ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১
প্রত্যয় স্কিম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের

কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও স্থবির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

Daily Inqilab বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আহুত সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দ্বিতীয় দিনেও সকল ধরনের সেবা বন্ধ রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা কিংবা দাফতরিক কার্যক্রম চালু ছিল না। ফলে একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব প্রফেসর নিজামুল হক ভূইয়া প্রত্যাখ্যানের এ ঘোষণা দেন। তবে প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘সেবক’ নামে যে স্কিমের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে যেতে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি শিক্ষকদের সুপারগ্রেড দেওয়ার দাবিও জানান।

তিনি বলেন, প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর সেবক নামে যে স্কিম হচ্ছে, সেখানে সবার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা হবে, আমরা সেখানে যাব। কোনো অসুবিধা তো নেই। দেশের স্বার্থে সবার জন্য যা হবে, আমাদের জন্য তা হবে।

এর আগে ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয়ের শুভযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের স্পষ্টীকরণ’ শিরোনামে এক বিজ্ঞপ্তি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬৫ বছরে অবসর সুবিধা, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন সুবিধা, পিআরএল ছুটি বহালের কথা জানানো হয়।

এ ব্যাখ্যার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, এতদিন কোথায় ছিল? আমরা এতদিন বিবৃতি-স্মারকলিপি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। সাড়ে তিন মাস আগে যদি আমরা জানতাম বয়সসীমা ঠিকই আছে, তাহলে শিক্ষকরা এত ক্ষুব্ধ হতেন না। আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য এখন একটা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের মার্কশিট, সদন, ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায় প্রতিদিন হাজার হাজার সেবাপ্রার্থীরা ভিড় জমায়। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ সর্বাত্মক আন্দোলনের ফলে দূরদূরান্ত থেকে আগত বহু সেবাপ্রার্থীকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। সেবাপ্রার্থীরা বলছেন এই অচলাবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সবকিছু থমকে যাবে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে পে-ইন স্লিপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাজীপুর থেকে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাসরুল্লাহ। ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত ৩ দিন যাবত এটা নিয়ে ঘুরতেছি, কিন্তু রেজিস্ট্রার ভবনের সকল ধরনের সেবা বন্ধ রাখায় তা করতে পারছি না। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থের বলি হতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের। যা খুবই দুঃখজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী আনোয়ার ইসলাম। চলতি মাসের ৪ তারিখে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ভাইভার জন্য সদন তুলতে এসেছেন প্রশাসনিক ভবনে। কিন্তু এসে দেখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস রেখে রাজপথে আন্দোলন করছেন। হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাকেও। এরকম আরো অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সেবাপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ সর্বাত্মক আন্দোলনে।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোতালেব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ১৯৭৩ সালের আদেশে চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পেনশন কাঠামো রয়েছে। এখানে পরিবর্তন আনতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সিন্ডিকেটে পাস হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ওপর এ পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ। অবিলম্বে এই পেনশন স্কিম প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দাবি মানলে আমরা এখনই কর্মবিরতি পালন করে কর্মস্থলে ফিরব।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিনও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষকরা। এ সময় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদাসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষক।

এসময় শিক্ষকরা পূর্বের মতোই তাদের তিনটি দাবি পেশ করেন। তাঁদের দাবি তিনটি হলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্ন্তভুক্তি করে ঘোষিত ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি সত্যি নানান কারণে খুবই ব্যথিত। কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যথিত যখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা ক্ষমতায়, অথচ জাতির সূর্যসন্তানদের এভাবে দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। ওনি যদি মানুষের ব্যথা না বুঝেন তাহলে এই দেশে এমন কেউ নেই যিনি তা বুঝবে। তিনি যদি তা না বুঝেন তাহলে আমরা জাতি হিসেবে খুবই দুর্ভাগা। আজকে দেশের এই শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাবি আদায়ে ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণা রেখে আন্দোলন করতে হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি দয়া করে বুঝুন। আমরা খুব সচেতনতার সাথে সংবিধান পড়ি। আমরা বুঝি- একটা দেশের সূর্যসন্তানদের পিছিয়ে রেখে একটা জাতিকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। আপনার কেবিনেটরা ফেইল করেছে, তারা একটা দেশের গবেষকদের চিনতে পারেনি, জাতির সূর্যসন্তানদের চিনতে পারেনি। শিক্ষকেদর এইভাবে কষ্ট দিয়ে কোনোভাবেই দেশের উন্নয়ন করতে পারবেন না।
ফার্মেসী অনুষদের প্রফেসর আব্দুল মুহিত বলেন, আমরা কখনো সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিরোধী নয়। আমরা শুধু প্রত্যয় স্কিমের বিরোধিতা করছি। কারণ এটা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য তৈরি করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. জিনাত হুদা বলেন, অনেকেই দেখছি আজ নানা ধরনের হিসাব নিকাশ, ক্যালকুলেশন বুঝানোর চেষ্টা করছে। বলি আমরা কারো চেয়ে কম বুঝিনা। সুতরাং গোজামিল বুঝিয়ে আমাদেরকে এই শুভঙ্করের ফাঁকি ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিবেন সেটা কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানবেনা। আমরা আমাদের সাধারণ জ্ঞান খাটিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই প্রত্যয় স্কিমে কী পরিমান অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমার শিক্ষক, আমার শিক্ষার্থী ও আমার সন্তানাদি। আজকে পেনশন কর্তৃপক্ষ থেকে একটি প্রেস রিলিজ প্রদান করা হয়েছে। একই কথা, একই বয়ান; আমরা যে প্রশ্ন উত্থাপন করছি সে ব্যাপারে কোন কথা সেখানে নেই।

পেনশন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোথায় আমাদের সুরক্ষা? মুখরোচক গল্পের মত কেউ কেউ বলছেন কেটে দিব, ছেঁটে দিব। আপনি কে কেটে দেওয়ার? এত ক্ষমতা আপনাদের কে দেয়? এত ক্ষমতা নিয়ে আপনারা নিদ্রা যান কিভাবে? আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারছে না, পরীক্ষা দিতে পারছে না। আপনারা বলছেন আমরা তাদের জিম্মি করেছি। জিম্মি তো আমরা তাদের করিনি, বরং এই বৈষম্যমূলক প্রত্যয় স্কিমের দ্বারা আপনারাই আমাদের জিম্মি করেছেন।

কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে সরাসরি কোন যোগাযোগ করা হয়নি। তবে পরোক্ষভাবে সরকারের ঊর্ধ্বতন পক্ষ থেকে কয়েকজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ রেখে কেন আমরা এই আন্দোলন করছি সে প্রশ্ন রাখছেন তারা। আমরা বলেছি আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা তাৎক্ষণিক সেটা প্রত্যাহার করব। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কষ্ট বুঝি, তাদের আমরা অতিরিক্ত ক্লাস, পরীক্ষা নিয়ে এ ক্ষতি পুষিয়ে দিব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: পেনশন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের কারণে গতকাল মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সকালে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা বেলা ১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। পাশেই নতুন ভবনের সামনে অস্থায়ী প্যান্ডেল করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দীন বলেন, সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বার্তা আসেনি। তাঁরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চান। দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চান। কর্মসূচি দীর্ঘস্থায়ী হলে শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়বে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে মমিন উদ্দীন বলেন, ‘অবশ্যই সংকটে পড়বে। তবে আমরা করোনার সময়ে এমন সংকট কাটিয়ে উঠেছি। আমরা আন্দোলনটি করছি, ভবিষ্যতে যেন মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: সার্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অচলাবস্থার কারণে সেশনজটের শঙ্কা করছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। তবে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা মেকআপ করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের পাশাপাশি হল প্রাধ্যক্ষের অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ থাকবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সেশনজটের মতো কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। আর যদি হয়ও তাহলে আমরা তা এক্সট্রা ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে মেকআপ করার চেষ্টা করব। ছুটির দিনে আমরা ক্লাস নিয়ে এটা করতে পারি। করোনা পার করে যেমন আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছি এবারও পারব।

তিনি আরো বলেন, এ আন্দোলন কিন্তু আমরা শিক্ষকদের জন্য করছি না; আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্যই করছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য করছি। গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি করে আসছি; তাতে কোনো কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ আন্দোলনে নেমেছি।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে ২য় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সাধারণ-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আলমগীর কবীর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

প্রত্যয় স্কিম বাতিলের যৌক্তিকতা তুলে ধরে শাবিপ্রবি শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা এবং গৌরব রক্ষায় গত মে ২০২৪ থেকে গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও সর্বাত্মক কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অদ্যাবধি যথাযথ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

শিক্ষকরা আরো বলেন, আমাদেরকে আজ রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বাসের ড্রাইভার কিংবা চা শ্রমিক আন্দোলন করলে সরকার সমঝোতায় আসে কিন্তু লজ্জার সাথে বলতে হয় গত ৩ মাস ধরে শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম সম্মানটুকু দিচ্ছে না। আমাদেরকে মেন্টালি দুর্বল মনে করা হচ্ছে তাই হয়তো আমাদের কথায় কর্ণপাত করছে না। আমরা দুর্বল নই, আমরা সারাদেশে আজ একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এক চুল পরিমাণ ও সরে দাঁড়াবো না। আমরা মাথা নত করতে চাইনা, একটা গোষ্ঠী শিক্ষক ও আমলাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার পায়তারা করছে,আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সর্বাত্মক কর্মবিরতে আন্দোলন চালিয়ে নিতে শিক্ষকদের কাছে আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, এই প্রত্যয় স্কিমের ফলে বেতন-বোনাস, উৎসব ভাতা কিছুই থাকবেনা আর ৩০/৪০ বছর পরে যে পেনশনের সুবিধা দেখানো হচ্ছে সেটা আমরা প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে কোনো বীমায় রাখলেও পাব তাহলে এই প্রত্যয়স্কিমের যৌক্তিকতা কি আমরা বুঝিনা। আমাদের কথা একটাই আমরা এটা মানি না, মানবো না এবং কোনভাবেই মানতে পারিনা। অবিলম্বে এই বৈষম্যমূলক নীতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ-সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের আন্দোলন তাদের বিরুদ্ধে যারা আমাদেরকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অচলাবস্থায় রয়েছে তাতে আমাদের কিছু করার নেই কেননা আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বুঝতে পারছি আমাদের শিক্ষার্থীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু এটা আমাদের অস্তিত্ব এবং মর্যাদার লড়াই, এত বৈষম্য মানা যায় না। যতদিন আমাদের এ দাবি আদায় না হবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট
ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন
এনআইবির মহাপরিচালক নিয়োগে সুপারিশ নিয়ে যা বললেন নাহিদ
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় আসছে
তৃতীয়বার কমলো স্বর্ণের দাম
আরও

আরও পড়ুন

নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের

নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার দাবি জাবি ছাত্রশিবিরের

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : সারজিস আলম

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই : সারজিস আলম

যশোরের ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা

যশোরের ঝিকরগাছায় শিশু কন্যাকে গলা টিপে হত্যা

ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় চীন বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট !

ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় চীন বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট !

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট

বেনাপোল : মণিরামপুরে হঠাৎ চুলকানিতে এক স্কুলের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থী হাসপাতালে

বেনাপোল : মণিরামপুরে হঠাৎ চুলকানিতে এক স্কুলের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থী হাসপাতালে

"আসিফের গানে মডেলিং করবেন ভাইরাল তরুণী ফারজানা সিঁথি"

"আসিফের গানে মডেলিং করবেন ভাইরাল তরুণী ফারজানা সিঁথি"

যশোরের মণিরামপুরে জামায়াত কর্মী আনিছুর হত্যার ঘটনায় মামলা

যশোরের মণিরামপুরে জামায়াত কর্মী আনিছুর হত্যার ঘটনায় মামলা

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের টানা দ্বিতীয় বিমান হামলা

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের টানা দ্বিতীয় বিমান হামলা

স্কুলে মাধ্যমিকে যুক্ত হচ্ছে আরবি, নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস

স্কুলে মাধ্যমিকে যুক্ত হচ্ছে আরবি, নেটিজেনদের উচ্ছ্বাস

মহেশপুর সীমন্ত থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৬ জন আটক

মহেশপুর সীমন্ত থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৬ জন আটক

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা

বিশ্ববাজারে নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনে ভক্সওয়াগন ও রিভিয়ানের চুক্তি

বিশ্ববাজারে নতুন প্রযুক্তির গাড়ি উদ্ভাবনে ভক্সওয়াগন ও রিভিয়ানের চুক্তি

মণিপুরের জ্বলছে, নারী ও শিশুসহ নিখোঁজ ৬

মণিপুরের জ্বলছে, নারী ও শিশুসহ নিখোঁজ ৬

গাজীপুরে আবারও ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরে আবারও ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন

ড.মুহাম্মদ ইউনুস জলবায়ু সম্মেলনে আজ দুপুরে ভাষণ দেবেন

আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে 'ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড'

আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে 'ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড'

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রোজি কবিরের ইন্তেকাল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রোজি কবিরের ইন্তেকাল

ঢাকা মহানগরীর ৫ থানায় নতুন ওসি

ঢাকা মহানগরীর ৫ থানায় নতুন ওসি

টেকনাফের হ্নীলা থেকে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ১ রাউন্ড গুলিসহ এক রোহিঙ্গা যুবক আটক

টেকনাফের হ্নীলা থেকে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ১ রাউন্ড গুলিসহ এক রোহিঙ্গা যুবক আটক