সীমান্ত অঞ্চলে ভরা মৌসুমে পানি থাকলেও নেই মাছ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার, শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল থেকে

১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলের খাল বিলে যে দিকেই চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। এত পানি থাকলেও নেই মাছ। শুষ্ক মৌসুমে খাল, বিল ও ডোবা সেচে মাছ মেরে নিয়ে যাওয়ায় এমন দশা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা এক সময় ছিল মাছের রাজ্য। শুষ্ক মৌসুমে মাছ নিধনের ফলে বর্ষা মৌসুমে হাটে বাজারে দেশি প্রজাতির মাছ মিলছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতীর দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে। বাজার দখল করেছে চাষকৃত হাইব্রিড জাতীয় মাছ। ৭ থেকে ৮ বছর আগেও বহু প্রজাতির দেশিয় মাছ পাওয়া যেত এই অঞ্চলে। সে সব মাছ এখন চোখেই পড়ে না। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অবাধে খাল-বিল সেচে মাছ ধরার কারণে দেশি মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। নির্বিচারে পোনা মাছ ধরা, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে বর্ষায় মাছের প্রজনন ব্যাপক হারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। বিলুপ্তির পথে রয়েছে, পুটি, গুতুম, দারকিনা, চাঁন্দা, বড় চান্দা, গুজি, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, গতা, ভেদা, শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, শোল, মলা, চেলা, ঢেলা, খৈলশা, টেংরা, ছোট চিংড়ি, ছোট-বড় বাইম, কাইক্যা ইত্যাদি। এসব মাছের জায়গা দখল করেছে হাইব্রিড পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, সিলভার, কার্প, মিরর কার্প, ঘ্রাস কার্প, সরপুঁটি ইত্যাদি।
ভরা বর্ষায়ও জেলেরা পানিতে জাল ফেলে মাছ পাচ্ছেন না। সারা দিন জাল টেনে নামমাত্র কিছু ছোট মাছ ধরে খাল-বিল থেকে প্রায় খালি হাতেই ফিরছেন। জেলার সীমান্ত অঞ্চলে জেলেরা জানান, আগের মতো মাছ নেই খাল-বিল বা নদীতে। পাতানো জাল তুলে হতাশ হতে হয়। কিছু ছোট পুঁটি, চান্দা, বাইলা, ছোট গতাসহ পাঁচ মিশালী মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছের দেখা নেই। জেলেরা বলেন, আগে বর্ষার পানিতে খাল-বিল ও নদীতে রুই, কাতলা, বোয়াল, কালিবাউসসহ অনেক জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন কিছু চিংড়ি, ছোট পুঁটি আর চান্দার গুঁড়া কিছু পাঁচ মিশালি মাছ ছাড়া কোনো মাছই মিলে না। প্রতি শুষ্ক মৌসুমে জলমহাল, নদীনালা, খাল-বিল, ডোবার তলা শুকিয়ে মৎস্য নিধন করা হয়।
খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় থেকে দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক আবাসভূমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। টিকে থাকার উপযোগী জায়গা সংকীর্ণ হয়ে কোথাও প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে ও বিলুপ্তির পথে রয়েছে। তাদের মতে, প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জলাভূমি বা প্লাবণভূমির সঙ্গে সংযোগ খাল ভরাট। জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া। এছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা। কারেন্ট জালের ব্যবহার। মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া, ছোট মাছ সংরক্ষণে সরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকায় ছোট প্রজাতির মাছ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়া ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ মাছের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। জানা যায়, এক সময় দেশি জাতের ছোট মাছের উৎস্য ছিল খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ও বিভিন্ন নদী-নালা। কিন্তু দিনে দিনে কমছে নদী-নালা-জলাশয়। যাও আছে বেশির ভাগেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ হয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে বিনা বাধায় মাছ শিকারের সুযোগ আর তেমন মেলে না। চাহিদা সত্বেও ক্রেতারা এ জাতীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ধলি বিলপাড়ের স্থানীয়রা জানান, কোনো চাষ ছাড়াই এ এলাকার নিচু জমি ও খালে-বিলে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোও ভরে যেত দেশিয় মাছে। এখন জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মৎস্য চাষিরা জানান, চাহিদা থাকলেও ছোট প্রজাতির মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় ছোট মাছও কমে গেছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগজনক। আকারে ছোট হলেও এ সব দেশিয় মাছ পুষ্টিগুণে সেরা।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল জানান, সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশিয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা হবে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে
৬০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বেচবে সরকার, পাওয়া যাবে যেখানে
লাইফ সাপোর্টে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল
আরও

আরও পড়ুন

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার

ভারতের  প্রথম মহিলা  নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট

মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট

আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে

ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে

জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল

জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল

ঘাটতি পূরণে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে: কবির উদ্দিন

ঘাটতি পূরণে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে: কবির উদ্দিন

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ডিবিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মামুন, সেক্রেটারি রিসালাত

ডিবিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মামুন, সেক্রেটারি রিসালাত

হামাস বন্দি তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত : নেতানিয়াহু

হামাস বন্দি তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত : নেতানিয়াহু