বাংলা ব্লকেডে রাজধানীতে যানজট, ‘বিরক্তি ছাড়াই’ হেঁটে গন্তব্যে যান পথচারীরা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুর্নবহাল রাখার দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন। এর অংশ হিসেবে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে অফিস সারা রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যানজটের মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় ভোগান্তিতে পরলেও সাধারণ মানুষের হেঁটেও বাড়ির পথে রওনা দেয়। এ সময় তাদের কাউকে কোন অভিযোগ করতে দেখা যায় নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। গত ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে রায় দেয় হাই কোর্ট। ওই দিনই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। ১ জুলাই থেকে তারা টানা বিক্ষোভ করছেন। এরই মধ্যে সরকার হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আবেদন করলেও আপিল বিভাগ তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে হাই কোর্টের আদেশই আপাতত বহাল রয়েছে। গত ৪ জুলাই ওই সিদ্ধান্তের পর কোটা বাতিলের আন্দোলন আরো জোরালো হয়।
গতকালও দ্বিতীয় দিনের মত একটি নির্দ্দিষ্ট সময়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে কোটা বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাস্তাও অবরোধ করেন। এতে চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়েও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিকেল ৩টায় মিছিল নিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাত্রা শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পথে তাঁতিবাজার ও বংশালে পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সেসব বাধা অতিক্রম করে গুলিস্তান চলে আসেন তারা। এরপর দলে দলে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে আশপাশের সব রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়লেও কোন অভিযোগ ছাড়াই হেঁটেই গন্তব্যে চলতে শুরু করেন কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ।
এক পথচারী বলেন, ব্যবসায়িক কাজে চিটাগাং রোড থেকে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তা বন্ধ। তাই হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছি। কোন অভিযোগ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোন অভিযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তো যৌক্তিক। এর পরই তিনি গন্তব্য পথে হাঁটা দেন।

আরেক পথচারী বলেন, ঢাকার যানজটে ভোগান্তি হয়, এটা সত্যি। তবে সড়ক অবরোধ করে কোটার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলন সরকারের দেখা উচিত। সরকারকে বলব অতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলেঅ মেনে নেওয়া উচিত।
সচিবালয়ের এক কর্মচারী জানান, অফিস থেকে বের হয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আজিমপুরের পথে হাঁটা দিয়েছেন তিনি। পরে রিকশার খোঁজ করবেন।
তিনি বলেণ, অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের জিপিও মোড় ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওয়ানা হচ্ছি।
এ দিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফার্মগেইট মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীলা। তাতে চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ দিকে সেখানে এক সিএনজি চালক বলেন, পোলাপাইনে তো আন্দোলণ করতাছে হ্যাগো দাবির লাইগা। একটু কষ্ট হইতাছে এইটা ঠিক। তয় হ্যাগো দিকটাও সরকারের দেখা উচিত।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী মো. শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, এ আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন সমগ্র দেশের মানুষের জন্য। পুলিশ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, রিকশাচালক সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি সরকার মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আরও

আরও পড়ুন

দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স

দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়

কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে

কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস

‘ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’

‘ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’

ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২

ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২

কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত

কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত

এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত

এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত

উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ

উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ

নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম

নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম

অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার

বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী

বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?