বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছেই
১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০২ এএম
দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গতকাল শনিবার অধিকাংশ নদ-নদীর পানি ছিল কমতির দিকে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, আত্রাই, সুরমা, কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। এর ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও পানি স্থিতিশীল বা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি হ্রাসের সাথে সাথে ভাটির দিকে তীব্র চাপ পড়েছে। মেঘনার মোহনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। অধিকাংশ নদ-নদী, শাখানদীর পানি হ্রাসের সাথেই নদীভাঙন ক্রমেই তীব্র রূপ নিয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, পাড়া-জনপদ। বন্যার্তদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, অসুস্থদের ওষুধ-পথ্য সঙ্কট প্রকট। খাদ্যসহ জরুরি ত্রাণ সাহায্য তাদের হাতে এখনও পৌঁছেনি। বন্যার্তদের দুঃখ-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বন্যা এলাকায় কাজকর্ম নেই। বানভাসিদের নেই আয়-রোজগারের উপায়। খাদ্য সামগ্রী ক্রয়ের সামর্থ্য নেই।
নদ-নদীসমূহেরর প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদী গোয়ালন্দে সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রধান নদীগুলোর পানি সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলায় কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দ নদী ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আত্রাই নদী সংলগ্ন সিরাজগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
পাউবো’র পর্যবেক্ষণাধীন দেশের ১১০টি নদ-নদীর পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫৬টিতে হ্রাস পায়। ৬টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল। আগের দিন শুক্রবার নদ-নদীগুলোর ৭০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৮টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। গতকাল ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, দুধকুমার, আত্রাই, সুরমা, কুশিয়ারা, সোমেশ^রী, মেঘনা এই ৮টি নদ-নদী ১৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ মুহূর্তে বন্যা কবলিত জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও কিছুটা হ্রাস পেয়ে তিনটি পয়েন্টের মধ্যে দু’টিতে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদের দশটি পয়েন্টের মধ্যে সবক’টিতে পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং ৮টি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। উত্তর জনপদে দুধকুমার নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ^রীতে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি হ্রাসের ফলে ভাটির দিকে তীব্র চাপ সৃষ্টি হওয়ায় মেঘনা নদীর পানি বেড়েছে। মুন্সিগঞ্জে মেঘনা-ব্রিজ পয়েন্টে পানি আরও বেড়ে বিপদসীমার ২৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনে বিলীন ৪৫৮ পরিবার, পানি কমলেও কমেনি দুর্ভোগ মানুষের :
কুড়িগ্রামের ১৬টি নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জেলা প্রশাসকের দফতরের কন্ট্রোল রুমের বরাতে জানান, জেলার ৯ উপজেলা ৫৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৬৬২ দশমিক ৭৫ বর্গ কি. মিটার। বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১০০টি। নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৪৫৮টি পরিবার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। বন্যার্তদের সেবায় ৮৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। জেলার ৯ উপজেলায় ১৩০০ মে. টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেয়া হয়েছে শুকনো খাবার বরাদ্দ। এখন পর্যন্ত ৫৮৭ মে. টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং ২৪ হাজার ৩৬০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। বন্যাা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মানুষজন ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে ৫ লাখ ১১ হাজার ৬৫০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২০ হাজার ১২৬টি জেরিকেন সরবরাহ, নলকূপ মেরামত করা হয়েছে ৫৫টি, নতুন নলকূপ স্থাপন ৬টি এবং ল্যাট্রিন স্থাপন ৬টি করা হয়। এছাড়া হাইজিন কিটস বক্স ৬৫টি বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার ব্্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজ্জাফর হোসেন বলেন, চলতি বন্যায় তার ইউনিয়নে ১৯৭ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এর মধ্যে হকের চরে ৯০ পরিবার, দক্ষিণ নামাজের চরে ৪৭ পরিবার ও দৈখাওয়ার চরে ৬০ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়। তিনি আরো জানান, এই ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ পরিবার এর মধ্যে ৫০০ পরিবার স্বচ্ছল। বাদবাকী সবাই কম বেশি গরিব। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি। এখন পর্যন্ত ত্রাণ পেয়েছেন ২ টন চাল আর ১০০প্যাকেট শুকনো খাবার। এর মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার এসে বিতরণ করেছেন ২৯০ কেজি চাল আর উপজেলা পরিষদ থেকে ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার। ফলে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌছানো সম্ভব হয়নি।
টাঙ্গাইলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত :
গতকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে জেলার সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ^রী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে জেলার গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার ও বাসাইল উপজেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চলে বানভাসি মানুষদের দুর্ভোগ কমছেই না। দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে বন্যা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষগুলো এবং দেখা দিয়েছে মানুষের নিরাপদ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও নিরাপদ স্যানিটেশন। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি মানুষগুলো কেউ উঁচু জায়গা, কেউ বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জেলার ৬টি উপজেলায় এখনো ৪৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছেন। এদিকে বন্যার কারণে জেলার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের ৭২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েণ্টে বিপদসীমার ১১.৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ১২.০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯.৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, যমুনাসহ তিনটি নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় আবারও বেড়েছে। এতে জেলার ৬টি উপজেলার ১০৮টি গ্রামের ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলায় পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে। এরই মধ্যে পানিবন্দি মানুষের মাঝে তা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে। আমরা আক্রান্ত প্রতিটি পরিবারের মাঝে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম
বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু
মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা