মসজিদের ইমাম নিয়োগ ও খুতবার নির্দেশনা দেয় সরকার
২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। ২০২৩ সালের এ প্রতিবেদনে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা ও বৈষম্যের দিক তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে সমুন্নত রাখা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ধর্মীয় বৈষম্য। বলা হয়েছে, সব ধর্মের মানুষের জন্য সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। দেশটিতে বিভিন্ন ধর্মের জন্য রয়েছে আলাদা পারিবারিক আইন। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানেও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংখ্যালঘুদের ওপর নানা ধরনের বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদেনে।
বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, সরকার মসজিদে ইমাম নিয়োগ ও অপসারণে প্রভাব খাটিয়ে গেছে। দেশজুড়ে ইমামেরা তাঁদের খুতবায় কোন বিষয়বস্তু তুলে ধরবেন, এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় সরকারের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশেষ আইন কার্যকর করা, সরকারি চাকরিতে তাঁদের জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এ কর্মসূচির প্রতিক্রিয়ায় সরকার অক্টোবরের মধ্যে একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করার ঘোষণা দেয়; কিন্তু বছর শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগে এক নারীকে বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপের ফতোয়া দেওয়ায় গত বছরের এপ্রিলে একজন ইসলামি-বিশেষজ্ঞ ও তিনজন গ্রামপ্রধানের বিরুদ্ধে আইনভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। দেশে সহিংসতার ঘটনার ওপর নজরদারি করা সংগঠনগুলোর একটির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ২২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন (এনজিও) ও কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ইসলাম ও হিন্দুধর্ম থেকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ব্যক্তিদের হয়রানি, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ করেছেন।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, আহমেদনগরে গত বছরের (২০২৩) মার্চে তাঁদের বার্ষিক সম্মেলনে শত শত লোক হামলা চালান। এ সময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও অন্য সরকারি কর্মকর্তারা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সহিংসতায় দুজনের মৃত্যু হয়, আহত হন অনেকে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক’শ বাড়িঘরে লুটতরাজ ও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলা চালানো হয় আহমদিয়াদের একটি মসজিদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও।
ওই ঘটনার পর পুলিশ কয়েক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে। গ্রেফতার করা হয় সহিংসতার কথিত উসকানিদাতারাসহ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা অব্যাহতভাবে বলেছেন, মুসলিম জনগোষ্ঠীর ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারণে’ ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, বিশেষ করে হিন্দুধর্মের লোকজনকে নিশানা করে সরকার প্রায়ই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনের প্রয়োগ করেছে।
অধিকাংশ ঘটনায় ফেসবুকে কথিত অবমাননাকর মন্তব্য করায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমনটা নেওয়া হয়নি।
ধর্মীয় স্বাধীনতা : বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট ও অন্যান্য ধর্মের মানুষের জন্য সমমর্যাদা ও সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, এমন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ক্ষতিকর’ বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের জন্য জরিমানা বা দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাজা রাখা হয়েছে দণ্ডবিধিতে। তবে এই নিষিদ্ধ বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা দণ্ডবিধিতে নেই। সরকারকে ‘নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী বা ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য অবমাননাকর’ ভাষা ব্যবহার করা সংবাদপত্র, সাময়িকী বা অন্য প্রকাশনার সব কপি জব্দ করার অনুমতি দিয়েছে ফৌজদারি আইন। অনলাইন প্রকাশনার ক্ষেত্রেও একই বিধিনিষেধ এ আইনে আরোপ করা হয়েছে।
দেশে নির্দিষ্ট কোনো ব্লাসফেমি আইন না থাকলেও ইসলাম ধর্মক্ষুন্নকারী কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে থাকে কর্তৃপক্ষ।
সহিংসতায় দায়ীদের সাজা দিতে ব্যর্থতা : ২০২১ সালে দুর্গাপূজার উৎসব চলাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ সাজা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগে সরকারের সমালোচনা করে আসছেন হিন্দু নেতারা। তবে তারা উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের দুর্গাপূজা সামনে রেখে সরকার অতিরিক্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ধর্মীয় সম্প্রীতি উৎসাহিত করতে আন্তধর্মীয় সংলাপ আয়োজনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সেবারের উৎসবে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক : গত বছরের ২৭ মার্চ রাজধানীর গুলশানে পবিত্র কোরআন শিক্ষার একটি কেন্দ্র থেকে পুলিশ ১৭ জনকে আটক করে। তারা পবিত্র রমজান মাসে নিয়মিত রাত্রিকালীন প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পরে আরো চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন; যাঁরা বন্দী স্বজনদের জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন।
নারী-শিশুসহ আটক এসব ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশ বলেছে, তারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। এ ঘটনায় দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পুলিশ আটক ব্যক্তিদের কারো কারো বাসা থেকে বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধারের দাবিও করেছে; যা হাস্যকর।
ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য : জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ হাজার হাজার মসজিদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় পরিচালিত হয়। এ ফাউন্ডেশন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন। এসব মসজিদের ইমাম ও কর্মীর বেতন হয় সরকারি অর্থায়নে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এসব মসজিদের দেখভাল করে না; তা করে পরিচালনা কমিটিগুলো। এসব কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসকেরা।
মসজিদের ইমামদের নিয়োগ ও অপসারণে থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ। দেশজুড়ে ইমামদের খুতবা প্রদানের বিষয়েও নির্দেশনা দিয়ে থাকে সরকার। ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, সব মসজিদের ইমামই সাধারণত সরকারি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক খুতবা এড়িয়ে চলেন।
গত জুনে এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করে, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য যে বরাদ্দ, তা তাদের প্রতি ‘অসম্মান, অবহেলা ও বৈষম্যের’ পরিষ্কার প্রমাণ। কেননা, ধর্মীয় খাতে বরাদ্দের বড় অংশ যাচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে। এক বিবৃতিতে এই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কল্যাণে বরাদ্দ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটের মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। পরিষদ বলেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আক্রমণাত্মক মন্তব্য, কুড়িগ্রামে একজন হিন্দু কবির ওপর হামলা ও ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় কুমিল্লায় মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে তারা ওই বিক্ষোভ আয়োজন করেছিল। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গ্রেপ্তার দুজন ও যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুবসংগঠনের সদস্য।
ঢাকায় গত বছরের ১৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে একটি নারী সংগঠন যেসব মুসলিম নারী নেকাব পরা পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রে ছবির বিষয় ঐচ্ছিক রাখার ব্যাপারে সরকারের কাছে অনুরোধ জানায়। সংগঠনটি বলেছে, যেসব নারী নেকাব সরাতে অস্বীকার করেছেন, তাঁদের পরিচয়পত্র না দেওয়া মানবাধিকারের লংঘন।
সংগঠনটির আহ্বান ছিল, ওই নারীদের পরিচয় শনাক্তে আঙুলের ছাপ বা চোখের আইরিস স্ক্যান ব্যবহার করার। তা ছাড়া কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের মুখমণ্ডল দেখতে চায়, সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া বৈঠকে নারী কর্মকর্তাদের দিয়ে তা যাচাই করা যেতে পারে।
ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২৩ রিপোর্টে’ বাংলাদেশ-সম্পর্কিত মূল্যায়নে বলা হয়, রাজনীতিতে ও সরকারি সংস্থায় ধর্মীয়, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব সীমিতই রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘু নিপীড়ন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে ভারতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর, বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ওপর সহিংস হামলা, শারীরিক লাঞ্ছনা ও তাদের প্রার্থনাগৃহ ধ্বংসের উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের সমপদাধিকারী ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে ধারাবাহিকভাবে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন’।
প্রতিবেদনের বিষয়ে ওয়াশিংটনের ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারত সরকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ মুসলমান এবং ২ শতাংশের বেশি খ্রিস্টান। মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেতে দেখছে। তিনি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সম্প্রতি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের ক্ষমতায় এসেছে।
মার্কিন প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ভারতে ধর্ম পরিবর্তন রোধের আইন, ঘৃণাসূচক মন্তব্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা গৃহ ও বাসাবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আমরা দেখছি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে বলছেন, ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং চীনকে মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের কাছে নয়াদিল্লির গুরুত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত ভারতের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে সংযত থাকে।
মার্কিন প্রতিবেদনে কয়েক ডজন ঘটনা তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মুম্বাইয়ের কাছে একটি ট্রেনে একজন রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক তার এক ঊর্ধ্বতন সহকর্মী ও তিন মুসলিমকে গুলি করে হত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেদনে মুসলিম পুরুষরা গরু জবাইয়ে অংশ নিয়েছে বা গরুর মাংস বিক্রি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
ভারত অস্বীকার করলেও মানবাধিকার কর্মীরা মুসলিমবিদ্বেষী ঘৃণামূলক বক্তব্য, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব আইন (যাকে জাতিসংঘ ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছে) এবং অবৈধ নির্মাণ অপসারণের নামে মুসলিমদের সম্পত্তি ধ্বংস করার দিকে আঙল তুলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত বছরের মে মাস থেকে সংখ্যালঘু কুকি, যারা মূলত খ্রিস্টান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মূলত হিন্দু মেইতেই নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হওয়া সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব আইন বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৩ সালে পাকিস্তান ও ভারতে ধর্মীয় নিপীড়ন এবং ধর্মনিন্দার অভিযোগের উদ্বেগজনক অবস্থার উপর আলোকপাত করেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তানে ৩২৯ জনের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭৫% মুসলিম, ২০% আহমদী এবং ৩.৩% খ্রিস্টান ছিল। ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লাসফেমির অভিযোগে ১৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মৃত্যুদণ্ড উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ) আপত্তিকর বিষয়বস্তুর জন্য উইকিপিডিয়াকে ডাউনগ্রেড করেছে এবং সরকারের অনুরোধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুােল ৭১ হাজারেরও বেশি ইউআরএল ব্লক করেছে। অতিরিক্তভাবে, সেনেট আগস্ট মাসে আইন পাস করেছে যা ব্লাসফেমির শাস্তি বাড়িয়েছে।
এটি আরো উল্লেখ করেছে যে, ২০২৩ সালে সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় সমাবেশ এবং ভবনগুলোর বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ চালায়, প্রাথমিকভাবে হিন্দু, খ্রিস্টান, আহমদী, শিখ, সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে। রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে তাদের বিশ্বাসের কারণে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়। ২৯ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিস্থিতির তীব্রতার ওপর জোর দিয়ে পাকিস্তানকে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪১ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল জব্দ

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প