বানভাসীদের দেখার কেউ নেই
১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
দেশের ভাটি অঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ চতুর্থ দফায় বন্যা কবলে পড়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি আবার বাড়ছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অন্যান্য শাখা নদীগুলোর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলের চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো আবারো তলিয়ে যাচ্ছে। ডুবছে কৃষিজমি, ফল-ফসল, রাস্তাঘাট, বসতঘর। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্দা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর থেকে বানের পানি নামলেও অনেক ফসলের ক্ষেত এখনো তলিয়ে আছে। এদিকে যমুনার পানি বেড়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনা নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল জেলার বসতবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। উত্তরবঙ্গ এবং সিলেটে নদীর পানি কিছুটা কমে আবার বাড়তে থাকায় বানভাসিদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। প্রায় পনের দিন ধরে বন্যা কবলিত থকায় ঘরে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কাজে যেতে পারছে না। তাই কোন আয় রোজগারও নেই। এ অবস্থায় উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বন্যার্তদের দুঃখ-দুর্দশা অবর্ণনীয়। রাস্তাঘাটে, বাঁধে, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাই নেয়া হাজারো বন্যার্ত মানুষ গত দু’তিন দিনে বানের পানি কমতে দেখে নিজেদের বসতঘরে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অথচ এখন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার্তরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বানভাসিদের খাদ্য নেই, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ-পথ্য নেই। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ-বালাই। কৃষক ও দিনমজুরদের নেই কাজকর্ম। সরকারি-বেসরকারি জরুরি খাদ্য-ওষুধসহ ত্রাণ সামগ্রীর আশায় তাকিয়ে আছেন বানভাসিরা। এদিকে নদ-নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক জায়গায় সর্বনাশা নদীভাঙন বেড়েই চলেছে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অন্যতম বৃহৎ অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টের সবক’টিতে এবং যমুনা নদের দশটি পয়েন্টের প্রতিটিতেই পানি বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি এবং যমুনার ৮টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে নুনখাওয়া পয়েন্টে এখন বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৩৪ সে.মি. এবং চিলমারী পয়েন্টে ৫০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার সহ ১৬টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র,দুধকুমর ও ধরলা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হয়েছে।কুড়িগ্রামের জেলা মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানাযায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৯, হাতিয়া পয়েন্টে ৭১ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৪ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ধরলা নদী ব্রীজ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি পাটেশ^রী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমরও ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ফুলবাড়ী, ভরুঙ্গামারী, নাগেশ^রী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী, রৌমারী, চর রাজিবপুর এই ৯ উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের ১লাখ ৩৫ হহাজার ৫৭ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে।তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। ৪৫৮টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, ৩৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী। ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ৫৪২ মেট্রিকটন চাল, ৩২ লাখ ৮৫হাজার টাকা ও ২৩হাজার ৭৯০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৭হাজার৩৫০ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত রয়েছে।বানভাসিদের সহায়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে অধিকাংশ পরিবারে জ¦লছে না চুলা। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির কারণে বানভাসিরা পরেছে মহাবিপাকে।তারা ছুটছে আশ্রয়ের খোঁজে। বেশিরভাগ বানভাসি নৌকায় রাত্রি যাপন করছে।সরকারি প্রশাসন থেকে দূর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও এখনও সবার কাছে পৌঁছেনি ত্রান সহায়তা।
এদিকে ভাটির জেলা সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘন্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে জেলার মানুষ। গতকাল সকালে ৯ টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৩০ সেণ্টিমিটার বাড়ে। যা বিপদ সীমার ১০সিন্টিমিটার নিচে। পানি উন্নয়ন বোড জানায়, সুনামগঞ্জ আগামী ২ দিন আবার মাজারি ও ভারি বৃষ্টি পাতের সম্ভবনা রয়েছে এতে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এদিকে, নদীর - হাওর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার পানি পুরোপুরি না কমালেও ইতোমধ্যে যাদের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমেছিল গত বুধবার থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিচু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে আবারও তলিয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত ৬ জুন শহরের অধিকাংশ বাসা বাড়িসহ শহরতলী বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। গত এক মাসে মূল শহর ও শহর তলীর বাসাবাড়িতে থেকে বন্যার পানি নামলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টি পাত ও উজানের ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও বন্যার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এছাড়াও হাওর এলাকায় বন্যা লেগেই রয়েছে। বানভাসীদের দুর্ভোগ এখন চরমে।
মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া চরে যমুনা নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে শতাধিক বসতবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসী জানায়, ভাঙনের মুখে রয়েছে পারুলিয়া বাজার, বাঘুটিয়া পুরান বাজার, বাঘুটিয়া ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়, চরকালিকাপুর মাদরাসাসহ তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
লালমনিরহাটে বাড়া-কমার মধ্যেই আছে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি। এতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্না ও গড্ডিমারী, কালীগঞ্জের ভোটমারী ও কাকিনা, আদিতমারীর মহিষখোঁচা, পলাশী ও দুর্গাপুর এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে বানের পানি নেমে গেছে। তবে এসব এলাকায় নদী ভাঙন এখন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় অন্তত ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো জলমগ্ন। এ ছাড়া পানি উঠে ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিকেও সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আরো বিদ্যালয় পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে
লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার
ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক
মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!
মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল
দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত
টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি
বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট
আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে
জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল
ঘাটতি পূরণে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে: কবির উদ্দিন
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ডিবিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মামুন, সেক্রেটারি রিসালাত
হামাস বন্দি তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত : নেতানিয়াহু
কুলাউড়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় নারীকে পিটিয়ে হত্যা, আটক-১