লেজে-গোবরে সিডিএ
১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে সাত মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও খুলে দেয়া যায়নি চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। গেল বছরের ডিসেম্বর এবং চলিত বছরের মার্চ ও সর্বশেষ মে মাসে যানবাহন চলাচল শুরুর ঘোষণা দিলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। কারণ মূল অবকাঠামোতেই এখনো আলোকায়নসহ নিরাপত্তা সুরক্ষার অনেক কাজ বাকি। কথা ছিল গেল জুনের মধ্যেই ১৫টি র্যাম্পের (গাড়ি ওঠানামার পথ) নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু টাইগার পাসের একটি ছাড়া কোন র্যাম্প নির্মাণ শেষ করা যায়নি।
গেল ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিন বছরের এই প্রকল্প ছয় বছরেও শেষ হয়নি। এ সময়ে প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো তোড়জোড় চলছে। আর এর মধ্যেই এই মেগা প্রকল্পের নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় উপ-কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরির্দশন শেষে এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএর এমন লেজে গোবরে অবস্থা জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ভরা বর্ষায় র্যাম্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। অথচ সিডিএর তরফে বলা হয়েছিল জনদুর্ভোগ কমাতে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পরই র্যাম্প নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি নেয়া হয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুরঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক টানেলের সাথে এটি সংযুক্ত হওয়ার কথা। টানেল চালু হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। দুই বছর আগে চালু হয়েছে পতেঙ্গায় নির্মিত সিটি আউটার রিং রোড। টানেলের সাথে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। প্রকল্পের নির্মাণ শুরুর পর থেকেই নকশায় গলদসহ একের পর জটিলতায় কাজে গতি আসেনি।
নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না করেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা সময় বৃদ্ধি করে মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন লিমিটেড।
সিডিএ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে দুই মাস আগে। তখন থেকে যান চলাচলের উপযোগী হলেও সড়কবাতি, ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপনের কাজ বাকি রয়েছে। এই কারণে যানবাহন চলাচল আরো দুই মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় এক হাজার ৩০০টি সড়কবাতি লাগানো হবে। এসব বাতি আমদানি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশে এসেছে ৬০০টি। বাকি ৭০০ বাতি চলতি মাসে দেশে আসার কথা রয়েছে। আর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে ২০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। তাইওয়ান থেকে এসব ক্যামেরা আসতে অন্তত দেড় মাস লাগবে।
প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের সময় টোল আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র দিলেও সেখানে টোল প্লাজার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। ছিল না সড়কবাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও। নির্মাণকাজের শেষ পর্যায়ে এসে গত বছরের এপ্রিলে এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ এবং টোল প্লাজা স্থাপনের জন্য দরপত্র দিয়েছিল। কিন্তু টোল প্লাজা স্থাপনের দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। টোল প্লাজার জন্য আবার নতুন করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে সিডিএ।
সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়ে চালু করতে পতেঙ্গা প্রান্তে একটি অস্থায়ী টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়। তবে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে তাতে আপত্তি জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, পতেঙ্গায় টানেল, আউটার রিং রোড ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের কারণে এমনিতেই সেখানে যানজট হচ্ছে। তার উপর এক্সপ্রেসওয়ের জন্য নির্মিত টোল ঘরের কারণে সেখানে যানজট আরো তীব্র হবে। সেখান থেকে সরিয়ে টোলপ্লাজা টাইগারপাস অংশ করার প্রস্তাব দেয় ট্রাফিক বিভাগ।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়ে চালু না করে র্যাম্প নির্মানে ফলে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। মূল কাজের সময় র্যাম্প নির্মাণ করা হয়নি। সিডিএর পক্ষ থেকে তখন যুক্তি দেখানো হয়, এক্সপ্রেসওয়ে চালু করেই র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। তাহলে যানজট এবং জনদুর্ভোগ কম হবে। কিন্তু এখন র্যাম্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি আগ্রাবাদ বারিকবিল্ডিং থেকে ফকিরহাট, বন্দর নিমতলা এবং মাইলের মাথা এলাকায় তীব্র যানজট হচ্ছে। নগরীর প্রধান সড়কের ওই অংশ এখন কাদায় সয়লাব। এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ের পেনিনসুলা হোটেলের সামনে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকির হাটে একটি, নিমতলায় দুটি, চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুটি, কর্ণফুলী ইপিজেডে দুটি, সিমেন্ট ক্রসিংয়ে একটি করে র্যাম্প থাকবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত টাইগারপাসের দুটির মধ্যে একটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র চারটি র্যাম্পের নির্মাণকাজ শুরু করতে সক্ষম হয় সিডিএ। এগুলো হচ্ছে জিইসি মোড়ে একটি, ফকিরহাটে একটি এবং নিমতলায় দুটি। বাকি ১০টির কাজ এখনো শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে নগরীর টাইগারপাস ও আগ্রাবাদ এবং জিইজি মোড়ে র্যাম্প নির্মাণে বিরোধিতার মুখে পড়েছে সিডিএ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে জনমনে অসন্তোষ বেড়েই চলছে। এ জন্য সিডিএর ব্যর্থতাকে দায়ি করা হচ্ছে। সড়কে তীব্র যানজট আর মাথার ওপর এক্সপ্রেসওয়ে খালি পড়ে থাকতে দেখে নানা কটূক্তি করছেন নগরবাসী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির
নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত