পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীসহ গ্রেফতার ১৭
০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৩ এএম
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএস পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আলোচনায় আসা সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গতকাল সোমবার সিআইডির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্য পিএসসির দুই উপ-পরিচালক, এক সহকারী পরিচালক, একজন অফিস সহকারী রয়েছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন। বিপিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠতো সংঘবদ্ধ চক্রটি।
সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সোমবার তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম। এছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার। আবেদ আলী হতে চেয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানও: পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের তালিকায় থাকা মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার সৈয়দ আবেদ আলী জীবন এলাকায় ‘ভালো’ মানুষ বলে পরিচিত। তিনি ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচার প্রচারণায়ও নেমেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুলি থেকে শত কোটি টাকার মালিক তিনি। মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। প্রথমে সেখানেই কুলির কাজ করতেন। এক সময় ফুটপাতে ঘুমিয়ে কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপরই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। সঙ্গে ক্ষমতাও। চেয়েছেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতির মাঠে ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জনসংযোগ করেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। বাবা-ছেলে এলাকায় দান করেন দুই হাত ভরে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন তার গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়া তিনি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করছেন গরুর খামার ও শপিং সেন্টার। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে তার থ্রি-স্টার হোটেলও। সামান্য একজন গাড়িচালক থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস দিয়ে গেছেন তিনি। সেই ভিডিও শেয়ার করেছেন নিজের ফেসবুকে।
এলাকাবাসী জানান, আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তবে আবেদ আলীর এ অপকর্মের কথা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ছিল অজানা। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাকে ‘ভালো’ মানুষ হিসেবেই জানতেন। এদিকে এসব ব্যাপারে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সিয়ামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আবেদ আলীর পরিবারের সবাই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছেন আগেই। যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন তারা। এ ব্যাপারে মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রশ্ন ফাঁস করে তারা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার কারণেও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাকে থাকতেই ডিম ৪ বার হাতবদল হয়’
দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন মিঠুন
অবন্তী-ক্রোনী গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনে আদায়ে কমিটি গঠন
আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বগুড়ায় বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির কোটি কোটি টাকা লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য
কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন গ্রেপ্তার
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ বাহিনী প্রয়োজন
দুর্গা ও লক্ষী পুজায় সাতদিন আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকবে আখাউড়া স্থলবন্দরে
বিতর্কিত সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা
অর্থ আত্মসাতের দায়ে নোয়াখালী মেডিকেলের সাবেক অধ্যক্ষসহ দুজনের নামে দুদকের মামলা
নামমাত্র জামানতে রূপালী ব্যাংকের ৩০৮ কোটি লুট
পিএসসিতে ৪ সদস্য নিয়োগ
বিএনপি নেতার নামে টিসিবি কার্ড সাবেক মেয়র-সচিবসহ তিন জনের নামে মামলা
সভাপতি মোজাফ্ফর সম্পাদক রনি, টংগিবাড়ী প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন।
একটু সময় লাগলেও দ্রব্যমূল্য কমে যাবে : অর্থ উপদেষ্টা
রাষ্ট্র সংস্কারে ১০ প্রস্তাব জামায়াতের
যশোরে ফ্লেক্সিলোডের দোকানে মিলল ১১ বোতল বিদেশি মদ, আটক ২
ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা পালমার
ঢাকার খাল দখলমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে- এ এফ হাসান আরিফ
রাতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল