বাংলাদেশ ভারতের কাছে জিম্মি : মির্জা ফখরুল
২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম
বাংলাদেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানির সমস্যা রয়ে গেছে, সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার একটি কথাও বলছে না। আসলে তারা দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। মানবন্ধনে নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনের সড়কের এক পাশে সারিবন্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মুহুর্র মুহুর্র শ্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সাথে যেসমস্ত চুক্তি, সমঝোতা করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে তিনি আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কি রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশুনা করবার জন্য পরামর্শ দেন। আমি তার কথার গুরুত্ব দিতে চাই না। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সঙ্গে বিদ্রোহ করবেন না, বেঈমানি করবেন না। মানুষকে বোকা বানিয়ে, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি করার সাহস করবেন না, এমন কোনো সমঝোতা স্মারক সই করবেন না যেটা আমার দেশের আমার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কি এনেছেন এবার ভারত সফরে গিয়ে? তিস্তার পানি বন্টনের চুক্তি করে পারেননি। তিস্তা প্রকল্পের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, যে আমরা দুইটার মধ্যে দেখেেবা কোনটা ভালো হয়। আবার সব শেষে একথা বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে তাদেরকে যদি আমরা কাজটা দেই তাহলে আমাদের পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা সব বোকা মানুষগুলো এদেশে বাস করি! আপনি তিস্তার পানি সমস্যাকে বাতিল করে দিলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের সমস্যার সমাধান আর হলো না, সমস্যাই রয়ে গেলো। এবার আপনারা একটা দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটা কথাও আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এই সফরে বললেন না। আমাদের সরাসির প্রশ্ন আপনাদের কাছে যে, আপনাদের এতো বন্ধুত্ব যে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্ব, আপনারাই বলেন। তাহলে পৃথিবীর কোন বন্ধু দেশ আছে তার সীমান্তে বন্ধুরা গুলি করে হত্যা করে তার বন্ধু দেশের মানুষকে? এর জবাব আপনাদের দিতে হবে। আপনারা অনেক কথা বলেছেন। আমি বলি, আপনারা আত্মরক্ষার জন্য যে সমস্ত কথা বলেছেন, এই সমস্ত কথা বলে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না।
খালেদা জিয়ার সাজা দীর্ঘায়িত করতেই সরকার সাজা স্থগিতের চালাকির আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছর বেশি জীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে ছিলেন। তারপরে নিয়ে আসা হয়েছে পিজি হাসপাতালে, সেখানে তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে সাজা স্থগিত করে। এখানে আরেকটা চালাকি আছে, ছয় মাস, ছয় মাস করে সাজা স্থগিত করছে তার মানে সাজা কিন্তু কমছে না। সেই সাজা আবার গুনতে হবে ভবিষ্যতে যখন তাদের প্রয়োজন হবে, এটা হচ্ছে আরেকটা চালাকি। অর্থাৎ আরো বেশি দীর্ঘায়িত করা হবে।
তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্যটা ছিলো, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া। তাকে সরিয়ে দেয়া মানে এদেশের জাতীয়াবাদী আন্দোলনে নেতৃত্বকে সরিয়ে দেয়া, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সরিয়ে, উন্নয়নের পক্ষের শক্তিকে সরিয়ে দেয়া। এটা ছোটখাটো ব্যাপার নয়, এটা হচ্ছে একটা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ব্যাপার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্য্যে আমরা দ্রব্যমূল্য উধর্বগতির বিরুদ্ধে, অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে, দুর্নীতি-ব্যাংক লুট, পাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি, সেটা সম্পূর্ণভাবে সামগ্রিক আন্দোলনের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্দোলন। কেনো? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র এক অভিন্ন, একে আলাদা করা যাবে না। যদি দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারি, আমরা গণতন্ত্রকেও মুক্ত করতে পারব। আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই এবং দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে যে অন্যায়ভাবে আটক করে রেখেছে, তার মুক্তি চেয়ে সবাই কথা বলুন, সোচ্চার হোন, আন্দোলনে শরিক হোন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কেনো আমাদের নেত্রী আইনি সহায়তা পাচ্ছে না। কারণ সকলে জামিন পায়, খালেদা জিয়া পায় না। আজকে আইনি প্রক্রিয়াকেও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাধাগ্রস্থ করেছেন। তিনি ৪০২ ধারা নিজের হাতে নিয়ে শর্তসাপেক্ষে বন্দি অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়াকে বাসভবনে রেখেছেন। আমরা কারো করুনা-কৃপা চাই না। আমরা আমাদের অধিকার জনগণকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করবই।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি মানেই জনগণের মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি এই কথাটা সত্য। এই সত্য উপলব্ধি করে, এই চেতনায় রাজপথে নামব। জেল-আর মৃত্যু এটা আমাদের জন্য অবধারিত। তাই আর কাউকে ছাড় দেবো না। লড়াই আমরা করব, লড়াই বাধা আসলে সেই বাধা অতিক্রম করব। আমরা আর চুপ করে ঘরে বসে থেকে মার খেতে রাজি না। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন শুধু ঢাকার নয়া পল্টন নয়, সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।
ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিবাদ: মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, যে হসপিটাল ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) অ্যাম্বুলেন্স দিতে অস্বীকার করেছে সেই হাসপাতালের আমি একজন পরিচালক। আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও লজ্জিত যে, এই ধরণের একটা গর্হিত কাজ, একটা মানবিক সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে এটা কিভাবে সম্ভব? আমি কথা দিতে পারি যে, আগামী বোর্ড মিটিংয়ে আমি এটা খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করব এবং আমি এটা প্রোটেস্ট করব।
তিনি বলেন, আজকাল প্রতিটি প্রতিষ্ঠান- সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক, হসপিটাল হোক যেকোনো প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) সব কিছুই এই সরকার কবজায় নিয়ে গেছে। যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত, মানুষের টাকায় পরিচালিত সেগুলোকে এখন মুষ্টিমেয়ে কয়েকজন লোকের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। অতএব এ থেকে মুক্তি পেতে হলে, আমাদের নেত্রীকে মুক্তি করতে হলে রাজপথে নেমে এই স্বৈরাচারি সরকারকে উৎথাত করতে হবে।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফরিদা ইয়াসমিন, যুব দলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্পিন ঘূর্ণির পর অভিষেক ঝড়ে পাত্তাই পেলনা ইংল্যান্ড
জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী কবির ভূঁইয়ার সমর্থনে আখাউড়ায় আনন্দ মিছিল
ইরানের এআই গবেষণায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ
অষ্টগ্রামে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ১২
দাম কমলো গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির
মঠবাড়িয়ায় বিয়ের ৫ দিনের মাথায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু
চুরির অর্থ ফেরাতে বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
নারীদের সঙ্গে উলঙ্গ ছবি তুলে দু’কোটি টাকার মুচলেকা আদায়ের অভিযোগ
চালক ও পথচারীদের যে বিশেষ নির্দেশনা দিল ডিএমপি
সিংগাইরে ট্রাক ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-১
শেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত
জুলাইতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফাতে সরকারের পদত্যাগের দাবি ছিল না : জুয়েল
সাংবাদিক আবেদ খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
কোটালীপাড়ায় বান্ধাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক বিএনপির সম্মেলন
চালের বাজারের সিন্ডিকেট ধরতে পারছি না: কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফুলপুরে ভারতীয় চোরাই চিনি ও জিরাসহ ২ যুবককে আটক করেছে যৌথবাহিনী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক সিদ্ধান্তে মানুষ ক্ষুব্ধ: হাসনাত
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই: জিএম কাদের
উপজাতি-ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা আদিবাসী হলে আমরা কি পরবাসী?
‘জনস্বার্থ মামলার রায় ভলিউম-২’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন