ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না
১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
মহররম মাস বিশ্বের সকল মুমিন-মুসলমান ভাই ও বোনদের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও আত্মোৎসর্গের মাস। জীবন চলার পথে দুঃখ-কষ্ট ও যাতনা দেখা দিলে তা সংবরণ করার শিক্ষা এ মাস থেকেই গ্রহণ করা অত্যন্ত মঙ্গলকর। আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন : “আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করে। আর আল্লাহ (তাঁর এরূপ) বান্দাহদের প্রতি অত্যন্ত ¯েœহশীল।” [সূরা বাকারাহ : আয়াত ২০৭]
এই আয়াতটি সাহাবী সোহাইব রুমি (রা.)-এর ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে। তিনি দ্বীন ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে নিজের অর্থ-বিত্ত এবং সহায়-সম্পদ ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়ে নিজের সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে নূর নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) দু’বার বলেছিলেন : “সুহাইব লাভবান হয়েছে, সুহাইব লাভবান হয়েছে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম : ৩/৩৯৮]
মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা ত্যাগী বান্দাহগণকে লক্ষ করে আরো ইরশাদ করেছেন : “আর আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। যারা তাদের ওপর বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য, আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।” [সূরা আল বাক্বারাহ : আয়াত ১৫৫-১৫৬]
বস্তুত, কোনো বিপদে পতিত হওয়ার আগেই যদি সে সম্পর্কে বংবাদ দিয়ে দেয়া হয়, তবে সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করা সহজতর হয়ে যায়। কেননা, হঠাৎ করে বিপদ এসে পড়লে পেরোশানি অনেক বেশি হয়। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা সমগ্র উম্মতকে লক্ষ করেই পরীক্ষার কথা বলেছেন, যেহেতু সবার পক্ষেই অনুধাবন করা উচিত যে, এ দুনিয়া দুঃখ-কষ্ট সহ্য করারই স্থান। সুতরাং এখানে যেসব সম্ভাব্য পিবদ-আপদের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অপ্রত্যাশিত কিছু মনে না করলেই ধৈর্য ধারণ করা সহজতর হতে পারে। পরীক্ষায় সমগ্র উম্মত সমষ্টিগতভাবে উত্তীর্ণ হলে পরে সমষ্টিগতভাবেই পুরস্কার দেয়া হবে। এ ছাড়াও সবর ও ধৈর্যের পরীক্ষায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে যারা যতটুকু উত্তীর্ণ হবেন, তাদের ততটুকু বিশেষ মর্যাদাও প্রদান করা হবে। মূলত মানুষের ঈমান অনুসারেই আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা বিপদাপদ-বালা-মুসিবত নবীদের প্রদান করেন। তারপর যারা তাদের পরের লোক, তারপর যারা তাদের পরের লোক, তারপর যারা এর পরের লোক।” [মুসনাদে আহমাদ : ৬/৩৬৯] অর্থাৎ প্রত্যেকের ঈমান অনুসারেই তাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষা যেন কেউ আল্লাহর কাছে কামনা না করে। বরং সর্বদা আল্লাহর কাছে আসান ও নিরাপত্তা কামনা করাই মুমিনের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এক লোককে বলতে শুনেছেন যে, “হে আল্লাহ! আমাকে সবরের শক্তি দান করুন। তখন তিনি বললেন, “তুমি পিবদ কামনা করেছ, সুতরাং তুমি নিরাপত্তা চাও”। [মুসনাদে আহমাদ : ৫/২৩১, ২৩৫] রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, “মুমিনের উচিত নয় নিজেকে অপমানিত করা। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, কিভাবে নিজেকে অপমানিত করে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এমন কোনো বালা-মুসিবতের সম্মুখীন হয় যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।” [জামেয়ে তিরমিযী : ২২৫৪]
সবরকারীগণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা বিপদের সম্মুখীন হলে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পাঠ করে। এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যে, কেউ বিপদে পড়লে যেন এ দোয়াটি পাঠ করে। কেননা, এরূপ বললে একাধারে যেমন অসীম সওয়াব পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি যদি এ বাক্যের অর্থের প্রতি যথার্থ লক্ষ রেখে তা পাঠ করা হয়, তাহলে বিপদে আন্তরিক শান্তি লাভ এবং তা থেকে উত্তরণ সহজতর হয়ে যায়। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের কোনো কষ্ট দেন, তবে তাতে কোনো না কোনো মহৎ উদ্দেশ্য অবশ্যই থাকে। তার উদ্দেশ্যকে সম্মান করতে পারা একটি মহত কাজ। আর এটাই প্রকৃত সবর বা ধৈর্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনের কর্মকা- আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই ভালো। মুমিন ছাড়া আর কারো জন্য এমনটি হয় না। যদি তার কোনো খুশির বিষয় সংঘটিত হয় তবে সে শোকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার কোনো ক্ষতিকর কিছু ঘটে যায় তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।” [সহীহ মুসলিম : ২৯৯৯] অপর হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে কেউ বিপদ-মুসিবতে পড়েÑ “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলবে এবং এ কথাও বলবে যে “হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসিবত থেকে উদ্ধার করুন এবং এর থেকে উত্তম বস্তু ফিরিয়ে দিন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে উত্তম কিছু ফিরিয়ে দেবেন।” [সহিহ মুসলিম : ৯১৮]
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার
চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে
সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ
হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার
পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল
দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে
লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার
ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক
মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!
মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল
দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত
টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি
বাঁওড়ের ইজারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
মার্কিন মুলুকে নিষিদ্ধ টিকটক, আমেরিকা প্লাটফর্মটি প্রত্যাশা করেঃ মি.বিষ্ট
আমাদের রক্ত ঝরবে, কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ইনকিলাবে রিপোর্টের পর সরিয়ে দেয়া হলো তিন কর্মকর্তাকে
জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংস্কার শেষ করবে : মির্জা ফখরুল