নিয়োগ বাণিজ্য-কমিটি গঠন দ্বন্দ্বে মনিরামপুরে ৭০ মামলা
০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম
যত দ্বন্দ্ব বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাগুলোতে। কমিটি গঠন ও নিয়োগ বাণিজ্য দ্বন্দ্বে যশোরের মনিরামপুরের ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মামলা হয়েছে। মামলার কারণে শিক্ষার উপর প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের নির্ধারিত মিটিংয়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফয়দা লুটছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার। এ কারণে তাঁকে একাধিক মামলার বিবাদী করা হয়েছে। জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলায় এমপিওভুক্ত ১১৮টি মাধ্যমিক ও ৬৪টি মাদরাসা রয়েছে। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ২০২২ সালের অর্থ বরাদ্ধের পর তিনটি পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। পদ গুলো হল নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্ন কর্মী। এই তিন পদের বিপরীতে মনিরামপুর উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মচারী ছাড়াও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ল্যাব সহকারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগিদের লবিং গ্রুপিংয়ের সুযোগ নিয়ে ফায়দা লুটছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ প্রতি ১৫ লাখ টাকা, প্রধান শিক্ষক ১০ লাখ ও সহকারি প্রধান শিক্ষক ১০/১২ লাখ ছাড়াও ল্যাব সহকারি পদে ১৫ লাখ টাকা নেয়া রেওয়াজ রয়েছে। তবে, বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন অর্থ পেয়েছে এমন নজির চোখে পড়েনি।
সূত্র বলছে, এসব নিয়োগ বাণিজ্যের অধিকাংশ অর্থই ম্যানেজিং কমিটির সুবিধাভোগীদের মাঝেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে আসছে। বিকাশ চন্দ্র সরকার ২০১৮ সালে পহেলা আগষ্ট মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থের নিধারিত একটি অংশ ওই কর্মকর্তাকে দিতে হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। চাহিদা মত অর্থ যোগান না দিতে পারলে বেতন বিল করানোর ক্ষেত্রে বিড়ম্বণার শিকার হতে হয়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ বোর্ড করতে কর্মচারী পদে কর্মকর্তাকে সর্ব নিন্ম ৫০ হাজার ক্ষেত্র বিশেষ লাখ টাকাও দিতে হয়।
টানা ৬ বছরে এক উপজেলাকে চাকরি করছেন তিনি। সেই সুবাধে যশোর জেলা শহরের বেজপাড়া এলাকায় বিলাসবহুল ছয়তলা ভবন নির্মাণসহ অর্থবৈভবের মালিক বনে গেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার।
গত ২৩ মে উপজেলার ‘বোয়ালীঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ভুয়া নিবন্ধনধারী শিক্ষক আব্দুল মালেক এর নিয়োগ নিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। যার নং-৪৬৭/২৪। এ মামলার বাদী বোয়ালীঘাট উত্তরপাড়া গ্রামের মোস্তফা জামান মিলন।
চলতি মাসের ৯ জুন ‘মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ল্যাব সহকারি পদে নয়ন মন্ডল নামে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলাটি করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আলী আজম বাচ্চু। যার মামলা নং-২৩৬/২৪।
এসব মামলায় বিবাদী করা হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও উপজেলার ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠন নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যে ও কমিটি গঠন নিয়ে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল অবস্থানে দিকে যাচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের এসব অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে আসছে না। বরং এক শ্রেণীর সুবিধা ভোগী ব্যক্তিরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি গঠন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকসহ কমিটি গঠন কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলোর ম্যানেজিং কমিটির ব্যক্তিরা যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ না দিলে সেক্ষেত্রে শিক্ষা অঙ্গনে প্রভাব পড়ে। শুনেছি আগে নিয়োগ বাণিজ্য হতো, তবে এখন হয় কিনা জানা নেই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। দুই একটি নিয়োগ বোর্ড অতি গোপনে করা হয়েছে, যা আপত্তিকর।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, নিয়োগে যারা বাণিজ্য করে তারা তো করেই। যেখানেই নিয়োগ আছে, সেখানে কমিটি করতে গেলেই মামলা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। এ উপজেলার ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ম্যানিজিং কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মামলার কারণে শিক্ষা অঙ্গনে প্রভাব পড়ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদাহে। তবে যশোর শহরে একটি বাড়ি করে বসবাস করছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মেসির আচরণে ক্ষুব্ধ মেক্সিকোর সাবেক তারকা ফুটবলার
র্যাশফোর্ডের নতুন ঠিকানা বার্সালোনা?
জুলাই বিপ্লবের ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে : হাসান সরকার
তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টিকে অপসারণ করলেন প্রেসিডেন্ট
নরসিংদীতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ চলছে
কুষ্টিয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাচল করছে বালুভর্তি ড্রামট্রাক
আমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২ কোটি টাকা মূল্যের ১৬টি দোকান পুড়ে ছাই
ঘোড়াঘাটে সিসি ক্যামেরার সামনে থেকে দিনের বেলায় মোটরসাইকেল চুরি
ট্রাম্পের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন কঠিন হতে পারে
লেবাননের নতুন নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর প্রভাব কি হ্রাস পাচ্ছে?
টিকটককে ৭৫ দিন সময় দিলেন ট্রাম্প
আদানি পুত্রের বিয়েতে আসছেন টেইলর সুইফট!
বেনজীরের সাভানা ইকো রিসোর্টে এনবিআরের অভিযান, মিলেছে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকির প্রমাণ
৭ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার হবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা: আইন উপদেষ্টা
পঞ্চগড়ে তারুণ্যের উৎসবে বিনামুল্যে চক্ষু শিবির
আগামীকাল নেত্রকোণা জেলা যুবদলের সভাপতি মরহুম আল আমিন খান পাঠানের মৃত্যুবার্ষিকী
তুরস্কের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০, আহত আরও ৩২
কাল উত্তরায় আসছেন ধর্ম উপদেষ্টা ২ দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির শুরু কাল
কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা
জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফের বেড়া, বিজিবির বাধায় কাজ বন্ধ