই র‌্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেয়েছে।###