দেশে বছরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু
১১ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ঢাকার বায়ুদূষণ ছিল বিগত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ বছরের শুরু থেকে সে দূষণ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার বাতাস ১২ দিনই ছিল দুর্যোগপূর্ণ। আর বাকি দিনগুলি ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। ফেব্রুয়ারি মাসেও ঢাকার বাতাস ৮ দিন ছিল দুর্যোগপূর্ণ আর বাকি দিন খুবই অস্বাস্থকর ছিল। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢাকাবাসী অস্বাস্থ্যকর বাতাসে নি:শ্বাস নিয়েছেন। শুধু ঢাকা নয় দেশের অন্যান্য শহরের বাতাসও বেশ দূষিত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বায়ুদূষণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এ কারণে বছরে জিডিপির ক্ষতি হচ্ছে শতকরা ৮ ভাগ। এই বায়ুদূষণে ৩০ শতাংশ দায়ী পাশের দেশ ভারত। শুধু তাই নয় দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসে দিন দিন বাড়তে থাকা দূষণ উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি পড়ছে বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ুর ওপর। এই দেশের গড় আয়ু থেকে প্রায় ৭ বছর হারিয়ে যাচ্ছে বায়ু দূষণের কারণে। দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত এক কর্মশালায় সম্প্রতি এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালার মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ভারত থেকে উন্মুক্ত আকাশ বেয়ে আসা দূষিত বাতাস বাংলাদেশের বাতাসকে দূষিত করছে। এ ছাড়া স্থানীয় ইটভাটা, উন্মুক্ত স্থানে জ্বালানি, ময়লা আবর্জনা, ট্রাকে মাটি-বালি পরিবহন বায়ুকে দূষিত করছে। তাই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে সব সংস্থা ও জনপ্রতিনিধির সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
পরিবেশবিদরা বলেন, বাতাস এমন একটি মাধ্যম, যা ধনী-গরিব সবার স্বাস্থ্যের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুদূষণের উপাদান সমূহ যেমন বস্তুকণা, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড কার্বন, মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন দূষণের পরিমাপ করে সেসব দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি ও বায়ুমানের কোন ক্ষতি করা যাবে না।
দেশে বছরে সাড়ে ১৩ কোটি টন মাটি ইটভাটায় ব্যবহার হয়। এতে পরিবেশ ক্ষতির পাশাপাশি বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ১৮ ভাগ এবং ইটভাটায় ১১ ভাগ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ব্যবহারেও বায়ুদূষণ হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (এনটিইউ) গতকাল প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবসৃষ্ট নির্গমন ও দাবানলের মতো অন্যান্য উৎস থেকে ছড়িয়ে পড়া দূষণে বিশ্বজুড়ে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। এল নিনো এবং ভারত মহাসাগরের ডাইপোলের মতো আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাতাসে দূষণের ঘনত্বকে তীব্র করে তুলছে। এর ফলে দূষণকারী অন্যান্য উপাদানের ওপর এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।
গবেষকরা বলেছেন, বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর ক্ষুদ্র কণাগুলো শ্বাসের সাথে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এই বস্তুকণা রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করার মতো যথেষ্ট ছোট হওয়ায় তা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বস্তুকণা পিএম-২.৫ হলো বাতাসে থাকা সব ধরনের কঠিন এবং তরল কণার সমষ্টি, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন প্রাণঘাতী ক্যানসার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫। এছাড়া বায়ু দূষণকারী আরেক পদার্থ এনও ২ প্রধানত পুরোনো যানবাহন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প স্থাপনা, আবাসিক এলাকায় রান্না, তাপদাহ এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।
ডব্লিউএইচও বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন বলছে, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এরচেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অনেক শহরের বাতাসে এসব কণার মারাত্মক উপস্থিতি রয়েছে। এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল সাময়িকীতে প্রকাশিত সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, ১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুর সঙ্গে ওই সূক্ষ্ম কণার সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট, ফুসফুসের সমস্যা, স্ট্রোক ও ক্যানসারসহ যেসব রোগের বা অবস্থার চিকিৎসা আছে কিংবা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, সেসব রোগে আক্রান্তরা মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে কম বয়সে মারা যাচ্ছেন। আবহাওয়ার এসব বৈরী ধরন ১৪ শতাংশ মৃত্যু বাড়িয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এনটিইউ বলেছে, দূষণ সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ওই সময়ের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এশিয়ায়। ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এশিয়ায় এসব ঘটনায় ৯ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যুতে ভূমিকা রেখেছে পিএম-২.৫ দূষণ। যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন চীন এবং ভারতে। এছাড়া বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং জাপানেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। এই চার দেশে একই সময়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পিরোজপুরে সাইকেল র্যালি
আসিফ নজরুলের আশ্বাসে মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুকদের আন্দোলন স্থগিত
চাঁদপুর মেঘনায় অবৈধ বালুবহনকারী দুটি বাল্কডেসহ আটক ৮
ভিক্ষা না করার শপথ দিলেন ১৫ জন ভিক্ষুক
কুলাউড়ায় মাটি পাচারকালে ৩ ট্রাক আটক মুলহোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে
কুমিল্লায় নাশকতার মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি
আটঘরিয়ায় স্কাউট ৯ম ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সমাবেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের ওপর হামলা
পঞ্চগড়ে চার বিচারক অপসারনের ২৪ ঘন্টা আলটিমেডাম
ঢাকাগামী বিমানে বোমা হামলার বার্তা এসেছে পাকিস্তানি নম্বর থেকে
কমলনগরে মেডিকেলে চান্স পাওয়া দরিদ্র কৃষকের মেয়েকে 'প্রেসক্লাবের' সংবর্ধনা
‘সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কৃষক ছাড়া কেউ ঢুকবে না’
হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে ডাকা মানববন্ধনে বিএনপি নেতার ভাইয়ের নেতৃত্বে ফের হামলা, সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান এরদোগানের
নোয়াখালীতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা
সাভার ডেইরী ফার্ম শ্রমিকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার
দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে
বোমা হামলার ভূয়া খবরে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে, প্রশংসিত নিরাপত্তা বাহিনী