অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি শিক্ষকদের
০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আলোচনায় ডেকেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিষয়টি ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। গতকাল বুধবার দুপুরে এক অবস্থান কর্মসূচি শেষে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আহুত সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল বুধবার টানা কর্মবিরতির তৃতীয় দিনেও সকল ধরনের অ্যাকাডেমি ও দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিনও কোনো ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রশাসনিক ভবনের কিছু কক্ষ খোলা থাকলেও সেবা বঞ্চিত ছিল শত শত শিক্ষার্থী, সেবাপ্রার্থী।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলি পান্না সাহেবের টেলিফোনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব সকালে আমার সাথে কথা বলেছেন। তিনি আমাদের আন্দোলন সর্ম্পকে জানতে চেয়েছেন এবং আমাদের আলোচনায় ডেকেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল একটা সম্ভাব্য সময় তিনি আমাদের ডেকেছেন। আমরা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ৭ থেকে ৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল ওনার সাথে দেখা করতে যাব।
প্রফেসর নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা যে আনদোলন করছি তা অবশ্যই যৌক্তিক। সুতরাং আমাদের দাবি মেনে না নেওয়ার কোনো কারণ নেই। এ সময় তিনি শিক্ষকদের দাবি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা দিয়ে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছেন। কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে ওনাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের সাথে আলোচনার পর ওনি এই বক্তব্য প্রত্যাহার করবে।
এর আগে গতকাল বেলা ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে প্রায় দেড় ধরে এক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এসময় অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা বলেন, এ বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।
পেনশন কতৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা বলেন, অর্থমন্ত্রী! আপনি যে ভাষায় এই যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলেছেন আমরা সেদিকে প্রত্যাখ্যান করেছি। আপনার বক্তব্য গ্রহণ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে আপনাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি- আমাদের সাথে আলোচনায় বসুন, আমরা ক্যালকুলেশন তুলে ধরব, আমরা মানবতার দিক তুলে ধরব, তারপর আপনি দেখবেন কতটা যৌক্তিক আমাদের এই আন্দোলন। আমরা কিন্তু সার্বক্ষণিক মিডিয়াতে কথা বলছি, আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি; আপনি কেন আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন? এসময় পেনশন কতৃপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যারা এই স্কিম করেছেন, তাঁরা নিজেরা এর আওতায় আসুন এবং দেখুন। আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা পূর্বের ন্যয় ৩টি দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড চালু করা, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করা। এসময় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। গতকাল সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ’ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদক প্রফেসর শাহেদ রানা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি জারি রাখবো।
এ সময় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর শামছুল আলম বলেন, অর্থমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন অর্থমন্ত্রীকে আমরা চাই না, তার পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি যেভাবে শিক্ষকদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে আখ্যা দিলেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কখনোই অযৌক্তিক আন্দোলন করেননি। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও শিক্ষকেরা প্রাণ দিয়েছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সোহেল আহমেদ বলেন, প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন শিক্ষদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিলাম কিন্তু আমরা তার বক্তব্যে আহত হয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অথচ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় আপনারা ঠিক উল্টো চিত্র দেখতে পাবেন। কিন্ত আমাদের দেশে শিক্ষকদের ক্রমাগত অপমান করা যাচ্ছে। আমরা অনুরোধ করছি আপনারা এটি তুলে নিয়ে আমাদেরকে ক্লসে ফেরার সুযোগ করে দিন।
ফার্মেসি বিভাগের প্রফেসর সোহেল রানা বলেন, একটা কুচক্রী মহল আমাদেরকে নানাভাবে অবদমন করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষকদের যে সম্মান সেটি ফিরিয়ে দিয়ে আমাদেরকে এই ধরণের বৈষম্যমূলক স্কিমের আওতায় রাখবেন না।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর বশির আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে, আমাদেরকে গবেষণার স্বাধীনতা দিয়েছে, চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন। শিক্ষকদেরকে আলোচনার বাইরে রেখে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় নেওয়া এই ধরণের একটা সিদ্ধান্ত কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা গবেষণাগারে থাকতে চাই, আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এক হয়ে আন্দোলন করে যাব।
এদিকে এদিনও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রেখেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হল অফিসে তালা ঝুলছে। আবাসিক হল ও প্রশাসনিক অফিসগুলোতে স্বাক্ষর হচ্ছে না কাগজপত্র। এদিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারিতে হওয়া সেশনজট এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেকগুলো বিভাগই করোনা মহামারির একবছরসহ আরও অতিরিক্ত তিন থেকে ছয় মাসের সেশনজটে রয়েছে। এমনভাবে চলতে থাকলে সেশনজট আরো ভয়াবহ আকারে রূপ নেবে।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২
সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন
মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা
কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও
জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল
কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের
কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক
ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের
পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি
ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’
গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর
সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সত্যিই কি মারা গেছেন ম্যাশ? কি বলছে রিউমর স্ক্যানার?
সেই যুবকের বিরুদ্ধে ৯০০ টাকা চুরির মামলা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা ট্রাম্পের