প্রাণ ফিরছে ধরলায়
২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম
দীর্ঘ দিন ধরে নদীর পানি প্রবাহে উজানে ভারতের বাঁধা সৃষ্টির ফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে আসছিলো। ধরলা নদীর ৪০.০০ কি:মি: এলাকায় ড্রেজিং উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের কারণে নদীভাঙন রোধে নৌ-পথ- নদীর প্রাণ ফিরে আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া নদীর পানি কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন কৃষি জমি বাড়বে অন্যদিকে মাছের উৎপাদন ও সেচ কার্যক্রম সুফল পাবে কৃষকরা। দেশের নদীভাঙন রোধে বড় নদীগুলোকে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের (বড় পরিসরে খনন) পাশাপাশি পুরো বছর নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ নদী ড্রেজিং প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ধরলা নদীর ডানতীরে কুড়িগ্রাম শহর। নদীটির দৈঘ্য ৬০ কিলোমিটার এবং গড় প্রশস্থ ১.২ কি.মি। ধরলা নদী আকার গতভাবে খুব গতিশীল এবং প্রকৃতিগতভাবে ক্রমাগত তার গতিপথ পরিবর্তন করা। ধরলা নদীর ড্রেজিং সংক্রান্ত বিষয়ে গত ২০২৩ সালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাপাউবো, কুড়িগ্রাম দপ্তরের কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাগণ, নদী ড্রেজিং বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের ট্রাস্টি বডি আইডব্লিউএম এর প্রতিনিধিরা সভা করা হয়। সভায় ধরলা নদীর ড্রেজিং কাজ দ্রুত শুরু করার লক্ষে ড্রেজিংকৃত মাটি/বালি ধরলা নদীর উভয়তীরে বাপাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে, খাস জমিতে এবং নীচু জমিতে স্তুপ রাখার বিষয়ে মতামত জানানো হয়। সে আলোকে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ২টি প্যাকেজে ৭টি লটে ৭টি বেসরকারী কোম্পানীর ১৪টি কাটার সাকশন ড্রেজার দ্বারা কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ৪০.০০ কি:মি: এলাকায় ধরলা নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হয়।
এ বিষয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন,প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, প্রজেক্ট বেজড অ্যাপ্রোচ এবং ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মহাপরিকল্পনায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হলে ধরলা তার প্রাণ ফিরে পাবে। আবার এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অর্থনীতি পাল্টে যাবে।
জানা গেছে, ধরলা নদী বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির মধ্যে একটি। এ নদীর মূল চ্যানেলের উৎপত্তি হয়ে ভারতের কুচবিহারে। পাটগ্রামের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে লালমনিরহাটের মোগলহাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। নদীটি উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। নদীর ডানতীরে কুড়িগ্রাম শহর। নদীটির দৈঘ্য ৬০ কিলোমিটার এবং গড় প্রশস্থ ১.২ কি.মি। ধরলা নদী আকার গতভাবে খুব গতিশীল এবং প্রকৃতিগতভাবে ক্রমাগত তার গতিপথ পরিবর্তন করে। ধরলা নদী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি, সদর এবং উলিপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। এ নদীর ভাঙ্গন এবং জেগে উঠা চর গুলোর কারণে কুড়িগ্রাম জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা বন্যা দেখা দেয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’’ শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২০১৮ একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পটির অনুমোদিত বাস্তবায়নকাল গত ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত। প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো নদী পথের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা বাণিজ্যকে সমৃদ্ধশালী ও প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের নিমিত্ত খননসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদন। বর্তমানে আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন স্থানে খনন এবং আনুষঙ্গিক কাজ চলমান রয়েছে। ধরলা নদীর মিলিত স্থান উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদ হতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ২৫.০০ কি.মি. নাব্যতা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং প্রায় ৩৭.০০ লক্ষ ঘনমিটার খনন কাজ সম্পূর্ন হয়েছে। নাব্যতার সৃষ্টির ফলে নদী পথের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবসা বাণিজ্যক সমৃদ্ধশালী ও প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের মাধ্যমে জীবনযাত্রা এবং আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং ধরলা নদীর ভাঙ্গনের হাত হতে রক্ষা পাবে। আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় জুন ২০২৫ পর্যন্ত ধরলা নদীর মিলিত স্থান উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদ হতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ২৫.০০ কি.মি. নাব্যতা রক্ষা করার জন্য ড্রেজিং কাজ চলমান থাকবে। পরবর্তীতে বিআইডব্লিউটিএ’র সংরক্ষন ড্রেজিং এর আওতায় নাব্যতা রক্ষা করার জন্য ড্রেজিং কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল কমিটির অনুমোদনক্রমে ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল সদর উপজেলায় সরকারী খাস- বাপাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জায়গা ১৯টি এবং ব্যক্তিগত নীচু জমি ২২ টি মোট ৪১টি, উলিপুর উপজেলায় খাস জায়গা ৩টি এবং ফুলবাড়ি উপজেলায় খাস জায়গা ১টি সর্বমোট ৪৬টি স্থান নির্ধারন করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টি স্থানে ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ফেলানো সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে পানি বৃদ্ধির কারনে ড্রেজিং কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি হ্রাসের সাথে নদীতে নাব্যতা সমস্যা দেখা দিলে ড্রেজিং কাজ পুনরায় শুরু করা হবে। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন,নদীর প্রবাহ যেন ঠিক থাকে। কারণ ভাঙনের প্রধান কারণ নদীর পানি যখন কমে যায় তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। তাই এসব বড় নদীতে বড় পরিসরে খনন করে পুরো বছর একটা ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা থাকতে হবে। নিয়মিত নদী খনন করতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা প্রজেক্ট বেজড অ্যাপ্রোচ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, প্রজেক্ট বেজড অ্যাপ্রোচ থেকে সরে এসে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। কিন্তু মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব ড্রেজার দরকার। কিন্তু বড় নদীগুলোতে স্টাডির মাধ্যমে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে নদীর ডান ও বাম তীর সংরক্ষণের প্রকল্প যে ঘন ঘন আসছে, হয়তো তখন একই নদীতে এরকম এত প্রকল্প আসবে না।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারের বিভিন্ন প্রকল্পের চারটি লটে মোট খরচ হবে ৩৩৬ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এসব প্রকল্প তদারকি করছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-৩ এর লট-১ এর পূর্ত কাজ ৬১ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার ২০৩ টাকায় এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনকে দেওয়া হয়েছে। ৯৮ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৯২৮ টাকার প্যাকেজ-৪ এর লট-২ এর পূর্ত কাজ পেয়েছে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স ও ক্যাসেল কনস্ট্রাকশনের জয়েন্ট ভেঞ্চার। প্যাকেজ-৪ এর লট-৩ এর পূর্ত কাজে খরচ হবে ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৫ টাকা, সেই কাজ ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্সকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্যাকেজ-৪ এর লট-৪ এর পূর্ত কাজ ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৫ টাকায় সোনালী ও এনডিই এর জয়েন্ট ভেঞ্চারকে দেওয়া হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের চারটি ক্রয় প্রস্তাব ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি প্রস্তাবে অর্থের পরিমাণ ৪৪৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ টাকা। সম্পূর্ণ অর্থই সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করা হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জুলাই অভ্যুত্থান নৃশংসতা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হবে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন
ফের বিমানবন্দরে হুমকির বার্তা, শাহজালালে নিরাপত্তা জোরদার
চীনে শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত
যশোরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শাহীন চাকলাদারের ৪ বছরের কারাদণ্ড
যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ৩
ইট বৃষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে দৌঁড়ালেন শ্যামনগরের ইউএনও রনী খাতুন
মানিকগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক গ্রেফতার
ঘরের মাঠে আর্সেনালের সহজ জয়
মাহমুদুল্লাহ-রিশাদ নৈপুণ্যে জিতে প্লে অফের বরিশালের এক পা
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান