দেশের ২২৭ উপজেলা চেয়ারম্যান কোটিপতি : সুজন
০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ৪৭০ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২২৭ জনের কোটি টাকার অধিক সম্পদ রয়েছে। শতকরা হিসেবে যা ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন এবং নির্বাচন মূল্যায়ন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচটি ধাপে মোট ৪৭০ জন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের (৩.১৫ শতাংশ) সম্পদ পাঁচ লাখ টাকার কম, ৯৭ জনের (২০.৬৪ শতাংশ) সম্পদ পাঁচ লাখ এক টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা, ৫৮ জনের (১২.৩৪ শতাংশ) সম্পদ ২৫ লাখ এক টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা, ৭২ জনের (১৫.৩২ শতাংশ) সম্পদ ৫০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা, ১৫৮ জনের (৩৩.৬২ শতাংশ) সম্পদ এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং ৬৯ জনের (১৪.৬৮ শতাংশ) সম্পদ পাঁচ কোটি টাকার অধিক। এছাড়া নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান (০.২১ শতাংশ) তার সম্পদের ঘর পূরণ করেননি। তিনি আরো বলেন, স্বল্প সম্পদের মালিক (২৫ লাখ টাকার কম) ৩৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া অধিক সম্পদের মালিক (২৫ লাখ টাকার বেশি) ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটাররা স্বল্প সম্পদের মালিকদের তুলনায় অধিক সম্পদের মালিকদের চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পাশাপাশি স্বল্প সম্পদের মালিকদের কিছুটা হলেও বর্জন করেছেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন বাংলাদেশে নির্বাচন দিন দিন টাকার খেলায় পরিণত হচ্ছে।
বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে শীর্ষ ১০ সম্পদশালীর নামও প্রকাশ করেছে সুজন। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম। তার সম্পদের পরিমাণ ১৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। এরপরে যথাক্রমে রয়েছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম (৮১ কোটি ৯৬ লাখ), কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চেয়ারম্যান রেহানা বেগম (৭৩ কোটি ৩৩ লাখ), হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এস এফ এ এম শাহজাহান (৪২ কোটি ৫৩ লাখ), চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল হক (৩৭ কোটি ৭০ লাখ), নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী (৩৫ কোটি ৯০ লাখ), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মজুমদার (৩৪ কোটি ৮২ লাখ), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস ফিরোজ (৩৩ কোটি ১৬ লাখ), ঝালকাঠির সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান (২৮ কোটি ৪৪ লাখ), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান (২৮ কোটি ৮ লাখ)।
সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে বলা হয়, ৪৭০ জন বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ১৫৭ জন (৩৩.৪৪ শতাংশ) ঋণ গ্রহীতা। এর মধ্যে কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ৫৭ জন চেয়ারম্যান (৩৬.৩১ শতাংশ)। ঋণ গ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।
নির্বাচিতদের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৩৭৪ জন (৭৯.৫৭ শতাংশ) আয়কর দেন করেন।
বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মামলা সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়, নির্বাচিত সর্বমোট ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ১১৪ জনের (২৪.২৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৮২ জনের (৩৮.৭২ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৭৫ জনের (১৫.৯৬ শতাংশ) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে। ৩০২ ধারার মামলার ক্ষেত্রে ২৫ জনের (৫.৩২ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৩৬ জনের (৭.৬৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং চারজনের (০.৮৫ শতাংশ) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।
বিজয়ী প্রার্থীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচটি ধাপে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত সর্বমোট ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৬০ জন (৭৬.৬০ শতাংশ) ব্যবসায়ী, ৪৮ জন (১০.২১ শতাংশ) কৃষিজীবী, সাতজন (১.৪৯ শতাংশ) চাকরিজীবী এবং ১৯ জন (৪.০৪ শতাংশ) আইনজীবী। এছাড়াও একজন (০.২১ শতাংশ) গৃহিণী এবং ২৮ জন (৫.৯৬ শতাংশ) অন্যান্য পেশার সঙ্গে জড়িত। সাতজন (১.৪৯ শতাংশ) পেশার ঘর পূরণ করেননি। অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে ১৫ জন (৩.১৯ শতাংশ) রয়েছেন শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যবসায়ীর মূল সংখ্যাটা আরও বেশি। ব্যবসায়ী হতে পারে তাতে সমস্যা নেই। তবে এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা। যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনে ভোট কিনে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যা বলা হয়েছে তা ছিল কি না বলে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাঁথা। মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা। জনগণের আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের ওপর।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি
অস্ত্র মামলায় মামুন খালাস
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
ইনু-মেনন-সালমান-আনিসদের রিমান্ড, নতুন করে গ্রেপ্তার মন্ত্রী-এমপিসহ ১৬ জন
দলীয় নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান এবি পার্টির
হত্যা মামলায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ৫ দিনের রিমান্ডে
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
আমদানি মূল্য পরিশোধের সময় বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বকেয়া পরিশোধে জুন পর্যন্ত সময় বাড়লো আদানি
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে : রিজভী
বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানার ছাটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত ২৭ জানুয়ারি
যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগেও ইসরায়েলের হামলা গাজায় বিলম্বিত সময়ের মধ্যে নিহত ১৯
আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক
সরিষাবাড়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ