রাসূল (সা.) কে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে
২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মহাপরাক্রমশালী, সকল ক্ষমতার উৎস, কূল-কায়েনাতের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট একদিন সকল বিষয়ে জবাব দিতে হবে। প্রত্যেকটি নিঃশ্বাসের, মুহুর্তের হিসেব কড়ায়গন্ডায় বুঝে নিবেন তিনি। তাঁর নিয়ামত ভোগ করে তাঁরই সঙ্গে নাফরমানি করছিনাতে? আল্লাহর রাহে জীবন কুরবান করার মত মানসিকতা রয়েছেতো আমাদের? নিজেকে সেভাবে তৈরী করতে পেরেছিতো, যেভাবে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। ক্ষমতা যিনি দান করেন তাঁর সঙ্গে নাফরমানি করার দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। আমাদের ধ্বংসের জন্য রাব্বুল আলামীনের কোন পরিকল্পনারও দরকার পরে না। খতিব উপস্থিত মুসল্লিদের সতর্ক করে বলেন, সময় থাকতে নিজেদের শুধরেনিন। রাব্বুল আলামীন আমাদের এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। আমাদের সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো আল্লাহর গোলামি করা। নিজের জীবন, যৌবন, সম্পদ, জ্ঞান সকল কিছুই তাঁর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে।
খতিব বলেন , আমরা পুনরুত্থানের পর বিভীষিকাময় কিয়ামত দিবসের কথা ভুলে দুনিয়াবী চিন্তায় মগ্ন। যেদিন রহমান-রহীম গুনবাচক নামসমূহকে উপেক্ষা করে তিনি কাহ্হার নামের বৈশিষ্ট ধারণ করবেন, সেদিন নিজেদের সমগ্র জীবনের হিসেব আমাদের হাতে তুলে দেয়া হবে এবং বলা হবে পড়। জান্নাত-জাহান্নাম ও সকল হিসেব নিকেষের পূর্বে আল্লাহর নিকট পাঁচটি প্রশ্নের জবাব প্রত্যেককে দিতেই হবে। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, প্রদত্ত হায়াত তথা জীবন কিভাবে অতিবাহিত করেছ? যৌবন কাল কোন কাজে ব্যয় করেছ? ধন-সম্পদ কিভাবে অর্জন করেছ? এবং উহা ব্যয় করেছ কোন পন্থায়? অর্জিত ধর্মীয় জ্ঞানের কিরূপ ব্যবহার তথা আমল করেছ? এসকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য। তদুপরি যদি আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে বেড়াই, গুনাহে লিপ্ত হই অকাতরে, স্রষ্টার দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করি, অসৎ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ি, সঠিকভাবে যাকাত প্রদান না করি, নিজের জ্ঞান ও মেধাকে ভাল কাজে ব্যবহার না করি, সেক্ষেত্রে পরিত্রানের কোনই উপায় থাকবে না। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ, কোন বান্দার দুই পা (কেয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে। কিভাবে তার জীবনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কী আমল করেছে; কোথা থেকে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে তা ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে (তিরমিজি ২৪১৭)। সেইসকল মানুষের জন্য সুসংবাদ যারা নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছে, মহামূল্যবান যৌবন কাল ইবাদাতের মধ্যে কাটিয়েছে, সৎ ও হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছে, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করেছে, সঠিকভাবে যাকাত-ফিতরা, কুরবানী, হজ্জসহ আর্থিক ইবাদাতসমূহ পালন করেছে এবং কুরআন-হাদীসসহ দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করে তার সঠিক আমল করেছে। তাদের কোন চিন্তাও নেই ভয়ও নেই।
যে জীবন ক্ষমতা ও সম্পদ আকড়ে রাখার কাজে ব্যয় করছেন কিয়ামতের দিন সে সম্পদ ও প্রভাব আপনার কোনই কাজে আসবে না। আল্লাহর নিকট যৌবন কালের ইবাদাত সবথেকে দামি। সুতরাং সময় থাকতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে ফিরে আসুন অন্যথায় দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে লাঞ্চিত, অপমানিত এবং ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো.রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসতে হবে রাসূল (সা.)কে। সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল (সা.) কে জীবন দিয়ে ভালো বেসেছেন। রাসূল (সা.) এর আদর্শকে অনুসরণ করেই আমাদের জীবন পরিচালিত করতে হবে। খতিব বলেন, অতিসম্প্রতি পবিত্র হজ শেষ হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, হজ কবুল হয়েছে কী না কিভাবে বুঝবা। হজের পরে যদি আমলের দিক দিয়ে পরিবর্তন আসে তা’হলের বুঝবে হজ কবুল হয়েছে। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের জীবনীকে পর্যালোচনা করা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যেই সকল কাজ করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো.মনিরুল ইসলাম গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তার বান্দাকে কখনো সুস্থ অবস্থায় এবং কখনো অসুস্থ অবস্থায় রাখেন। মুমিন বান্দার জন্য উভয়ই কল্যাণকর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মু’মিনের বিষয়টি নিয়ে আমি আশ্চর্যজনক। তার সব কিছুই কল্যাণকর। মু’মিন বান্দা ছাড়া এটা আর কারো জন্য হয় না। মানুষ যখন কোন কল্যাণ সাধন করে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন তখন সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আবার সে যখন কোন মুসিবতে পড়ে এবং ধৈর্যধারণ করে সেটাও তার জন্য কল্যাণকর। কোন মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ হয় অথবা সফর হালাতে থাকে তখন সে সুস্থ এবং মুকিম অবস্থায় যে সকল আমল করতো সে সকল আমলের সওয়াব অব্যাহত রাখা হয়।
তাছাড়া হাদিসে কুদসিতে এসেছে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন: যখন কোন বান্দাকে নিষ্পাপ করে জান্নাতে নিতে চাই তখন তাকে ক্ষুধা ও রোগ দিয়ে কষ্ট দিয়ে তারপর দুনিয়া থেকে নিয়ে যাই। তাই বলতে হয় অসুস্থতা একটি বড় নেয়ামত। তবে সুস্থতাও একটি বড় নেয়ামত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমরা আল্লাহর কাছে সুস্থতার নিয়ামত বেশি করে প্রার্থনা কর।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন। ১৪৪৫ হিজরী বর্ষ বিদায়ের দারপ্রান্তে, আমাদের জীবন থেকে একটি বছর ফুরিয়ে গেলো। ইরশাদ হচ্ছে,; হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে।” (সূরা হাশর - ১৮)। এই আগামীকাল হল আখিরাত। এর বিপরীত আজ হল দুনিয়ার জীবন। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’লার এ কথার তাৎপর্য হল আজকের ক্ষণস্থায়ী দিনের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে কালকের চিরস্থায়ী জীবন যেন বরবাদ হয়ে না যায়। তার সময়, সম্পদ, সামর্থের যাবতীয় পুঁজি এখানকার সুখ-সম্ভোগেই ব্যয় করে ফেললো, তো কালকের সেই দিনে তার কোন আশ্রয় থাকবে না। তাই বুদ্ধিমান হল সে, যে আগামীকালের জন্য চিন্তা করে, ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
রাসূল (সা.) বলেছেন,”বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আত্মসমালোচনা করল ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করল। আর নির্বোধ আর অক্ষম হল সে, যে নিজের নফসের অনুসরণ করে, আর আল্লাহর কাছে কল্যাণের আশা করে” (তিরমিযী) হাদীসে উল্লেখিত ‘মান দানা’ নাফসাহু বাক্যাংশের তাৎপর্য হল কিয়ামতের দিন আত্মাকে হিসাবের সম্মুখীন করার আগেই ব্যক্তি দুনিয়াতেই নিজেই নফসের হিসাব নিকাশ করে নিবে। উমর (রা.) বলতেন, “তোমার হিসাব নেয়ার আগেই তুমি নিজেই নিজের হিসাব কর এবং সেই মহাসমাবেশে হাজির হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার হিসাব নেয় কিয়ামতের দিন তার হিসাব অত্যন্ত হালকা ও সহজ হবে।” (তিরমিযী ) হাসান বসরী বলেন, যারা দুনিয়াতে আত্মসমালোচনা করবে কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার হিসাব হালকা হবে।
খতিব বলেন, শয়তান বরাবরই নিষিদ্ধ কাজগুলোকে কল্যাণ ও উন্নয়নের মোড়ক পড়ায়। আদম (আ.) কে সে বলেছিল- ঐ গাছের ফল খেলে তারা ফিরিস্তা হয়ে যাবেন, অনন্ত জীবন লাভ করবেন এবং চিরস্থায়ী রাজত্বের অধিকারী হবেন। (আরাফ : ২০) আজকেও সে ধারণা অব্যাহত। উলঙ্গপনাকে আধুনিকতা বা শিল্প; নাটক-সিনেমায় অশ্লীলতা ও ব্যভিচার হল বিনোদন। কোনোটা সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে কোনোটা আবার খেলার নামে। চলছে জুয়ার অবাধ চর্চা, খেলা-বিনোদন-সংস্কৃতি চর্চার নামে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সময়ের অপচয় চলছে দেদারসে। এভাবে পাপগুলো আজ আর পাপের নামে হয় না। সেগুলোকে সুন্দর সুন্দর নামের মোড়ক পড়ানো হয়েছে। গুনাহর কাজ গুনাহই। আমি-আপনি তাকে সুন্দর নামে ডাকলে তার চরিত্র বদলে যাবে না। আল্লাহ আমাদের মৃত্যু পরবর্তি জীবনের সফলতার ফিকির করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪১ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল জব্দ

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প